রক্তদান কর্মসূচীর নামে প্রতারণার অভিযোগ সাতক্ষীরায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১

জেলা প্রতিনিধি:

 

সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির নামে প্রতারণা ও চাাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সামনে ব্যাগে রক্তযুক্ত নল লাগিয়ে শার্টের নিচ দিয়ে সেই নল স্থাপন করে রক্তদানের ভঙ্গিমা করে ছবি তুলেই কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গত ১৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা ছাত্রলীগ কার্যালয়ে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম আশিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এক রক্তদান কর্মসূচি পালিত হয়। এতে উদ্বোধক হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একেএম ফজলুল হক এবং প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এবং অন্যান্য আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

 

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কর্মসূচি থেকে ছাত্রলীগ নেতাদের দেয়া ৩০ ব্যাগ রক্ত সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে ওই রক্তদান কর্মসূচি সম্পূর্ণ ভুয়া, লোক দেখানো ও প্রতারণামূলক বলে অভিযোগ উঠেছে খোদ ছাত্রলীগের মধ্য থেকেই।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বলেন, ১৪ আগস্ট জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয়ে যে কর্মসূচি পালনের কথা বলা হয়েছে, সেটি ছিল শুভঙ্করের ফাঁকি। কর্মসূচিতে জেলা ছাত্রলীগের নামে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে কোনো রক্ত জমা হয়নি। ওইদিন হাসপাতাল থেকে ১০টি খালি ব্যাগ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা কোনো রক্ত জমা দেয়নি। পরে ছাত্রলীগ নেতারা শহরের একটি বেসরকারি মেডিকেল থেকে একটি খালি ব্যাগ কিনে নিয়ে আসে। সেই ব্যাগে রক্তযুক্ত নল লাগিয়ে একজন ছাত্রলীগ নেতাকে শুইয়ে তার ফুল হাতা শার্টের নিচ দিয়ে ওই নল লাগিয়ে রক্তদান করা হচ্ছে ভঙ্গিমা প্রদর্শন করা হয়।

 

জেলা আওয়মী লীগ নেতাদের দিয়ে তা উদ্বোনের নাটক সাজিয়ে ছবি তোলা হয়। তিনি আরও বলেন, দৃশ্যটি এতোই সুক্ষ ও প্রতারণামূল ছিল যা উদ্বোধক ও প্রধান অতিথিসহ উপস্থিত অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষেও বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট রবিন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ছাত্রলীগের ওই কর্মসূচিতে আমি দুইজন স্বেচ্ছাসেবী পাঠাই। ঘণ্টা দুয়েক পর তারা ফিরে আসে। সেখান থেকে কেউ রক্ত জমা দেয়নি। আমি কোনো ব্লাড পাইনি। স্বেচ্ছাসেবী গালিব বলেন, গত ১৪ তারিখ ছাত্রলীগের কর্মসূচির দিন আমি অফিসের নির্দেশনা পেয়ে বেলা ১২টার দিকে সেখানে যাই। তখন আমি কেন আরও এক ঘণ্টা আগে সেখানে পৌঁছাইনি এই বলে জেলা ছাত্রলীগ সেক্রেটারি সুমন আমার উপর চড়াও হন এবং আমাকে ঘরে আটকে রাখতে বলেন। এ সময় তিনি আমাকে বলেন, এই নাস্তা পানি কই? তখন আমি বলি, আমি টাকা দিয়ে নাস্তা পানির ব্যবস্থা করছি। কিন্তু তাতেও তিনি সন্তুষ্ট না হয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এই রবিন বাবুকে বিকালের মধ্যে ১০ হাজার টাকা দিতে বলবি। এর বেশ কিছু সময় পর আমি সেখান থেকে ফিরে আসি।

 

এ বিষয়ে রক্তদান কর্মসূচির প্রধান অতিথি সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ নজরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। কিছুটা সত্যতাও পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, করোনাজনিত সমস্যা এবং কাজের ব্যস্ততার কারণে আমরা সেদিন ফটোসেশন করে চলে আসি। তাদের সেখানে যথাযথভাবে কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। শুনেছি তারা তালিকা করে রেখেছে এবং পরবর্তীতে যাদের রক্তের প্রয়োজন হবে তারা লোক দিয়ে সেই রক্ত পৌঁছে দেবে।

 

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি পরে যোগাযোগ করতে বলেন। এদিকে মানুষের জীবন রক্ষাকারী রক্তদান নিয়ে এমন ছলচাতুরি আর প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অযোগ্যতা, খামখেয়ালিপনাকেই দায়ী করছেন অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। গত ২৫ মে এস এম আশিকুর রহমানকে সভাপতি ও সুমন হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে অবহেলা ও প্রতারণা দায়ে এ কমিটির অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০