নোয়াখালী প্রতিনিধি:
বিয়ের প্রলোভনে ছাত্রলীগ নেত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে মামলার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, স্পেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাঈল হোসেন রায়হান (৩৫)। রোববার দুপুরে মামলা দায়েরের খবর পেয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সোমবার ভোর রাত ৪টায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে তার পিতাসহ এ নেতা। তবে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায় এই নেতা বর্তমানে ইতালিতে অবস্থান করছেন।
মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেত্রী (২৯) রোববার নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১এর জেলা জজ আবদুর রহিম এর আদালতে ভিকটিম নিজেই বাদী হয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিকবার ধর্ষণ ও পর্ণোগ্রাফি আইন ২০১২এর ৮(১)/(২) ধারায় এ মামলাটি দায়ের করেন।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রায়হান নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ নগর গ্রামের মোল্লা বাড়ীর মোঃ ইউসুফ আলীর ছেলে। ওই মামলায় ছাত্রলীগ নেতা রায়হান ছাড়াও তার পিতা মোঃ ইউসুফ আলী (৬৫), ভাই বাবু (৩৮) ও খালাতো বোন বেগমগঞ্জ উপজেলার সেতুভাঙ্গা এলাকার ফরাজি বাড়ীর মোঃ সবুজ ফরাজির স্ত্রী কলিকে (৩৫) আসামী করা হয়েছে।
আদালতে দায়ের করা অভিযোগ ও ভিকটিম ছাত্রলীগ নেত্রীর অভিযোগে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেত্রী (২৯) ও ছাত্রলীগ নেতা ইসমাঈল হোসেন রায়হানের পরিচয় থেকে গভীর সম্পর্ক ও শেষ পর্যন্ত প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। এরই মধ্যে বিয়ের প্রলোভন এবং বিয়ের পর ভিকটিমকে লন্ডন নিয়ে যাওয়ার প্রতারণা মূলক কথা বলে তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিক স্থানে নিয়ে কয়েকবার ধর্ষণ এবং ধর্ষণের ধারণকৃত ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখে রায়হান। এ ভিডিও চিত্র (ধারণকৃত) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে, আবার এসব আপত্তিকর দৃশ্য ডিলিট করে দেয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বারংবার ধর্ষণ, ২৫ লাখ টাকা চাঁদার দাবীর বিপরীতে ভিকটিম ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করার পরও পুনঃরায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে রায়হান। দাবীকৃত ওই টাকা ইসমাঈল হোসেন রায়হানকে না দিলে ভিকটিম ছাত্রলীগ নেত্রীর সকল আপত্তিকর ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে ২৩ জুন রোববার লন্ডন চলে যাবে বলে ভিকটিমকে হুমকি দেয়।
অনন্যোপায় হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত ২০জুন মামলা দায়ের করতে যায় ভিকটিম এ ছাত্রলীগ নেত্রী। কিন্তু পুলিশ মামলা গ্রহণ না করে তাকে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে বলে। পরে ২৩ জুন রোববার দুপুরে ভিকটিম ছাত্রলীগ নেত্রী নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১এ মামলাটি দায়ের করেন। আদালত ভিকটিমের অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটি রেকর্ড করে পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
রায়হানের বিরুদ্ধে দলীয় পদ-পদবী ব্যবহার করে পুলিশে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তাকে হয়রানী এবং তাদেরকে ভয় দেখিয়ে নানা ধরনের অনৈতিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম রেঞ্জের সাবেক এক ডিআইজি’র ভাগনে পরিচয় দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে শান্তিমূলক বদলীর হুমকি প্রদর্শন করে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে ধূর্ত রায়হানের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গত ২৭.০৪.২০১৮ তারিখে তৎকালিন ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এম জাকির হোসাইন যৌথ স্বাক্ষরে এক বছরের জন্য অনুমোদন দেয় স্পেন ছাত্রলীগের কমিটি। স্পেনে চাকুরিরত অবস্থায় ছাত্রলীগের পদ-পদবী ব্যবহার করে ইসমাঈল হোসেন রায়হান নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। এ সব প্রশ্ন উঠলে এবং নানা আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের টনক নড়ে। দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষার্থে গত ০৯.০৭.২০১৯ইং তারিখে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর যৌথ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠন বিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল। এরপরও ছাত্রলীগের ওই পদবী ব্যবহার করে রায়হান নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কাজ করে আসছিলেন।
স্পেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাঈল হোসেন রায়হানের মুঠোফোন (০১৮৩৬-১৬৫৩৮২) নাম্বারে তার বক্তব্যের জন্য সোমবার দুপুরে কল দেয়া হলে ফোনটি রিসিভ করেন জনৈকা মহিলা। তিনি উত্তেজিত হয়ে নাম্বারটি তার বলে দাবী করেন এবং রায়হান এ নাম্বারের সিমটি তার স্বামীকে দিয়েছেন বলেও দাবী করেন। এরপর রায়হানের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কলদিলে প্রথমে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। কিছু সময়পর তিনি নিজেই ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কল দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করেন। তবে মাদারীপুরের ছাত্রলীগ নেত্রীর সাথে কিভাবে তার সম্পর্ক হয় প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সাথে পরিচয় হয় এবং তার রেন্ট-এ কারের ব্যবসা থাকায় সেখান থেকে গাড়ী ভাড়া করে নিয়ে ভিকটিম মামলার বিবাদী রায়হানের বাড়ীতে এসেছে বলে স্বীকার করেন।