প্রতিবেদক::
দেশের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে ফসলি জমির বৃহত্তম অংশ রয়েছে টাঙ্গাইলে। আর এই সকল ফসলি জমির বেশিরভাগই এখন সোনালী ধানে পরিপূর্ণ। আর মাত্র দু-তিনদিন পরই গোলায় উঠতো কৃষকের এই সোনালী ধান।
কিন্তু অনেক কৃষকের গোলাতেই এবার থাকবে ধানের খড়ায়। গত কদিনের টানা বর্ষণে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। আর এতে ভেঙ্গে গেছে শত শত কৃষকের সোনালী স্বপ্ন।
অনেক কৃষক পানির নিচ থেকেই ডুবে ডুবে ধান কেটে তুলছেন। আবার কোনও কোনও কৃষকের ক্ষেতে পানি কম থাকায় তারা সহজেই ধান কাটতে পারছেন। এমতাবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকরা।
জেলার বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলায় গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে বংশাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলের আবাদি জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন হাজারো কৃষক। কোনও কোনও বোরো ক্ষেত একেবারেই তলিয়ে গেছে। আবার কোনও ক্ষেতের ধান কিছুটা দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় যতটুকু সম্ভব কৃষকরা ধান কাটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ শ্রমিকের অভাবে পানির নিচে থাকা ধান কাটতেও পারছেন না।
সরেজমিনে বাসাইল উপজেলার বাসুলিয়া, কাঞ্চনপুর, পূর্বপৌলী, মটেশ্বর, পূর্বমটেশ্বর, আগমটেম্বর, সিঙ্গারডাক, যৌতুকী ও মির্জাপুর উপজেলার পাটদিঘী, সুতানরী, বৈন্নাতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
বাসাইল উপজেলার মটেশ্বর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অন্যের প্রায় তিন একর জমি বর্গা নিয়ে বোরো আবাদ করেছি। ফলনও এবার ভালো হয়েছিল। প্রায় এক একর জমির ধান কয়েকদিন আগে কেটেছি। কিন্তু দুইদিনের মধ্যে ক্ষেতে পানি এসে আমার দুই একর জমির ধান তলিয়ে গেছে। শ্রমিকের অভাবে ধানগুলো কাটতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করি। তিন একর জমিতে প্রায় ৮০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছিল। এবার সব শেষ হয়ে গেলো। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার মতো আমার কোনও উপায় নেই।’
একই এলাকার কৃষক মোমরেজ আলী বলেন, ‘আমার প্রায় চার একর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত দুই একর জমির ধান পানি থেকেই কেটেছি। শ্রমিকরা পানিতে ধান কাটতে চাচ্ছে না। শ্রমিকদের বাজার দরের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য এক হাজার থেকে ১১শ’ টাকা করে দিতে হচ্ছে।’
কৃষক সোনা মিয়া বলেন, ‘গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে নদী ভরাট হয়ে বোরো ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এখন ১১শ’ টাকা করে শ্রমিক নিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। প্রায় ৫ একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। এ পর্যন্ত ৩ একর জমির ধান কেটেছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘জেলার বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে ১১০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক কৃষক ইতোমধ্যেই ধান কেটে ফেলেছেন। আবার কোনও কোনও কৃষক এখনও পানির নিচ থেকেই ধান কাটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, এবার জেলায় এক লাখ ৬৯ হাজার ৫শ’ ২৯ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। জেলায় ইতোমধ্যেই ৭০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে।’
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোহাম্মদ সেলিম , ঢাকা অফিস : সিটিহার্ট, সুইট নং ১৫/২, ৬৭ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০। ই-মেইল:: nkbarta24@gmail.com
Copyright © 2024 Nk Barta 24. All rights reserved.