নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
নোয়াখালীতে মানকবপাচারকারী দলের এক সদস্যকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করেছে জেলা সিআইডি পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত মো.হানিফ প্রকাশ মাসুদ (৪০) বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউপির ৮ নং ওর্য়াড বসন্তেরবাগের মৃত আলী আজমের ছেলে। সে এবং অপরাপর মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যদের ফাঁদে পড়ে মরোক্কোতে এক যুবক মানববেতর জীবন-যাপন করছে।
বুধবার (৩ মার্চ) দুপুর ৩টায় জেলা সিআইডি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। জেলা সিআইডি আরো জানায়, ধৃত আসামীসহ সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের অপরাপর সদস্যদের ধোকায় পড়ে উপজেলার একলাশপুর গ্রামের রফিকউল্যার ছেলে মো.আলাউদ্দিন (৩৯),বর্তমানে মরোক্কোর নাদোর শহরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ওই ভিকটিম দেশে বেকার অবস্থার প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে বিদেশে কর্মসংস্থানের চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য মোঃ হানিফ প্রকাশ মাসুদ ইউরোপের দেশ স্পেন যাওয়ার জন্য ভিকটিমকে প্ররোচিত ও প্রলুব্ধকরে। বিনিময়ে ধৃত আসামী ভিকটিমের নিকট হতে ১১ লক্ষ টাকা দাবী করে।
ভিকটিম সরল বিশ্বাসে মানব পাচারকারীদের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে নগদ ১১ লক্ষ টাকা মানব পাচারকারীদের দেয়। টাকা পাওয়ার পর গত ২০১৯ সালের ২০ মার্চে হজরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর থেকে এয়ার এরাবিয়ান বিমান যোগে ভিকটিম আলাউদ্দিকে দুবাই পাঠিয়ে দেয়। দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে ভিকটিম আলাউদ্দিকে পাচারকারীদের অপর দুই সদস্য রিসিভ করে তাদের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে রাখে। ভিকটিম আলাউদ্দিন এর সাথে থাকা ৩০০০ (তিনহাজার) ইউরো পাচার কারীরা জোর পূর্বক নিয়ে নেয়। এরপরও পাচারকারীরা আরো টাকা পাচারকারীদের মনোনীত ব্যাংক একাউন্টে দিতে বললে ভিকটিমের ছোট ভাই মনির হোসেন আজিম গত ২০১৯ সালের ২৫ মার্চে ওয়ান ব্যাংক লিঃ চৌমুহনী শাখায় নগদ ৫০,০০০/- (পঞ্চাশহাজার) টাকা পাচারকারীদের একাউন্টে জমা করে। পরবর্তীতে পাচারকারীরা দুবাই থেকে ভিকটিম আলাউদ্দিনের পাসপোর্টে আফ্রিকার দেশ মালির ভিসাইস্যু করে গত ২০১৯ সালের ৩ এপি্েরল দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে ইউথোপিয়া এয়ারলাইন্সের বিমান যোগে আফ্রিকার দেশ মালিতে পাচার করে দেয়। মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য আফ্রিকান ইউরো ও ইব্রাহিমদ্বয় মালির বামাকো এয়ারপোর্ট থেকে ভিকটিম আলাউদ্দিনকে রিসিভ করে তাদের বাড়িতে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে জোর পূর্বক ভিকটিম আলাউদ্দিনের পাসপোর্ট নিয়ে যায়। ভিকটিম আলাউদ্দিনসহ মানবপাচারের শিকার মোট ১৯ (উনিশ) জনের একটা দল তৈরীকরে। আফ্রিকার দেশ মালি থেকে ইউরোরও ইব্রাহিম দ্বয়ের নেতৃত্বে পায়ে হেঁটে অনেকটা পথ যাওয়ার পর লরি গাড়িতে চড়ে সাহারা মরুভূমিও বড়বড় পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে ৫ (পাঁচ) দিন অনাহারে থেকে মরক্কোর নাদোর শহরে পাচার করে দেয়। মানবপাচারকারী চক্রের অপরাপর সদস্যরা তাদেরকে রিসিভ করে আলাউদ্দিনসহ মোট০৯ (নয়) জনকে তাদের নাদোর শহরের ভাড়াবাড়িতে জিম্মি করে রাখে। তখন ভিকটিম আলাউদ্দিন জিম্মির বিষয়টি তার স্ত্রী সাবিনা আক্তার নুপুর (২৫) কে ফোনে জানালে তখন ভিকটিমের মুক্তির জন্য তার স্ত্রী একলক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য ধৃত আসামী মোঃ হানিফ প্রঃ মাসুদকে মুক্তিপন হিসেবে দেয়।
পরে নুপুর বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে ধৃত আসামীসহ মানবপাচারকারী চক্রের অপরাপর সদস্যদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে বেগমগঞ্জ থানার মামলা নং-২৭, তারিখ-১০/১২/২০২১খ্রিঃ ধারা-মানবপাচার ও প্রতিরোধ দমন আইনের ৭/৮/১০(১) রুজু হয়। মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় সিআইডি, নোয়াখালী মামলাটি স্ব-উদ্যোগে অধিগ্রহন করে। মামলা রুজুর পরপরই এজাহার নামীয় আসামীরা গ্রেফতার এড়াতে অজ্ঞাত স্থানে পলাতক হয়। সিআইডি‘র তদন্ত কালে বাদীর দেওয়া তথ্য উপাত্ত ও প্রাপ্ত তথ্য প্রমান বিশ্লেষন করে, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে টিম সিআইডি নোয়াখালী আসামীদের সনাক্ত ও তাদের অবস্থান খুঁজে পেতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে বিশেষ পুলিশ সুপার সিআইডি, নোয়াখালী এর তত্বাবধানে দীর্ঘ প্রচেষ্টায় মোঃ হানিফ প্রকাশ মাসুদকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ কালে সে জানায় যে, সে এবং তার ভাই আব্দুল ওয়াদুদ ও অপরাপর আসামীরা একসঙ্গে অত্র মামলার ভিকটিমকে ইউরোপের দেশ স্পেনে পাঠানোর কথা বলে তাকে প্রথমে দুবাই নেয়, সেখান থেকে মালি নেয় এবং সাহারা মরুভুমি পার করে ভিকটিমকে মরোক্কোর নাদোর শহরে নিয়ে আটক রেখে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অংকের মুক্তিপন দাবী করে বাদীর নিকট হতে সু-কৌশলে বিভিন্ন একাউন্টের মাধ্যমে প্রায় ১৪,০০,০০০/-(চৌদ্দ লক্ষ) টাকা নিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামী এলাকায় বেকার এবং বিদেশ গমনে ইচ্ছুকদের বিভিন্ন ভাবে প্রলুব্ধ করে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়া বিদেশ পাঠানোর কথা বলে বিভিন্ন লোকজনকে পাচার করে দিত।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোহাম্মদ সেলিম , ঢাকা অফিস : সিটিহার্ট, সুইট নং ১৫/২, ৬৭ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০। ই-মেইল:: nkbarta24@gmail.com
Copyright © 2024 Nk Barta 24. All rights reserved.