ডেস্ক:
মহামারি করোনাভাইরাসে বিশ্ব অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত, তখন নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা বাড়ছে। তাই মূল্যবান এ ধাতুর দাম বাড়ছেই। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছায়। খবর: রয়টার্স।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম এক হাজার ৮২৩ ডলারে পৌঁছায়। গত ৯ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল এক হাজার ৮০০ ডলারের বেশি।
চলতি বছরের শুরুতে স্বর্ণের দাম বাড়তে শুরু করে। গত বছরের শেষদিকে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল এক হাজার ৪৫৪ ডলার। এরপর করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ৬৬০ ডলারে উঠে যায়। তবে মার্চে বড় পতনে এক ধাক্কায় দাম কমে এক হাজার ৪৬৯ ডলারে নেমে আসে। এরপর তা আবার বাড়তে শুরু করে।
নিরাপদ বিনিয়োগের উৎস হিসেবে স্বর্ণের বাজার বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করায় বেচাকেনা বেড়ে স্বর্ণের বাজার চাঙা হচ্ছে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্টরা। সাধারণত ডলারের মান যখন দুর্বল হয়ে ওঠে, তখন স্বর্ণসহ নির্ধারিত বিভিন্ন ধাতুতে বিনিয়োগ করায় নিরাপদ বোধ করেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে ধাতুটির দাম বাড়ে। আর ডলার শক্ত অবস্থানে থাকলে স্বর্ণের দাম কমে। তাছাড়া রাজনৈতিক বা আর্থিক কোনো অস্থিরতা দেখা দিলেও এ পণ্যটির দর বাড়ে, কারণ এ সময় এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে যায়। স্বর্ণকে তখন মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগ ভাবে।
ব্যাংক অব চায়নার আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক জিয়াও ফু বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে অস্থিরতা, ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি, ক্রমবর্ধমান মহামারি প্রভাব এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মতো কারণগুলো মাঝারি মেয়াদে স্বর্ণের দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামনেই অস্থিরতা রয়েছে। আরও কিছু ভালো অর্থনৈতিক তথ্য থাকতে পারে বা (অর্থনীতির লক্ষণগুলো) স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে, যা দাম বৃদ্ধির লাগাম কিছুটা টানতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কমোডিটি ব্রোকার ব্লু লাইন ফিউচার্সেও প্রধান বাজার কৌশলবিদ ফিলিপ স্ট্রেইবল বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্থরতা নেমে আসার আশঙ্কা থেকে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার ও মুদ্রাবাজারে অর্থলগ্নিতে ভরসা পাচ্ছেন না। স্বাভাবিকভাবে তারা স্বর্ণের প্রতি ঝুঁকেছেন। এ পরিস্থিতি মূল্যবান ধাতুটির বাজার পরিস্থিতি চাঙা করে তুলেছে।
তিনি আরও বলেন, চাহিদায় চাঙা ভাব বজায় থাকলে আগামী দিনগুলোয় মূল্যবান ধাতুটির দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএসের বাজার কৌশলবিদ জনি তেভেজ বলেন, স্বর্ণের দাম দ্রুত বাড়ছে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চীনসহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্থরতা দীর্ঘায়িত হলে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বর্তমানের তুলনায় আরও বেড়ে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।