এনকে বার্তা অনলাইন:
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় কচুরিপানা থেকে তৈরি হচ্ছে হস্তশিল্পের সৌখিন পণ্য। কচুরিপানা থেকে উৎপাদিত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশ এবং দেশের বাইরে। এ সকল উৎপাদিত পণ্য ব্রাজিল,আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স,ইউরোপ,আমেরিকা ,কোরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের আটটি দেশে যাচ্ছে।
কাঁচা ও শুকনো কচুরিপানা বিক্রি করে এবং পণ্য তৈরি করে উপজেলার ১৫টি গ্রামের অন্তত ৩০০টি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। কারখানায় কাজ করে এবং কচুরিপানা বিক্রি করে সংসারের খরচ বহন ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগাচ্ছেন অনেকেই।
জানা যায়,উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল রসুলপুর গ্রামে ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য জয়তুন খাতুন গড়ে তুলেছেন ‘রফিকুল কুটির শিল্প’নামে কচুরিপানা থেকে পণ্য উৎপাদনের একটি কারখানা। এখানে শুধু পণ্য উৎপাদন নয় গড়ে উঠেছে কচুরিপানা ক্রয় ও বিক্রয় কেন্দ্র।
কুটির শিল্পের মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়,কারখানায় প্রতিদিন কচুরিপানা ক্রয়-বিক্রয় এবং পণ্য উৎপাদন হয়। উৎপাদিত পণ্যগুলো হলো-ফুলেরটব, ফুলদানি, বালতি, পাটি, ,ট্রে, ফ্রটকাপ,ফলের ঝুড়ি,ডিম রাখার ঝুড়ি,লন্ড্রী বাস্কেট,পাপোশ,মোড়া,টুপি,আয়নার ফ্রেম, ডাইনিং টেবিলের ম্যাটসহ প্রায় ২০ ধরনের হস্তশিল্প পণ্য।
কারখানায় কাজ করছেন ৩৫থেকে ৪০ জন নারী শ্রমিক এবং ২০ থেকে ২৫জন পুরুষ শ্রমিক। কারখানার কাজের সাথে জড়িত শ্রমিকেরা প্রতিদিন একজন পুরুষ শ্রমিক আয় করছেন ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং নারী শ্রমিক আয় করছেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,সাঁথিয়া উপজেলার ঘুঘুদহ, গৌরীগ্রাম, দোপমাজগ্রাম, ধাতালপুর, ক্ষেতুপাড়া, মিয়াপুর, বহলবাড়িয়া, বানিয়াবহু, গাঙ্গুয়াহাটি এবং বেড়া উপজেলার জগন্নাথপুর,হাটুরিয়া,নাকালিয়াসহ অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন কচুরিপানা বিক্রি করতে আসেন এই কেন্দ্রে।
প্রতিদিন এই ক্রয় কেন্দ্র ৫০ থেকে ৬০ মন কাঁচা ও ৫ পাঁচ থেকে সাত মন শুকনো কচুরিপানা ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে। প্রতি কেজি কাঁচা কচুরিপানা বিক্রি হচ্ছে প্রায় তিন টাকা বা প্রতিমন ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং শুকনোগুলো বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪৫ টাকা বা প্রতিমন ১ হাজার ৮০০ টাকা ।
দাশুরিয়া ‘বিডি ক্রিয়েশনের’ ‘স্বত্বাধিকারী আব্দুর রহমান আশিক জানান, আমরা শুকনো কচুরিপানা ক্রয় করে সেগেুলো প্রক্রিয়াজাত করে পণ্য উৎপাদন করে থাকি। প্রতিবছর আমরা কচুরিপানা থেকে উৎপাদিত প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকার পন্য দেশের বাইরে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আসছি। ’
কচুরিপানা বিক্রেতা উপজেলার গৌরীগ্রামের মিজান বলেন,আমি কচুরিপানা কুটির শিল্পে বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেছি।’ দোপ মাজগ্রামের দিনমজুর ‘জেহের আলী বলেন,আমি প্রতিদিন প্রায় ৭থেকে ৮শ’ টাকার কাঁচা এবং শুকনো কচুরিপানা বিক্রি করি।’
কুটির শিল্পের শ্রমিক কৃষ্ণ দাস (৬৫)বলেন,‘এখানে কাজ করে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বা প্রতিসপ্তাহে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আমার আয় হয়।’
নারী শ্রমিক আকলিমা বলেন, কচুরিপানা থেকে পন্য তৈরি করে প্রতিদিন ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা আয় করি এবং সেটা দিয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও পোশাক কিনি।’
রফিকুল কুটির শিল্পের মালিক জয়তুন খাতুন বলেন, আমি প্রায় ৭ বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। সারা বছর এখানে কচুরিপানা ক্রয় বিক্রয় হয়। কচুরিপানার পাশাপাশি বেত,হোগলা পাতা,শানি ও ছোন দিয়ে তার কুটির শিল্পে বিভিন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে। খরচ বাদে প্রতি মাসে তার আয় হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
সাঁথিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন,‘কচুরিপানা থেকে পন্য উৎপাদন হচ্ছে,এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আগামিতে আমাদের দপ্তরে মহিলাদের প্রশিক্ষণের জন্য অধিদপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠাবো।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন,‘কাঁচা ও শুকনো কচুুরিপানা কুটির শিল্পে বিক্রি করে এলাকার অনেক দরিদ্র মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে এবং তারা স্বাবলম্বী হচ্ছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোহাম্মদ সেলিম , ঢাকা অফিস : সিটিহার্ট, সুইট নং ১৫/২, ৬৭ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০। ই-মেইল:: nkbarta24@gmail.com
Copyright © 2024 Nk Barta 24. All rights reserved.