নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় হেদায়েত উল্যাহ নামের বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকের দাবী তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূন্ন ভিত্তিহীন। কিন্তু এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গণস্বাক্ষরকৃত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্ত করছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। অভিযুক্ত হেদায়েত উল্যাহ পশ্চিম সোনাদিয়া চৌরাস্তা মাহমুদুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ওই একই বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তার স্ত্রী। স্বামী স্ত্রী উভয়ের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে বেশির ভাগ সময় অনুপস্থিত থাকার অভিযোগও রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম সোনাদিয়া চৌরাস্তা মাহমুদুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২৯০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্ল্যাহ নিজের ইচ্ছেমত পরিচালনা করে দিনদিন বিদ্যালয়ের ফলাফল খারাপ করে দিচ্ছেন। তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না। তিনি প্রায় সময় ক্লাশ নেন না। বিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষক রয়েছেন ৫জন। প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্ল্যাহ’র স্ত্রী এ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা। বেশিরভাগ সময় তিনিও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। ফলে বাকি ২জন শিক্ষক দিয়ে কোনভাবে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। ক্লাশ না করে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি বিষয়ে কয়েকজন অভিভাবক জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্ল্যাহ তাদের সাথে দূর্ব্যবহার করেন।
আরও জানা গেছে, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ২০১৯ সালের ৪জুন যান। কমিটির মেয়াদকাল ছিল ৩বছর। ২০২১ সালের ১১এপ্রিল মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কথা থাকলেও গত ১৯মার্চ তিনি একটি পকেট কমিটি গঠন করেন প্রধান শিক্ষক। সভাপতির মৃত্যুর পর নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি হবেন থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। কিন্তু সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে আত্মীয়-স্বজন ও নিজস্ব লোকজন দিয়ে গঠন করেন ’স্কুল পরিচালনা কমিটি’। নীতিমালায় কমিটির সভাপতি স্নাতক পাশ হওয়ার কথা থাকলেও তিনি শুধু অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন একজনকে সভাপতি করেছেন। নীতিমালা ১.৪ ধারায় দাতা সদস্য এবং ১.১১ধারায় ইউপি সদস্য (মেম্বার)কে রাখার শর্ত থাকলেও কাউকেই রাখেননি কমিটিতে। সরকারি নিয়ম লঙ্ঘনকরে কমিটি করে লুটপাট চালাচ্ছেন তিনি।
বিদ্যালয়ের দাতা পরিবারের পক্ষ থেকে মুহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তার খেয়ালখুশিমতো বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। তার এই দূর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলাতে আমাদেরকে বাদ দিয়েই নিজের ইচ্ছা মতো কমিটি গঠন করেছেন। আমরা যতটুকু জায়গা স্কুলকে দান করেছি, তার প্রায় স্কুলকে বুঝিযে দিয়েছি। তারপরও সে স্কুল সংলগ্ন আমাদের জায়গা ও দোকান দখল করার পায়তারা করছে। সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাহার উদ্দিন জানান, আমি নিজ উদ্যোগে হাতিয়ার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির দু‘জন সদস্যকে নিয়ে স্কুলের জায়গা পরিমাপ করে পিলার স্থান করে দিয়েছিলাম। কিন্তু রাতের আঁধাওে প্রধান শিক্ষক সীমানার পিলার তুলে দাতাদের সাথে আবারও দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েন।
প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহ তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয় চলাকালিন সময় আমি বা আমার স্ত্রী সহকারি শিক্ষিকা অনুপস্থিত ছিলাম না। উদ্দেশ্যপবন ভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। আর খতিয়ানে বিদ্যালয়ের নামে ৫০শতাংশ জমি দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও মেপে মাত্র ১২শতাংশ জমি পাওয়া গেছে। দাতাদের কাছ থেকে বিদ্যালয়ে জমি বুঝে নেওয়ার কথা বলাতে তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করছে। আমি চাই এই বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টার সমাধান হোক।
হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ভবরঞ্জন দাস জানান, প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে স্থানীয় এলাকাবাসীর গণ স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ গত সপ্তাহে পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ওই ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার কামরুল হাসানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর অভিযোগ প্রমাণ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।