নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত কাস্টমস কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন মজুমদার (৫৫) মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বুধবার (৩ জুন) রাত ২টা ৫ মিনিটে রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন। এ রাজস্ব কর্মকর্তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। অপরদিকে, জসিম উদ্দিনের দেখভাল করতে গিয়ে এবং তার সংস্পর্শে এসে তার স্ত্রী করোনা আক্রান্ত। ছেলে ও মেয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, মঙ্গলবার (২ জুন) পর্যন্ত কাস্টমস ও ভ্যাটের মোট ৩৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি), ২০ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, ১১ জন রাজস্ব কর্মকর্তা, দুইজন সাব ইন্সপেক্টর, একজন সেপাই ও একজন কম্পিউটার অপারেটর। আক্রান্তদের মধ্যে দুইজন সুস্থ হয়েছেন। একজন রাজস্ব কর্মকর্তা আজ মারা গেলেন।
বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং মূসক, নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, জসিম উদ্দিন মজুমদার আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাজমা, ডায়াবেটিকসহ নানান রোগে ভুগছেন। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে প্রায় এক সপ্তাহ অসুস্থতা নিয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৮ মে জ্বর নিয়ে তিনি ঢাকায় আসেন। ওইদিনই তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। করোনার উপসর্গ থাকায় তার নমুনা পরীক্ষা করোনা হয়। পরে নমুনা পজেটিভ আসে। ১৮ ও ১৯ মে তিনি ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
তিনি আরো জানান, ইউনাইটেডে করোনার ভালো চিকিৎসা না থাকায় ২০ মে তাকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তার রক্তচাপ, ডায়াবেটিক, অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। বেড়ে যায় শ্বাসকষ্ট। চিকিৎসকের পরামর্শে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় ২১ মে তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও অবস্থার অবনতি হয়। অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় করোনার জন্য তিন ব্যাগ প্লাজমা দেওয়া হয়।
মহাসচিব জানান, এছাড়া চিকিৎসায় তার সহকর্মী ও অ্যাসোসিয়েশন থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি মারা যান। করোনা মহামারিতে রাজস্ব আহরণ ও রাজস্ব সেবা প্রদানের মতো রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রথম একজন রাজস্ব কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। তার স্ত্রী করোনা পজেটিভ। সন্তানরাও আক্রান্ত হতে পারেন।
এনবিআর সূত্র জানায়, জসিম উদ্দিন মজুমদার ফেনীতে ১৯৬৫ সালের ১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। সাত ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। ২০০৪ সালের ৫ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি মা, স্ত্রী দুই সন্তানসহ (মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী,
ছেলে স্ট্যান্ডার্ড সেভেন) অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ফেনীর শান্তি কোম্পানি রোডের মজুমদার বাড়িতেই তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে।
সূত্র আরো জানায়, মরহুমের গোসলসহ সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে সকাল সোয়া ১০ টায় পরিবারের সদস্যদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া জানাজা ও দাফনকাজে অংশগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ২০ সেট পিপিই দেয় ঢাকাএভ।
এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও সিনিয়র তথ্য অফিসার সৈয়দ এ মু’মেন শেয়ার বিজকে জানান, ‘সিনিয়র সচিব, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম করোনা যুদ্ধে বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট বিভাগের প্রথম শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন। পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।’
রাজস্ব কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন মজুমদারের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাকাএভ)। বাকাএভ সদস্য সচিব মো. মজিবুর রহমান ও আহ্বায়ক খন্দকার লুৎফল আজম সই করা শোক বার্তায় বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কর্মরত অবস্থায় করোনা আক্রান্ত রাজস্ব কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন মজুমদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বাকাএভ এর পক্ষ থেকে করোনা যুদ্ধে বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট বিভাগের প্রথম শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। পরম করুনাময় আল্লাহ্ যেন তাঁকে জান্নাতবাসী করেন এবং পরিবারের সবাইকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দিন।’
ঢাকাএভ এর পক্ষ থেকে সভাপতি মো. মাজহারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ জসিম উদ্দিন মজুমদারের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। শোক বার্তায় বলেন, এ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনায় পুরো রাজস্ব পরিবারের প্রথম শহীদ। এছাড়া প্রতিদিন অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। এ মহামারিতে কর্মকর্তাদের সুরক্ষা সামগ্রীসহ কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের প্রতি সংগঠনের পক্ষ থেকে আহবান জানানো হয়।