ভ্যাট দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্বের অন্যতম প্রধান উৎস বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজস্ব আয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই সরকার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও সেবা প্রদানের ব্যয় নির্বাহ করে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি মজবুত ও টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের সরকার সময় ও অর্থ-সাশ্রয়ী আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর একটি মূল্য সংযোজন কর ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। আজ শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) ‘ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্যোগে দেশব্যাপী ‘ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ, ২০২১’ পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি দেশের আপামর জনসাধারণ, ব্যবসায়ী এবং ভ্যাট আহরণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজস্ব-কর্মীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শূন্য মুদ্রা, শূন্য বৈদেশিক মুদ্রা এবং শূন্য স্বর্ণ রিজার্ভ নিয়ে একটি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সদ্য-স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি শিল্প-প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা জাতীয়করণের মাধ্যমে সেখানে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন। ’৭০-এর নির্বাচনি ইশতিহার অনুযায়ী তিনি শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশ এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭২ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ৭৬ নম্বর অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ প্রণয়ন করি এবং তা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের আওতায় ঘরে বসেই অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন ও ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদনের সুযোগ সৃষ্টি করি। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত অনলাইনে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৫ ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে এবং মোট প্রাপ্ত ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৮টি রিটার্নের মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৪৮টি রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের আওতায় ১৪টি ব্যাংকের মাধ্যমে ই-পেমেন্ট মডিউল বাস্তবায়ন করছি। এর পাশাপাশি এই প্রকল্পের মাধ্যমে রেভিনিউ একাউন্টিং মডিউল, রিফান্ড মডিউল, রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট মডিউল এবং কেইস ম্যানেজমেন্ট মডিউলসহ ১২টি মডিউল প্রস্তুত করেছি। আমাদের সরকার শতভাগ ভ্যাট অটোমেশনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বাংলাদেশ কাস্টমসকে আধুনিকায়নের লক্ষে- এর মানোন্নয়ন, স্বয়ংক্রিয় কাস্টমস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বন্ড ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয়করণসহ বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের সরকারের গৃহীত এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ রাজস্ব-ভাণ্ডার গড়ে তোলা। এ লক্ষে প্রয়োজনীয় পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর, দক্ষ, যুগোপযোগী ও জনবান্ধব রাজস্ব প্রশাসন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির সময়েও ভ্যাট কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ সরকারের রাজস্ব আহরণে বিরামহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন- এজন্য আমি তাদের এ প্রচেষ্টাকে আবারও সাধুবাদ জানাই।
জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন তথা জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে তিনি সকলকে একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী ‘ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ, ২০২১’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোহাম্মদ সেলিম , ঢাকা অফিস : সিটিহার্ট, সুইট নং ১৫/২, ৬৭ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০। ই-মেইল:: nkbarta24@gmail.com
Copyright © 2024 Nk Barta 24. All rights reserved.