এনকে বার্তা ডেস্ক::
করোনা সংক্রমণ রোধে চট্টগ্রামে ঢিলেঢালা লকডাউন চলছে। এরই মধ্যে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে সাধারণ জনজীবন। মহানগরে প্রতিনিয়ত শিল্প-বাণিজ্যিক চাঞ্চল্য বাড়ছে। আবার সামনে আসছে ঈদ। সব মিলিয়ে নগরবাসীকে স্বাভাবিক সময়ের মতো বের হতে হচ্ছে।
আর এতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হচ্ছে না। অথচ প্রতিনিয়ত বাড়ছে কভিট-১৯-আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত আট দিনে চট্টগ্রামে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে পাঁচগুণ। গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪১৯, আর চিকিৎসার জন্য বেড আছে ৩১৫টি। ফলে দ্রুত পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থার দিকে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা শুরু হয় ২৫ মার্চ। আর প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় এর ঠিক ১০ দিন পর ৩ এপ্রিল। এক মাস পর ৪ মে চট্টগ্রামে মোট করোনা পজিটিভ শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৯। এরপর মাত্র আট দিনে চট্টগ্রামে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা হয়েছে ৪১৯।
অর্থাৎ এ সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। এদিকে চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত করোনা চিকিৎসার জন্য বেড আছে ৩১৫টি। এর মধ্যে আইসিইউ শয্যা আছে ১০টি, যদিও বাস্তবে আছে ২২০টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১০০ সিটের আইসোলেশন ও ১০ সিটের আইসিইউ ওয়ার্ড এবং ফৌজদারহাটের বিশেষায়িত হাসপাতাল বিআইটিআইডিতে ৩০ সিটের আইসোলেশন ওয়ার্ড ছাড়াও একই এলাকায় ফিল্ড হাসপাতালে ৫০ সিট ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ সিটের অবজারভেশন ওয়ার্ড রয়েছে।
এসব আপাতত করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, যদিও আক্রান্তের তুলনায় চিকিৎসা বেড কম হওয়ায় দৃশ্যমান উপসর্গ না থাকলে রোগীকে বাড়িতে আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে। আজ বেলা ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের তিন হাসপাতালে ৯৪ জন আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
অপরদিকে গত ৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির এক নির্দেশনায় করোনা-আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সুবিধা থাকা ১২টি বেসরকারি হাসপাতাল বাছাই করে দেন।
তবে বিভিন্ন অজুহাতে অধিকাংশ হাসপাতালের মালিক সেই নির্দেশনা মানতে গড়িমসি করছেন। অথচ এসব বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ৫০-৬০টির মতো আইসিইউ শয্যা আছে। আর ভেন্টিলেটর আছে ৩০-৩৫টি। কোনোটিই এখন করোনা-আক্রান্তদের কাজে আসছে না।
সরেজমিনে ঘুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থার মতোই বন্দরনগরের যাপিত জীবনের ব্যস্ততা দেখা গেছে। শহরের আগ্রাবাদ, খাতুনগঞ্জ, জিইসির মোড়, চকবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর ব্যাংকে মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক। ইপিজেডসহ বিভিন্ন এলাকার গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের বহনকারী রিজার্ভ বাসে ছিল উপচেপড়া ভিড়।
পাশাপাশি প্রাইভেটকার, মাইক্রো, রিকশা, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ সব ধরনের ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। অর্থাৎ গণপরিবহনের বাস-টেম্পো ছাড়া অন্যসব যানবাহন চলাচল করছে স্বাভাবিকভাবেই। এছাড়া হাটবাজারে মানুষ ছিল আগের চেয়েও বেশি। অথচ কয়েক দিন আগেও লকডাউনের কারণে পুরোপুরি অচেনা ছিল চট্টগ্রাম মহানগর।
সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হওয়ায় চেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে বন্দরনগর। এর জন্য চাকরিজীবী-শ্রমজীবীদের বের হতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে সড়কে গাড়ি ও মানুষের উপস্থিতি। অথচ দেশে করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতি চলছে, কিংবা করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঘরে থাকা জরুরি-এমন সতর্কতার কোনো তোয়াক্কা করছে না নগরবাসী। তাদের সরব উপস্থিতি, যানজট-সবই অনেকটাই আগের মতো। ফলে নগরীতে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা।
এ বিষয়ে চিকিৎসক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, দেশের ৬৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চাহিদা অনুযায়ী যে জেলায় যে কটা প্রয়োজন, সে পরিমাণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ডেডিকেটেড কভিড রোগীর চিকিৎসার জন্য আগামী তিন থেকে ছয় মাসের জন্য রিকুইজিশন করে ওইসব হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরকার সরবরাহ করলে করোনা মোকাবিলায় ১৮ থেকে ২০ হাজার শয্যা সারা দেশে রেডিমেড পাওয়া যেত এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর আর্থিক দৈন্য দূর হতো। অথচ আমরা এ পথে না হেঁটে ‘যত কেনাবেচা তত লাভ’ এই নীতিতে হাঁটছি। কিন্তু কেন? নতুন কিছু করতে নতুন কেনাকাটা করতে সময় ও অর্থ দুটাই অপচয় হচ্ছে।
শুধু সরকার একটা প্রজ্ঞাপন জারি করুক-সরকারি চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবা কর্মীদের পাশাপাশি ডেডিকেটেড কভিড হাসপাতালে কমর্রত করোনা-আক্রান্ত সব বেসরকারি চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবা কর্মীদের চিকিৎসা ব্যয় এবং বিমা সুবিধা বা প্রণোদনা সরকার প্রদান করবে, পাশাপাশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর পরিচালনা ব্যয় সরকার বহন করবে, তাহলে বর্তমানে প্রতিদিন যে হারে করোনা রোগী বাড়ছে, তাদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সহজ হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, পোশাক কারখানা সচল, বন্দর চালু, নিত্যপণ্যের গাড়ি, জরুরি প্রয়োজন প্রভৃতি কারণে কোথাও কোথাও সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি সামাজিক দূরত্বসহ সব ধরনের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য। আমরা আমাদের কার্যক্রম নিয়ে সব সময় রেডি। আর আমাদের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও কাজ করছে। পাশাপাশি নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবিরের নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত নম্বরটি সব সময় ব্যস্ত পাওয়া যায়। এর কিছুক্ষণ পর আবারও মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম জেলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়েছে ছয় হাজার ৮৩৭টি। এর মধ্যে করোনা পজিভিট হয়েছে ৪১৯টি পরীক্ষায় এবং চিকিৎসাধীন আছেন ৬৮ জন। আর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮০ জন এবং মারা গেছেন ২৪ জন। বাকি ৩০৯ জন এখনও করোনা পজিটিভ।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোহাম্মদ সেলিম , ঢাকা অফিস : সিটিহার্ট, সুইট নং ১৫/২, ৬৭ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০। ই-মেইল:: nkbarta24@gmail.com
Copyright © 2024 Nk Barta 24. All rights reserved.