নোয়াখালী প্রতিনিধি :
অবসরে যাওয়ার পর ওই পদে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ না থাকলেও নোয়াখালীর সেনবাগ ফাযিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আমিরুজ্জামান দাপটের সঙ্গে অতীতের ন্যায় বর্তমানেও নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন মাদ্রাসার সকল কর্মকান্ড। এমন অভিযোগ তুলে ওই অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এক শিক্ষক।
অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন সেনবাগ ফাযিল মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা গেছে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলছে। কক্ষের বাহিরে নেম প্লেটে এখনো অধ্যক্ষ হিসেবে মো. আমিরুজ্জামানের নাম লিখা রয়েছে।
পরে মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক ও স্থানীয়দের কাছ থেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানা গেছে, সেনবাগ ফাযিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আমিরুজ্জামান জমিয়তুল মোদাররেছীনের উপজেলা সভাপতির দায়িত্বে থাকায় শুধু সেনবাগ ফাযিল মাদ্রাসাই নয়, পুরো উপজেলার মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষক নিয়োগসহ যাবতীয় কর্মকান্ডে চলে তার দাপট! তিনি সেনবাগ ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্বে নিয়োজিত হওয়ার পর থেকে ওই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে মনগড়াভাবে নিজ প্রভাব খাটিয়ে গেছেন। অবসরে যাওয়ার পর এখনো তার প্রভাব খাটানো অব্যাহত রেখেছেন।
শিক্ষক ও স্থানীয়রা বলেন, দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হয়েও আমিরুজ্জামান হয়ে ওঠেন এক আধিপত্য বিস্তারকারী মানুষ। তার বিরুদ্ধে কোন শিক্ষক প্রতিবাদ করলে তাকে নাজেহাল ও চাকুরিচ্যুত করার হুমকি দিতেন ওই অধ্যক্ষ। যার কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেত না। মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী এ.এস.এম মনজুরুল হোসাইন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কথা বলায় ওই অধ্যক্ষ কৌশলে প্রতারনার মাধ্যমে তাঁর কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে তা অব্যহতি পত্র দেখিয়ে তাকে চাকুরিচ্যুত করার চেষ্টা করেন।
শিক্ষক ও স্থানীয়রা আরো জানান, গত ৩১ ডিস্মেবর আমিরুজ্জামান অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসরে গেলেও তিনি এখনো পুরো মাদ্রাসা তার নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। অধ্যক্ষের কক্ষের চাবি তার নিয়ন্ত্রণে রেখে তিনি সপ্তাহের ৪-৫ দিন সেখানে মাদ্রাসা চলাকালীন অফিস করেন এবং প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বহিরাগত হুজুরদের নিয়ে ওই কক্ষে গোপন মিটিং করেন। এতে মাদ্রাসার সার্বিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
মাদ্রসার এক শিক্ষক আরো জানান, মাদ্রসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অবৈধ পক্রিয়ায় ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে পুর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষ করার আশ^াস প্রদান করেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান। যার কারণে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কোন প্রতিবাদ না করে তার আজ্ঞাবহ হয়ে আছেন।
মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারীর কাছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন, অধ্যক্ষের কক্ষে তো তিনি বসেন না, তিনি বসেন শিক্ষক হলরুমে।
শিক্ষক হলরুমে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে বসেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকির হোসেন তাঁর দাপ্তরিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন।
এসময় জাকির হোসেন বলেন, মো. আমিরুজ্জামান স্যার গত ৩১ ডিস্মেবর অবসর গ্রহন করলে ওই দিনই দাপ্তরিকভাবে আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়। কিন্তু স্যার আমাদের উপদেষ্টা হিসেবে এখনো মাদ্রাসায় আসেন, মাদ্রাসার সার্বিক কর্মকান্ডে আমাদেরকে বুদ্ধি-পরামর্শ দেন।
অধ্যক্ষের রুম বন্ধ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি স্যারকে সম্মান করি, তাই ওখানে বসিনা। স্যারের কাছে চাবি রয়েছে তিনি মাঝে-মধ্যে আসেন, বসেন।
বিশেষ অনুরোধে অধ্যক্ষের রুমে প্রবেশ করে দেখা গেছে, অধ্যক্ষের চেয়ার খালি, পাশে একটা চেয়ার দেয়া, সেখানে বসলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষের কক্ষের অনার বোর্ডে এখনো অধ্যক্ষ হিসেবে মো. আমিরুজ্জামানের নাম লিখা। রুমের ভিতরে রয়েছে জমিয়তুল মোদাররেছীনের একটি আলমারি ও আসবাবপত্র।
অধ্যক্ষের রুম বন্ধ এবং রুমের ভিতরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কর্মকান্ডের কোন অস্তিত্ব না থাকার কারণ জানতে চাইলে মো. জাকির হোসেন রেগে গিয়ে বলেন, আপনাদের এসব জানার এখতিয়ার নাই। এসবের জবাব আমাদের কর্তৃপক্ষ নিবেন। পরে অন্যশিক্ষকদের উপস্থিতিতে তিনি বলেন, অধ্যক্ষ স্যার মাদ্রাসা শিক্ষকদের সমিতির দায়িত্বে থাকার কারণে এখানে মাঝে মধ্যে আসেন, শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করেন। এতে কোন সমস্যা তো দেখছিনা।
ভুক্তভোগী সহকারী মৌলভী এ.এস.এম মনজুরুল হোসাইন বলেন, আমিরুজ্জামান এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে নিজ ক্ষমতা বলে ব্যাপক অনিয়ম করে গেছেন। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করতো না। আমি তার নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে তিনি কৌশলে প্রতারনার মাধ্যমে আমার স্বাক্ষর নিয়ে তা অব্যহতি পত্র দেখিয়ে কমিটির কারও সাথে কথা না বলেই আমাকে চাকুরিচ্যুত করার চেষ্টা করেন। আমি আদালতে মামলা করেছি, ওই মামলায় উচ্চ আদালত আমার পক্ষে রায় প্রদান করেন। কিন্ত সেখানেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে ও মাদ্রাসার বিপুল অর্থ ব্যয় করে আদালতে মামলা চালিয়ে আমাকে হয়রানি করছেন।
অভিযুক্ত অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আমিরুজ্জামানের বক্তব্য নিতে তার মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন, আমি অবসর নিয়েছি, ওখানে আমার কোন প্রভাব নাই। মাদ্রাসার কক্ষ দখল করে আছেন কেন এমন প্রশ্নে আমিরুজ্জামান উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনার কি মাথা খারাপ, আমি কেন দখল করবো। এই বলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সেনবাগ ফাযিল মাদ্রাসার সভাপতি তামান্না মাহমুদ বলেন, একজন শিক্ষক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা দুইজনকেই নোটিশ করবো, প্রয়োজনে সরেজমিনে গিয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিব।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোহাম্মদ সেলিম , ঢাকা অফিস : সিটিহার্ট, সুইট নং ১৫/২, ৬৭ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০। ই-মেইল:: nkbarta24@gmail.com
Copyright © 2024 Nk Barta 24. All rights reserved.