ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করায় দেশের বিভিন্ন এলাকার নিন্মাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, নাটোর, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা রয়েছে।
যদিও গত সপ্তাহে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির মধ্যে দুর্গতদের অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িঘরে ফিরেছিল। তবে হঠাৎ দু’দিনের ঢলে ফের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করায় ফের দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। পানিবন্দি এসব মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন।
বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, নদনদীর ১০১টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ৭৬টি পয়েন্টেই পানি বেড়েছে। এর মধ্যে বিপদসীমার ওপরে বয়ে যাচ্ছে ১৬টি পয়েন্টে। ২৩ স্টেশনে পানি কমেছে, দুটি পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে।
কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার নদনদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা তা অব্যাহত থাকবে। তিস্তা, যমুনা, সুরমা, সারিগোয়াইন, যদুকাটা ও গুড় নদীর সাতটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিরাজমান বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিকিম, আসাম, মেঘলায় ও ত্রিপুরা অঞ্চলে কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হয়েছে। এর আগে গত ২৭ জুন সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শহরের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল।
দুর্যোগ ব্যবস্থা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (এনডিআরসিসি) জানায়, রোববার পর্যন্ত এবারের বন্যায় ১৫ জেলার ৭২টি উপজেলার ৩৯৩টি ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল উপদ্রুত হয়েছে। এসব এলাকায় দুই লাখ ৭৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি এবং ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে এবং মজুতও আছে।
৭৩৮টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আট হাজার নারী-পুরুষ এবং আড়াই হাজার শিশু আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় ৩৮৮টি মেডিকেল টিম গঠন এবং ১৭৩টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
আষাঢ়ের শেষ সময়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন জানান, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া মডেলের তথ্য তুলে ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের প্রদেশে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জুলাইয়ের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রতিবেদনে এরই মধ্যে জানায়, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ১২ জুলাই (সোমবার) কিছু স্থানে পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হতে পারে।
এ সময় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ ও নাটোর জেলার নিন্মাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। পানি তিন-চার দিন বাড়তে থাকলে লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলার নিন্মাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পাহাড়ি ঢলে মেঘনা অববাহিকায় চার-পাঁচ দিন নদনদীর পানি বাড়তে থাকলে সুনামগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনার নিন্মাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। উজানের ভারী বর্ষণের ওপর নির্ভর করে বন্যা পরিস্থিতি কোথাও কোথাও জুলাইয়ের চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে।
এর আগে জুনের চতুর্থ সপ্তাহে মৌসুমি বায়ু বেশ সক্রিয় থাকায় ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে স্বল্পমেয়াদি এক দফা বন্যার সৃষ্টি হয়।