ঢাকা ০১:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

থানায় অগ্নিসংযোগ, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা: ৩ আসামির স্বীকারোক্তি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:১৫:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪ ৫ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সোনাইমুড়ি প্রতিনিধিঃ

 

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে আদালতে আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নাইম হোসেন (২১), ইমাম হোসেন ওরফে ইমন (২২) নাহিদুল ইসলাম (১৬)। তারা সবাই সোনাইমুড়ী উপজেলার বাসিন্দা।

 

রোবাবার (১২ অক্টোবর) সকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো.আবদুল্লাহ আল ফারুক।

 

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর দুপুর ২টার দিকে সোনাইমুড়ীর বাইপাস বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গত ৫ আগস্ট সোনইমুড়ী থানায় হামলা ও নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামি নাইম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যমতে তার মোবাইল ফোনের ডায়াল লিস্ট পর্যালোচনা করে নিহত পুলিশ কনস্টেবল মো.ইব্রাহীমকে হত্যার সাথে জড়িত আসামি ইমাম হোসেন ওরফে ইমনের হেফাজত থেকে নিহত পুলিশ কনস্টেবলের ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় একই দিন সন্ধ্যার দিকে উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের ভাওরকোট এলাকা থেকে আসামি ইমাম হোসেন ওরফে ইমনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই সময় তার থেকে একটি টেকনো স্পার্ক মোবাইল জব্দ করা হয়। উক্ত মোবাইল ফোনে ম্যাসেঞ্জারে জনৈক ওমর ফারুক নামক আইডির ব্যক্তির কাছে পাঠানো ইমনের ঘটনার দিন পুলিশ হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক ভয়েস রেকর্ড পাওয়া যায়। এরপর হামমলার ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে হত্যার সাথে জড়িত শিশু নাহিদুল ইসলাকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত শিশু নাহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় আসামিরা গত ৫ আগস্ট সোনাইমুড়ী থানায় হামলা ও সংঘাতে জড়িত। বিভিন্ন সময়ে প্রত্যেকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। বেআইনী জনতাবদ্ধ হয়ে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দাঙ্গারূপ ধারণ করে পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশকে মারধর ও গুলি করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, চুরি ও সরকারি মালামালের ক্ষতিসাধানের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। আসামি নাইম হোসেন, ইমন পুলিশের সাথে সংঘাতে জড়িত বলে জানায় শিশু নাহিদুল ইসলাম।

 

পুলিশ জানায়, সোনাইমুড়ী থানায় আক্রমণ পরবর্তীতে প্রাণ ভয়ে জীবন রক্ষার্থে পলায়নরত পুলিশদের পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে থানার পিছনে থানার সীমানা প্রাচীরের কাছে অপেক্ষা করে আসামিরা। পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিম নীল রংয়ের পুলিশের টি-শার্ট পরিহিত অবস্থায় সীমানা প্রাচীরের নীচ দিয়ে টিনের বেড়ার ফাঁক দিয়ে বের হওয়ার সময় শিশু নাহিদুল ইসলাম তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাধা দেয়। এরপর এইতো পুলিশ বলে মারধর শুরু করে। সাথে সাথেই ইমাম হোসেন ইমন দৌঁড়ে এসে হাতে থাকা কাঠের লাঠি দিয়ে আঘাত করে। কনস্টেবল ইব্রাহিম গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অপর আসামিরা সকলে একযোগে হত্যার উদ্দেশ্যে তার পুরো শরীরে আরো উপর্যুপুরি আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় এবং মৃত্যুন্মুখ জেনেও আসামি নাইম পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিমের পকেট থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ও আইডি কার্ড ও টাকাসহ ম্যানিব্যাগ নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে পুনরায় আসামিরা এসে উপর্যুপুরি আঘাত করে ইব্রাহিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে তাহাকে চার হাত পা ধরে ঝুলিয়ে রাস্তায় নিয়ে টানা হেঁচড়া করে সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত করে রেলক্রসিংয়ে কাছাকাছি রেখে উল্লাসে মত্ত হয়।

 

অপরদিকে, ঘটনার পরবর্তীতে আসামি ইমাম মোবাইল ও টাকা ভাগ চাইলে আসামি নাইম তাকে পরে যোগাযোগের মাধ্যমে দিবে বলে ইমনের মোবাইল নাম্বারে নিজ মোবাইল থেকে কল করে। কিন্তু মোবাইলে ব্যালেন্স না থাকায় আসামি ইমাম হোসেন ইমনের মোবাইলে কল না গেলেও আসামি নাইম হোসেনের উল্লেখিত জব্দকৃত মোবাইলের ডায়াল লিস্টে আসামি ইমনের মোবাইল নাম্বারটি কল লিস্টে থেকেই যায়।

 

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) আরও বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পরিকল্পিত হত্যার বিষয়টি স্পষ্ট ও প্রাথমিকভাবে স্বাক্ষ্য প্রমাণ সম্বলিত। আসামিরা আদালতে আসামিদের দোষ স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক

থানায় অগ্নিসংযোগ, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা: ৩ আসামির স্বীকারোক্তি

আপডেট সময় : ০৯:১৫:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

সোনাইমুড়ি প্রতিনিধিঃ

 

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে আদালতে আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নাইম হোসেন (২১), ইমাম হোসেন ওরফে ইমন (২২) নাহিদুল ইসলাম (১৬)। তারা সবাই সোনাইমুড়ী উপজেলার বাসিন্দা।

 

রোবাবার (১২ অক্টোবর) সকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো.আবদুল্লাহ আল ফারুক।

 

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর দুপুর ২টার দিকে সোনাইমুড়ীর বাইপাস বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গত ৫ আগস্ট সোনইমুড়ী থানায় হামলা ও নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামি নাইম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যমতে তার মোবাইল ফোনের ডায়াল লিস্ট পর্যালোচনা করে নিহত পুলিশ কনস্টেবল মো.ইব্রাহীমকে হত্যার সাথে জড়িত আসামি ইমাম হোসেন ওরফে ইমনের হেফাজত থেকে নিহত পুলিশ কনস্টেবলের ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় একই দিন সন্ধ্যার দিকে উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের ভাওরকোট এলাকা থেকে আসামি ইমাম হোসেন ওরফে ইমনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই সময় তার থেকে একটি টেকনো স্পার্ক মোবাইল জব্দ করা হয়। উক্ত মোবাইল ফোনে ম্যাসেঞ্জারে জনৈক ওমর ফারুক নামক আইডির ব্যক্তির কাছে পাঠানো ইমনের ঘটনার দিন পুলিশ হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক ভয়েস রেকর্ড পাওয়া যায়। এরপর হামমলার ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে হত্যার সাথে জড়িত শিশু নাহিদুল ইসলাকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত শিশু নাহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় আসামিরা গত ৫ আগস্ট সোনাইমুড়ী থানায় হামলা ও সংঘাতে জড়িত। বিভিন্ন সময়ে প্রত্যেকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। বেআইনী জনতাবদ্ধ হয়ে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দাঙ্গারূপ ধারণ করে পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশকে মারধর ও গুলি করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, চুরি ও সরকারি মালামালের ক্ষতিসাধানের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। আসামি নাইম হোসেন, ইমন পুলিশের সাথে সংঘাতে জড়িত বলে জানায় শিশু নাহিদুল ইসলাম।

 

পুলিশ জানায়, সোনাইমুড়ী থানায় আক্রমণ পরবর্তীতে প্রাণ ভয়ে জীবন রক্ষার্থে পলায়নরত পুলিশদের পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে থানার পিছনে থানার সীমানা প্রাচীরের কাছে অপেক্ষা করে আসামিরা। পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিম নীল রংয়ের পুলিশের টি-শার্ট পরিহিত অবস্থায় সীমানা প্রাচীরের নীচ দিয়ে টিনের বেড়ার ফাঁক দিয়ে বের হওয়ার সময় শিশু নাহিদুল ইসলাম তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাধা দেয়। এরপর এইতো পুলিশ বলে মারধর শুরু করে। সাথে সাথেই ইমাম হোসেন ইমন দৌঁড়ে এসে হাতে থাকা কাঠের লাঠি দিয়ে আঘাত করে। কনস্টেবল ইব্রাহিম গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অপর আসামিরা সকলে একযোগে হত্যার উদ্দেশ্যে তার পুরো শরীরে আরো উপর্যুপুরি আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় এবং মৃত্যুন্মুখ জেনেও আসামি নাইম পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিমের পকেট থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ও আইডি কার্ড ও টাকাসহ ম্যানিব্যাগ নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে পুনরায় আসামিরা এসে উপর্যুপুরি আঘাত করে ইব্রাহিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে তাহাকে চার হাত পা ধরে ঝুলিয়ে রাস্তায় নিয়ে টানা হেঁচড়া করে সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত করে রেলক্রসিংয়ে কাছাকাছি রেখে উল্লাসে মত্ত হয়।

 

অপরদিকে, ঘটনার পরবর্তীতে আসামি ইমাম মোবাইল ও টাকা ভাগ চাইলে আসামি নাইম তাকে পরে যোগাযোগের মাধ্যমে দিবে বলে ইমনের মোবাইল নাম্বারে নিজ মোবাইল থেকে কল করে। কিন্তু মোবাইলে ব্যালেন্স না থাকায় আসামি ইমাম হোসেন ইমনের মোবাইলে কল না গেলেও আসামি নাইম হোসেনের উল্লেখিত জব্দকৃত মোবাইলের ডায়াল লিস্টে আসামি ইমনের মোবাইল নাম্বারটি কল লিস্টে থেকেই যায়।

 

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) আরও বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পরিকল্পিত হত্যার বিষয়টি স্পষ্ট ও প্রাথমিকভাবে স্বাক্ষ্য প্রমাণ সম্বলিত। আসামিরা আদালতে আসামিদের দোষ স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে।