এনকে বার্তা ডেস্ক::
এর আগে করোনাভাইরাসের কারণে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঋণ শ্রেণিকরণে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। মহামারীর প্রকোপ দীর্ঘায়িত হওয়ায় আরও তিন মাস বর্ধিত করা হয়েছে এই সময়।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কোনো ঋণের শ্রেণিমান পরিবর্তন করা যাবে না।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, যা সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
দেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাস মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় গত ১৯ মার্চ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, ১ জানুয়ারি ২০২০ ঋণের শ্রেণিমান যা ছিল, আগামী ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত সময়ে ওই ঋণ তার চেয়ে বিরূপমানে শ্রেণিকরণ করা যাবে না।
সোমবারের নির্দেশনায় বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘায়িত হওয়ার আশংকা থাকায় অনেক শিল্প, সেবা ও ব্যবসা খাত তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না।
তাই ১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে ঋণ/বিনিয়োগের শ্রেণিমান যা ছিল, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ওই ঋণ/বিনিয়োগ তার চেয়ে বিরূপমানে শ্রেণিকরণ করা যাবে না। তবে কোনো ঋণের/বিনিয়োগের শ্রেণিমানের উন্নতি হলে তা যথাযথ নিয়মে শ্রেণিকরণ করা যাবে।
“এই নির্দেশনা পরিপালনের লক্ষ্যে ১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে বিদ্যমান মেয়াদী (স্বল্পমেয়াদী কৃষি ঋণ ও ক্ষুদ্রঋণসহ) ঋণ/বিনিয়োগসমূহের বিপরীতে ১ জানুয়ারি ২০২০ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ সময়কালীন প্রদেয় কিস্তিগুলো ডেফার্ড হিসেবে বিবেচিত হবে।
“এক্ষেত্রে অক্টোবর ২০২০ হতে সংশ্লিষ্ট ঋণ/বিনিয়োগের কিস্তির পরিমাণ ও সংখ্যা পুনঃনির্ধারিত হবে। পুনঃনির্ধারণকালে জানুয়ারি ২০২০ হতে সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত যতসংখ্যক কিস্তি প্রদেয় ছিল তার সমসংখ্যক কিস্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ১ জানুয়ারি হতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সময়ের কোন কিস্তি পরিশোধিত না হলেও উক্ত কিস্তিসমূহের জন্য মেয়াদী ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহীতা কিস্তি খেলাপী হিসেবে বিবেচিত হবেন না।”
এর পাশাপাশি আরও কয়েকটি নির্দেশনাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিদ্যমান চলমান ও তলবী ঋণ/বিনিয়োগ এবং ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে ২০২০ পর্যন্ত সময়ে সৃষ্ট তলবী প্রকৃতির ঋণ/বিনিয়োগের মেয়াদ/সমন্বয়ের তারিখ বিদ্যমান মেয়াদ হতে নয় মাস বা ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ (যেটি আগে ঘটে) পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
এই সুবিধা চলাকালীন ঋণ/বিনিয়োগের উপর সুদ/মুনাফার হিসাবায়নের ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত বিদ্যমান নীতিমালা বলবৎ থাকবে। তবে ওই সময়ে ঋণ/বিনিয়োগের উপর কোনো দণ্ড সুদ বা অতিরিক্ত ফি আরোপ করা যাবে না।
কোন গ্রাহকের উল্লিখিত সুবিধা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত না হলে পূর্বনির্ধারিত পরিশোধসূচী অনুযায়ী অথবা ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ/বিনিয়োগের অর্থ সমন্বয় করা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার ঋণ খেলাপিদের সুবিধা দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর অবস্থা যে দিন দিন খারাপ হচ্ছে, সে দিকে কোনো নজর নেই।”
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো মোট ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এরমধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
অর্থাৎ ব্যাংকগুলো ডিসেম্বর পর্যন্ত (অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক) যত টাকার ঋণ বিতরণ করেছে তার ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। সেপ্টেম্বর (প্রথম প্রান্তিক) শেষে এই হার ছিল ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে কাগজে-কলমে ২২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়েছে ব্যাংকগুলো।
তবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ কিন্তু ৪২০ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা।
গত বছরের মে মাসে জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়, ঋণ খেলাপিরা মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের মেয়াদে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন।
‘বিশেষ’ এই সুবিধার আওতায় ১৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছে ব্যাংকগুলো। যার অর্ধেকই করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েও গত বছর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ৫২ থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল করা হয়েছে।
এর বাইরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন (রাইট অফ) করেছে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে এই অর্থ বাদ যাবে, যদিও তা আর ফেরত আসছে না।
অবলোপন করা ঋণ যোগ করলে অবশ্য মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।