আসামীকে পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়া সহ ৮ শর্তে মুক্তি দিলো আদালত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সাহেদ সাব্বির, ফেনী প্রতিনিধি:

 

ফেনীতে মাদক মামলায় সাজা প্রাপ্ত আসামি এনায়তে পাটোয়ারী (৫৩)কে কারাগারের পরিবর্তে সংশোধনের জন্য সমাজসেবা কর্মকর্তার অধীনে প্রবেসন প্রধান করা হয়েছে। তিনি ফুলগাজী উপজেলার আমজাদ হাট ইউনিয়নের উত্তর তারাকুচা গ্রামের মৃত এরশাদ পাটোয়ারীর ছেলে। গতকাল বুধবার সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: জাকির হোসাইন এ আদেশ প্রদান করেন।

 

ফেনীর আদালতে এটিই প্রথম ঐতিহাসিক প্রবেশন আদেশ। আসামির এক বছরের দন্ড স্থগিত করে দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ারসহ ৮শর্তে জামিন আদেশ প্রদান করে আদালত। এ আদেশে ফেনীর সর্বস্তরের জনসাধারণ সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

 

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে ফেনী-পশুরাম সড়কের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে ফেনী মড়েল থানা পুলিশ আসামি এনায়েত পাটোয়ারী(৫৩) কে এক কেজি পাঁচশত গ্রাম গাঁজাসহ গ্রফতার করে। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও এসআই শাখাওয়াত হোসেন তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

 

গতকাল বুধবার আদালতে ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল মামলার যুক্তিতর্ক শোনে আদালত আসামীকে ১ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড ও এক হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করে আদেশ প্রদান করেন।

 

একই আদালত পরে ওই আসামীর বর্তমান বয়স ও পারিপার্শ্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আসামীর বিরুদ্ধে ঘোষিত দন্ড এক বছরের জন্য স্থগিত করে ১৯৬০সালের “দি প্রবেশন ষফ অফেন্ডারস্ অডিনেন্স” অনুযায়ী এক বছরের জন্য ৮ শর্তে জেলা প্রবেশন ও সমাজসেবা কর্মকর্তা ফেনী’র অধীনে সংশোধনের উদ্দেশ্যে প্রবেসন প্রদান করে।

 

আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ শাহানুর আলম জানায়, আসাম এনায়েত পাটোয়ারী (৫৩) কে ১৫শ গ্রাম গাঁজাসহ ফেনী মডেল থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী আসামী এনায়েত পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯০ এর ১৯ (১) এর টেবিল ৭ (ক) ধারায় মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়। বুধবার আদালত আসামিদকে কারাগারের পরিবর্তে সংশোধনের জন্য সমাজসেবা কর্মকর্তার অধীনে প্রবেসন প্রধান করে।

 

প্রবেশনের শর্তসমূহ হলো, আসামী কখনো মাদক গ্রহণ, পরিবহন ও বিক্রয় করবেনা। আসামী মাদক বিরোধী জনমত ও আন্দোলন এবং জনসচেতনতায় ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করবে ও ভূমিকা রাখবে। আসামীর জীবিত মাতাকে দেখাশোনা ও পর্যাপ্ত ভরন-পোষণ প্রদান করবে। আসামী প্রবেসনকালীন সময়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযোদ্ধের উপর দুটি সিনেমা দেখতে হবে এবং দেশপ্রেমের বিষয় মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। আসামী তার নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় ৩টি ফলজ গাছ ও তার গ্রামের মাঝে ৩০টি বনজ গাছ রোপন করে প্রবেসন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। আসামীকে ফেনী সদর উপজেলার যে কোন একটি এতিমখানায় ২০জন এতিমকে এক দিনের খাবার সরবরাহ করে বিষয়টি লিখিতভাবে জানাতে হবে। আসামীকে সংশোধীত হওয়ার নিমিত্তে দৈনিক ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করতে হবে এবং উপরোক্ত বিষয় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবেসন কর্মকর্তার সাথে প্রতিমাসে একবার দেখা করে শর্ত সমূহের অগ্রগতি জানাতে হবে। এছাড়া প্রবেশন কর্মকর্তার সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে তার নির্দেশিত মতে আসামী নিজেকে পরিচালিত করার চেষ্টা করতে হবে।

 

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর ফেনী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, আমাদের দেশের কারাগারগুলোতে মূলত সংশোধনের সুযোগ নেই। যার কারণে দন্ড ভোগের পর সাজাপ্রাপ্তরা পূণরায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। আসামিকে কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশন দিলে সরকারি কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে থেকে প্রকৃতপক্ষেই সংশোধনের সুযোগ পাবে।

 

ঐতিহাসিক রায়ে আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া:

ফেনীর আদালতে ঐতিহাসিক প্রবেসন আদেশে জেলা আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়ায় সিনিয়র আইনজীবি এডভোকেট জাহিদ হোসেন খসরু বলেন, এধরনের রায় ফেনীতে প্রথম হওয়ায় সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে বলে বিশ্বাস করি। বিজ্ঞ বিচারক মো: জাকির হোসাইন ফেনীতে আসার পর বিচক্ষনতার সহিত বিচারকার্য পরিচালনা করে আসছেন। তিনি একজন প্রাজ্ঞ, দক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি। এ ধরনের রায় দিয়ে ফেনীতে নজির সৃষ্টি করেছেন তিনি। এ রায়ের মাধ্যমে সমাজে মাদকের অপরাধ কমে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

 

এডভোকেট সৈদয় আবুল হোসেন বলেন, এই ঐতিহাসিক রায় প্রমাণ করে আদালত বরাবরই মানুষ ও সমাজকে পরিবর্তনের লক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিজ্ঞ আদালতের বিচারক অত্যন্ত বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি। উনার সুচিন্তিত রায় সামাজিক অবক্ষয়রোধে ও অপরাধীকে অপরাধ প্রবণতা থেকে বিরত রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

 

এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম নান্টু বলেন, এ ধরনের রায় সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ রায় বিবেকসম্পন্ন অপরাধীকে লজ্জিত করবে। মানুষ কখনো কখনো অবচেতন মনে বা অসৎ সংস্পর্শে অপরাধের পথে পা বাড়ায়। একটা সময় কৃতকর্মের জন্য সে নিজেই লজ্জিত হয়। এ রায় অপরাধীর বিবেককে দংশিত বা নাড়া দিবে। বিজ্ঞ বিচারকের এই ঐতিহাসিক রায় ফেনীর জন্য নতুন ম্যাসেজ।

 

এডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এ রায় সমাজ সংস্কারের জন্য পথ প্রদর্শক হবে বলে মনে করি। কেননা, রায়ের ৮টি শর্তই একজন অপরাধীকে অপরাধ প্রবণতা থেকে বিরত রাখতে সহায়তা করবে। বিজ্ঞ বিচারক মো: জাকির হোসাইন সাহেবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অন্য বিচারকেরাও এগিয়ে এলে ছোট-খাটো অপরাধীরা সংশোধনের সুযোগ পাবে।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১