ঢাকা ১০:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
হজ্জযাত্রা উপলক্ষে সুবর্ণচর উপজেলা সমিতি সদস্যদের বিদায় সংবর্ধনা সাড়ে তিন বছর পর জামায়াত নেতা হলেন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত মাটি নিয়ে দ্বন্দ্ব: যুবলীগ কর্মিকে পিটিয়ে হত্যা, আটক ২ সুবর্ণচরে সন্ত্রাসী কায়দায় বাড়ীঘরে হামলা-ভাংচুরের অভিযোগ, নারীসহ আহত ৩ জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের সভাপতি আবদুল হক, সম্পাদক পলাশ সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতাকর্মিদের ওপর হামলা, আহত-৫ কারাগারের দেয়াল টপকে পালানোর চেষ্টা, ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিও বেগমগঞ্জে সম্পত্তির জন্য মা বোনকে মারধর, বসতঘর ভাঙচুরের অভিযোগ গাছের ঢাল কাটা নিয়ে ঝগড়া, প্রতিবেশী বৃদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যা তাহজ্জত নামাজ পড়তে উঠে ছুরিকাঘাতে খুন হয় বৃদ্ধা নারী

কবিরহাটে রাতের আঁধারে কৃষকের বাড়ি দখল, আহত-৬

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৩:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ মে ২০২০ ৬৫৭ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

নোয়াখালীতে আদালতের ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাতের আঁধারে মোজাম্মেল হোসেন নামের এক গরীব কৃষকের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় বসত বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে বাড়ি দখল করা হয়।

অস্ত্রধারীদের আঘাতে ওই কৃষক ও ৯০ বছরের এক বৃদ্ধসহ ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছে। সম্প্রতি জেলার কবিরহাট উপজেলার ৩নং ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড নলুয়া গ্রামে হতদরিদ্র কৃষক মোজাম্মেল হোসেনের মালিকানাধীন ও ভোগ দখলীয় বাড়িতে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

আহতদের নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুনাফ ও গ্রীস প্রবাসী নুর নুর আহাম্মদের বিরুদ্ধে হামলা ও দখলে সরাসরি সন্ত্রাসীদের ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নলুয়া মৌজায় বিভিন্ন খরিদীয় দলিল মূলে ৭ একর ৬২ শতক জমির মালিক ছিলেন এ কে এম নিজাম উদ্দিন মাষ্টার। তিনি মৃত্যুকালীন নি:সন্তান ছিলেন। ফলে ওয়ারিশ সূত্রে এ সম্পত্তির মালিক হন তার মা, এক ভাই ও বোন।

আহত কৃষক মোজাম্মেল ওই জমির মালিক এ কে এম নিজাম উদ্দিন মাষ্টারের বোন কামরুন নাহারের কাছ থেকে ১ একর ৫৪ শতক জমি কিনে নেন। পরে ওই জমিতে বাড়ি-ঘর নিমার্ণ করে ভোগ দখল ও চাষাবাদ করে আসছিলেন।

কিন্তু প্রবাসী নুর আহাম্মদ ও তার পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন এ জমি দখল করে রাখে। এ নিয়ে আদালতে মামলা হয়। পরে নুর আহাম্মদের কাছ থেকে আদালতের নির্দেশে জমি উদ্ধার করা হয়। সম্প্রতি আদালত এ জমির উপর ১৮৯৮ সালের ফৌজধারী আইন অনুযায়ী ১৪৪ ধারা জারি করে।

রোববার (৩ মে) সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার (১ মে) ভোরে গ্রীস প্রবাসী নুর আহম্মদের নেতৃত্বে আবুল কাসেম, নুরুজ্জামান বাটু, ফয়েজ আহম্মদ, তোফায়েল আহম্মদসহ ১০০ থেকে ১৫০ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী অস্ত্র নিয়ে রাতের আঁধারে অসহায়, নিরীহ ও হতদরিদ্র্য মোজাম্মেল হোসেনের বসত বাড়িতে হামলা চালায়।

এ সময় পরিবারের লোকজন কিছু বুঝে উঠার আগেই সন্ত্রাসীরা বসত ঘরের ছাল, দরজা, জানালা, বেড়া কটে নিয়ে যায়। তারা বসত ঘরের প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে পুরো ঘরের নিশানা মুছে দেয়। বাঁধা দিলে ওই পরিবারের আবুল কালাম, মোজাম্মেল হোসেন, হালিমাসহ অপরাপরদের বেদড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত করে পৈশাচিক কান্ড চালায় তারা।

ঘরের ভিটিতে চাল, ডালসহ ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মাটিতে তছনছ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ সময় পুকুরে পবিত্র কোরআনসহ পরিবারের ব্যবহার করা লেপ-তোষক পানিতে পড়ে থাকতেও দেখা যায়। এছাড়া সন্ত্রাসীদের কোপের রোষানল থেকে ঘরের পাশের সৃজিত কড়ই, কলা গাছসহ মূল্যবান ফলজ গাছপালাও রক্ষা পায়নি। এ সময় স্থানীয়রা মারাত্বক আহত আবুল কালাম (৯০), মোজাম্মেল হোসেন (৪৮) ও হালিমা খাতুনসহ ছয়জনকে উদ্ধার করে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে বৃদ্ধ আবুল কালামের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

খোলা আকাশের নিচে বাড়ির ঘরের ভিটির ওপর দাঁড়িয়ে শতাধিক প্রতিবেশি নারী-পুরুষ অভিযোগ করে জানান, এ পরিবারের আনুমানিক ৬-৭ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে সন্ত্রাসীরা। ইতোপূর্বে এ জাতীয় সন্ত্রাসী, অমানবিক ও ঘৃন্য কর্ম তারা আর দেখেননি।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও গুরুতর আহত মোজাম্মেল হোসেন জানান, সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে এ হামলা চালানো হয়েছে। ৪টি গরু, ২টি ছাগল, নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। এছাড়া তাকে ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্নাফের সরাসরি ইন্ধনে এবং ভাড়া করা সন্ত্রাসী দিয়ে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। তারা অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যানের পুত্র জুয়েল গ্রীস প্রবাসী নুর আহাম্মদের পক্ষ হয়ে সরাসরি সন্ত্রাসী দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মন্নাফ প্রথমে ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানান। পরে তিনি বলেন, ‘যাদের জায়গা তারা নিজেরাই দখল করেছে। এ জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। তাই আমার কিছুই করার নেই।’

কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সংঘটিত ঘটনা কিভাবে ঘটল-এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ওসিকে বলেছি বিষয়টি সুরাহা করে দিতে। আমি বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।’

এ বিষয়ে কবিরহাট থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা হাছান বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। তাদেরকে (ভুক্তভোগী) বলেন মামলা দিতে। আমি মামলা নেবো।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক
ট্যাগস :

কবিরহাটে রাতের আঁধারে কৃষকের বাড়ি দখল, আহত-৬

আপডেট সময় : ০৫:৫৩:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ মে ২০২০

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

নোয়াখালীতে আদালতের ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাতের আঁধারে মোজাম্মেল হোসেন নামের এক গরীব কৃষকের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় বসত বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে বাড়ি দখল করা হয়।

অস্ত্রধারীদের আঘাতে ওই কৃষক ও ৯০ বছরের এক বৃদ্ধসহ ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছে। সম্প্রতি জেলার কবিরহাট উপজেলার ৩নং ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড নলুয়া গ্রামে হতদরিদ্র কৃষক মোজাম্মেল হোসেনের মালিকানাধীন ও ভোগ দখলীয় বাড়িতে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

আহতদের নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুনাফ ও গ্রীস প্রবাসী নুর নুর আহাম্মদের বিরুদ্ধে হামলা ও দখলে সরাসরি সন্ত্রাসীদের ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নলুয়া মৌজায় বিভিন্ন খরিদীয় দলিল মূলে ৭ একর ৬২ শতক জমির মালিক ছিলেন এ কে এম নিজাম উদ্দিন মাষ্টার। তিনি মৃত্যুকালীন নি:সন্তান ছিলেন। ফলে ওয়ারিশ সূত্রে এ সম্পত্তির মালিক হন তার মা, এক ভাই ও বোন।

আহত কৃষক মোজাম্মেল ওই জমির মালিক এ কে এম নিজাম উদ্দিন মাষ্টারের বোন কামরুন নাহারের কাছ থেকে ১ একর ৫৪ শতক জমি কিনে নেন। পরে ওই জমিতে বাড়ি-ঘর নিমার্ণ করে ভোগ দখল ও চাষাবাদ করে আসছিলেন।

কিন্তু প্রবাসী নুর আহাম্মদ ও তার পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন এ জমি দখল করে রাখে। এ নিয়ে আদালতে মামলা হয়। পরে নুর আহাম্মদের কাছ থেকে আদালতের নির্দেশে জমি উদ্ধার করা হয়। সম্প্রতি আদালত এ জমির উপর ১৮৯৮ সালের ফৌজধারী আইন অনুযায়ী ১৪৪ ধারা জারি করে।

রোববার (৩ মে) সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার (১ মে) ভোরে গ্রীস প্রবাসী নুর আহম্মদের নেতৃত্বে আবুল কাসেম, নুরুজ্জামান বাটু, ফয়েজ আহম্মদ, তোফায়েল আহম্মদসহ ১০০ থেকে ১৫০ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী অস্ত্র নিয়ে রাতের আঁধারে অসহায়, নিরীহ ও হতদরিদ্র্য মোজাম্মেল হোসেনের বসত বাড়িতে হামলা চালায়।

এ সময় পরিবারের লোকজন কিছু বুঝে উঠার আগেই সন্ত্রাসীরা বসত ঘরের ছাল, দরজা, জানালা, বেড়া কটে নিয়ে যায়। তারা বসত ঘরের প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে পুরো ঘরের নিশানা মুছে দেয়। বাঁধা দিলে ওই পরিবারের আবুল কালাম, মোজাম্মেল হোসেন, হালিমাসহ অপরাপরদের বেদড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত করে পৈশাচিক কান্ড চালায় তারা।

ঘরের ভিটিতে চাল, ডালসহ ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মাটিতে তছনছ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ সময় পুকুরে পবিত্র কোরআনসহ পরিবারের ব্যবহার করা লেপ-তোষক পানিতে পড়ে থাকতেও দেখা যায়। এছাড়া সন্ত্রাসীদের কোপের রোষানল থেকে ঘরের পাশের সৃজিত কড়ই, কলা গাছসহ মূল্যবান ফলজ গাছপালাও রক্ষা পায়নি। এ সময় স্থানীয়রা মারাত্বক আহত আবুল কালাম (৯০), মোজাম্মেল হোসেন (৪৮) ও হালিমা খাতুনসহ ছয়জনকে উদ্ধার করে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে বৃদ্ধ আবুল কালামের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

খোলা আকাশের নিচে বাড়ির ঘরের ভিটির ওপর দাঁড়িয়ে শতাধিক প্রতিবেশি নারী-পুরুষ অভিযোগ করে জানান, এ পরিবারের আনুমানিক ৬-৭ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে সন্ত্রাসীরা। ইতোপূর্বে এ জাতীয় সন্ত্রাসী, অমানবিক ও ঘৃন্য কর্ম তারা আর দেখেননি।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও গুরুতর আহত মোজাম্মেল হোসেন জানান, সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে এ হামলা চালানো হয়েছে। ৪টি গরু, ২টি ছাগল, নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। এছাড়া তাকে ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্নাফের সরাসরি ইন্ধনে এবং ভাড়া করা সন্ত্রাসী দিয়ে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। তারা অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যানের পুত্র জুয়েল গ্রীস প্রবাসী নুর আহাম্মদের পক্ষ হয়ে সরাসরি সন্ত্রাসী দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মন্নাফ প্রথমে ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানান। পরে তিনি বলেন, ‘যাদের জায়গা তারা নিজেরাই দখল করেছে। এ জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। তাই আমার কিছুই করার নেই।’

কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সংঘটিত ঘটনা কিভাবে ঘটল-এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ওসিকে বলেছি বিষয়টি সুরাহা করে দিতে। আমি বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।’

এ বিষয়ে কবিরহাট থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা হাছান বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। তাদেরকে (ভুক্তভোগী) বলেন মামলা দিতে। আমি মামলা নেবো।’