নিজেস্ব প্রতিবেদক:
নোয়াখালী সদর উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল সংস্কারের লক্ষ্যে সোনাপুর বাজারে অবৈধভাবে স্থাপিত দুই শতাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সংস্কার হয়নি খাল। এতে একদিকে উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক, ব্যবসায়ী, কর্মচারীসহ তাদের পরিবারে পাঁচ সহস্রাধিক সদস্য চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। অন্যদিকে খাল সংস্কার না করায় খালের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা স্তুপ হয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধসহ মশা-মাছির চারণ ভূমিতে পরিনত হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়তই সোনাপুর বাজারসহ আশপাশের এলাকার পরিবেশ বিপদগ্রস্ত হচ্ছে।
বুধবার সকালে সরেজমিনে গেলে, সোনাপুর বাজারে উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যবসায়ী, দোকান মালিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলেন, ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট সোনাপুর এলাকার জলবদ্ধতা নিরসনের জন্য খাল সংস্কারের লক্ষ্যে সোনাপুর বাজারের নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের পূর্ব পাশের জেলা পরিষদের খাল এবং আলেকজেন্ডার সড়কের দক্ষিণ পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালের উপর স্থাপিত দুই শতাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্ছেদের পর ব্যবসা হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। এতে ওইসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ঘরের মালিক, ব্যবসায়ী, কর্মচারীসহ তাদের পরিবারের পাঁচ সহস্রাধিক সদস্য অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন এবং অর্থনৈতিক ভাবে নিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সোনাপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, পাকিস্থান আমল থেকে সোনাপুর বাজারে খালের পাড়ের পতিত জায়গায় এখানকার মানুষজন দোকানঘর নির্মাণ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। ওই দোকানঘরগুলো অস্থায়ী ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং জেলা পরিষদ ব্যবসায়ীদের কাছে বন্দোবস্ত দিয়ে আসে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং জেলা পরিষদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দোকানগুলোর খাজনাও আদায় করে। ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট সরকার যে উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্ছেদ করা হয়, গত এক বছরেও খাল সংস্কার না হওয়ায় সেই উদ্দেশ্যে ব্যহত হচ্ছে। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
সোনাপুর বাজারের পথচারী রাসেল আহাম্মেদ, আবদুর রহিম, দিপালী আক্তার, কলেজ ছাত্র সুজন বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও এখনো স্থাপনাগুলোর অবশিষ্ট অংশ খাল এবং খাল পাড়ে যত্রতত্র পড়ে আছে। এতে পানি নিষ্কাশন চরমভাবে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া খালের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা জমাট হয়ে মশা-মাছির সৃষ্টি হয়ে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ও রোগ ব্যাধি ছড়াচ্ছে। এখানে চলাফেরা করতে একসাথে দুটি মাক্স পড়তে হয়, তার পরও নাকে র্দুগন্ধ লাগে।
নোয়াখালী পৌরসভার কাউন্সিলর ফখরুদ্দিন মামুদ ফখরুল বলেন, পানি নিষ্কাশনের উদ্দেশ্যে খাল সংস্কারের জন্য দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে, এ জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এক বছরেও খালগুলো সংস্ককার না হওয়ায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে খালের মধ্যে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ হয়ে গেছে। খালগুলো দূত সংস্কার করে খাল পাড়ের অবশিষ্ট খালি জায়গা উচ্ছেদকৃত দোকান মালিকদের মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়ার দাবি জানান এ জনপ্রতিনিধি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, নোয়াখালী এলাকার জলবদ্ধতা নিরসনকল্পে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের অধিনে খাল সংস্কারের কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে চলমান আছে। এ প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি পাশ হলে চলতি বছরই সোনাপুর বাজারের খাল সংস্কার করা হবে। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে ডিপিপি সংশোধন না হলে খাল সংস্কারে আরো সময় লাগতে পারে।