ঢাকা ০৩:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, পাঁচ শিশুসহ আহত-৬ মানবিক তারুণ্যের ৮ম যুব সম্মেলন ও এ্যাওয়ার্ড বিতরণ সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে থানায় অভিযোগ, পুলিশের তদন্তকালে বাদীর উপর হামলা, আহত ৪ হাসনাত-সারজিস ছাত্রলীগ থেকে গিয়ে নতুন দলে এসেছে: ইসমাইল সম্রাট কবিরহাটের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র শিরিন গার্ডেনে হামলার অভিযোগ, পুলিশসহ আহত ৭ সুধারামে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে জখম, অভিযোগ যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতকর্মীদের বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মালিকানা ছিনতাই করেও এনসিপি সংগঠন হিসেবে ব্যর্থ হয়েছে: নাছির Blind Amjad receives Eid gift from Tarique Zia জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দৃষ্টি হারানো আমজাদ পেলো তারেক জিয়ার ঈদ উপহার ভাড়াটিয়ার দোকানে তালা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

 দায়িত্ব অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু, আদালতে মামলা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৩:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০২০ ২৬৫২ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভূল চিকিৎসা ও দায়িত্বরতদের অবহেলায় এক নবজাতকের (ছেলে) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় মৃত নবজাতকের দাদী তাহের বেগম নয়ন (৫১) বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালতের বিচারিক হাকিম সোয়েব উদ্দিন খান মামলাটি আমলে নিয়ে নির্দেশ পাওয়ার এক কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত প্রতিবেদন দিতে হাসপাতালের আরএমও কে নির্দেশ দিয়েছেন। 
মঙ্গলবার দুপুরে নোয়াখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯জনকে আসামী করে এ মামলাটি দায়ের করেন তিনি। মামলায় হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ২নং ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স বিথীকা রাণী হাওলাদার, গাইনী বিভাগের প্রধান ডা. লাইনুন নাহার, ডা. নাছির (ইন্টার্নি), সিনিয়র নার্স সামছুন নাহার, মমতাজ বেগম, ম্যাটস ছাত্র নাঈম, আয়া পুতুল রানী, জুহুরা বেগম ও সারজাহানকে আসামী করা হয়েছে।
নিহত নবজাতক জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সরোয়ার মেম্বার বাড়ীর জীবন উদ্দিন ও আসমা আক্তার দম্পতীর সন্তান।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১অক্টোবর বুধবার ভোর ৫টার দিকে আসমা আক্তারের প্রসব ব্যাথা উঠলে তার শাশুড়ী তাহেরা বেগম নয়ন আসমাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের গাইনী বিভাগের ২নং ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করেন। ভর্তির রেজিস্টেশন নাম্বার ৪৯৪৭৩/১১, তারিখ ২১/১০/২০২০ইং। ভর্থির পর গৃহবধূর শাশুড়ী নয়ন হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স বিথীকা রাণী হাওলাদারকে বার বার ডাকা সত্ত্বেও তিনি ঘুম থেকে উঠেন নি। কিছুক্ষণ পর নার্স বিথীকা ঘুম থেকে উঠে ইন্টার্নি ডা. নাছির ও আয়া মারজাহানের যোগসাজশে বলেন টাকা দিলে তারা বাচ্চা নরমাল ডেলিভারী করার চেষ্টা করবেন। আর টাকা না দিলে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে সিজার করতে হবে। এসময় তাদের সাথে থাকা ম্যাটস ছাত্র নাঈম অন্তস্বত্তার লজ্জা স্থানের ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। শাশুড়ী নয়ন প্রতিবাদ করলে নাঈম বলে এ ভিডিও আমাদের ট্রেনিং এর জন্য লাগবে। নিরুপায় হয়ে শাশুড়ী নয়ন গাইনী বিভাগের প্রধান ডা. লাইনুর নাহারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি হাসপাতালে আসেননি।
অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, হাসপাতালে ওইসময় সিনিয়র চিকিৎসক নার্স চার্জে থাকা সত্ত্বেও গৃহবধূকে আয়া ও ম্যাটসের ছাত্র দিয়ে ডেলিভারী করায়। ওই সময় তারা নবজাতকের ঘাড় ধরে জোরপূর্বক টেনে ডেলিভারী করানোর কারণে নবজাতকের মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কালো হয়ে রক্ত জমাট বেধে যায়। টানা হিঁচড়ার কারনে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে জীবিত নবজাতক প্রসব হওয়ার মাত্র ২-৩ মিনিটের মধ্যে মারা যায়। ভিকটিমের শাশুড়ি তার পুত্রবধূর শরীর থেকে বাহির হওয়ার ছবি মোবইলে তোলার চেষ্টা করলে তাকে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে তারা।
মামলার বাদী ও হাজীপুর ইউপির সংরক্ষিত মহিলা সদস্য তাহের বেগম নয়ন বলেন, ওইদিন উনারা লাশ নিয়ে বাড়ীতে এসে দাফন করেন। পরদিন ২২অক্টোবর এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে হাসপাতালে গিয়েও তার আরএমও কে না পেয়ে ফিরে আসেন। এরপরদিন পুনঃরায় হাসপাতালে গিয়ে বিষয়টি জানালে তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর ভুক্তভোগীদের মুখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার পর দিনি ২২অক্টোবর বৃহস্পতিবার হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুল আফসার, গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. হেমা সানজিদা ও নাসিং সুপারেন্টেন্ড বেবী সুলতানা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কিন্তু আজ (২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) ওই তদন্ত কমিটি কোন লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সৈয়দ মো. আব্দুল আজিমের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তারা কেউই কল রিসিভ করেন নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

 দায়িত্ব অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু, আদালতে মামলা

আপডেট সময় : ০৯:৪৩:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০২০
নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভূল চিকিৎসা ও দায়িত্বরতদের অবহেলায় এক নবজাতকের (ছেলে) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় মৃত নবজাতকের দাদী তাহের বেগম নয়ন (৫১) বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালতের বিচারিক হাকিম সোয়েব উদ্দিন খান মামলাটি আমলে নিয়ে নির্দেশ পাওয়ার এক কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত প্রতিবেদন দিতে হাসপাতালের আরএমও কে নির্দেশ দিয়েছেন। 
মঙ্গলবার দুপুরে নোয়াখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯জনকে আসামী করে এ মামলাটি দায়ের করেন তিনি। মামলায় হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ২নং ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স বিথীকা রাণী হাওলাদার, গাইনী বিভাগের প্রধান ডা. লাইনুন নাহার, ডা. নাছির (ইন্টার্নি), সিনিয়র নার্স সামছুন নাহার, মমতাজ বেগম, ম্যাটস ছাত্র নাঈম, আয়া পুতুল রানী, জুহুরা বেগম ও সারজাহানকে আসামী করা হয়েছে।
নিহত নবজাতক জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সরোয়ার মেম্বার বাড়ীর জীবন উদ্দিন ও আসমা আক্তার দম্পতীর সন্তান।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১অক্টোবর বুধবার ভোর ৫টার দিকে আসমা আক্তারের প্রসব ব্যাথা উঠলে তার শাশুড়ী তাহেরা বেগম নয়ন আসমাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের গাইনী বিভাগের ২নং ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করেন। ভর্তির রেজিস্টেশন নাম্বার ৪৯৪৭৩/১১, তারিখ ২১/১০/২০২০ইং। ভর্থির পর গৃহবধূর শাশুড়ী নয়ন হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স বিথীকা রাণী হাওলাদারকে বার বার ডাকা সত্ত্বেও তিনি ঘুম থেকে উঠেন নি। কিছুক্ষণ পর নার্স বিথীকা ঘুম থেকে উঠে ইন্টার্নি ডা. নাছির ও আয়া মারজাহানের যোগসাজশে বলেন টাকা দিলে তারা বাচ্চা নরমাল ডেলিভারী করার চেষ্টা করবেন। আর টাকা না দিলে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে সিজার করতে হবে। এসময় তাদের সাথে থাকা ম্যাটস ছাত্র নাঈম অন্তস্বত্তার লজ্জা স্থানের ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। শাশুড়ী নয়ন প্রতিবাদ করলে নাঈম বলে এ ভিডিও আমাদের ট্রেনিং এর জন্য লাগবে। নিরুপায় হয়ে শাশুড়ী নয়ন গাইনী বিভাগের প্রধান ডা. লাইনুর নাহারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি হাসপাতালে আসেননি।
অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, হাসপাতালে ওইসময় সিনিয়র চিকিৎসক নার্স চার্জে থাকা সত্ত্বেও গৃহবধূকে আয়া ও ম্যাটসের ছাত্র দিয়ে ডেলিভারী করায়। ওই সময় তারা নবজাতকের ঘাড় ধরে জোরপূর্বক টেনে ডেলিভারী করানোর কারণে নবজাতকের মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কালো হয়ে রক্ত জমাট বেধে যায়। টানা হিঁচড়ার কারনে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে জীবিত নবজাতক প্রসব হওয়ার মাত্র ২-৩ মিনিটের মধ্যে মারা যায়। ভিকটিমের শাশুড়ি তার পুত্রবধূর শরীর থেকে বাহির হওয়ার ছবি মোবইলে তোলার চেষ্টা করলে তাকে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে তারা।
মামলার বাদী ও হাজীপুর ইউপির সংরক্ষিত মহিলা সদস্য তাহের বেগম নয়ন বলেন, ওইদিন উনারা লাশ নিয়ে বাড়ীতে এসে দাফন করেন। পরদিন ২২অক্টোবর এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে হাসপাতালে গিয়েও তার আরএমও কে না পেয়ে ফিরে আসেন। এরপরদিন পুনঃরায় হাসপাতালে গিয়ে বিষয়টি জানালে তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর ভুক্তভোগীদের মুখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার পর দিনি ২২অক্টোবর বৃহস্পতিবার হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুল আফসার, গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. হেমা সানজিদা ও নাসিং সুপারেন্টেন্ড বেবী সুলতানা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কিন্তু আজ (২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) ওই তদন্ত কমিটি কোন লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সৈয়দ মো. আব্দুল আজিমের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তারা কেউই কল রিসিভ করেন নি।