ঢাকা ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, পাঁচ শিশুসহ আহত-৬ মানবিক তারুণ্যের ৮ম যুব সম্মেলন ও এ্যাওয়ার্ড বিতরণ সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে থানায় অভিযোগ, পুলিশের তদন্তকালে বাদীর উপর হামলা, আহত ৪ হাসনাত-সারজিস ছাত্রলীগ থেকে গিয়ে নতুন দলে এসেছে: ইসমাইল সম্রাট কবিরহাটের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র শিরিন গার্ডেনে হামলার অভিযোগ, পুলিশসহ আহত ৭ সুধারামে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে জখম, অভিযোগ যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতকর্মীদের বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মালিকানা ছিনতাই করেও এনসিপি সংগঠন হিসেবে ব্যর্থ হয়েছে: নাছির Blind Amjad receives Eid gift from Tarique Zia জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দৃষ্টি হারানো আমজাদ পেলো তারেক জিয়ার ঈদ উপহার ভাড়াটিয়ার দোকানে তালা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

করোনা উপসর্গে মৃত্যু: লাশ রেখে পালালেন স্বজনরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:০০:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জুন ২০২০ ৩৮২ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফেনী প্রতিনিধি:

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে সাহাবউদ্দিন (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ভয়ে মরদেহ রেখে পালিয়েছেন স্বজনরা। রোববার (৩১ মে) রাত ৮টার দিকে মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামে তিনি নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।

মরদেহ রেখে পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

এদিকে খবর পেয়ে মতিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু ইসলামি আন্দোলনের করোনা রোগে দাফন টিমের লোকদের খবর দেন।

দাফন টিমের সদস্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পিপিই (পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) ও থানা থেকে মরদেহ রাখার জন্য একটি ব্যাগ সংগ্রহ করেন। রাত ১টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে সুনসান নীরবতা দেখা যায়।

গ্রামের মসজিদে রাখা লাশ বহনের খাট ব্যবহার না করার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয়রা। কবর খোঁড়ার কোদালও দিচ্ছেন না কেউ। মরদেহ গোসল করানোর জন্য সমাজের পর্দাও না দেয়ার ঘোষণা দেন সমাজপতিরা। পরে রাত ২টার দিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে ইসলামি আন্দোলনের করোনা রোগে দাফন টিমের লোকজন মৃত ব্যক্তির জানাজা ও দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।

জানা যায়, সোনাগাজীর মতিগঞ্জ ইউনিয়নের হোসেন ডিলার বাড়ির সাহাবউদ্দিন চট্টগ্রামের একটি পেট্রলপাম্পের ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৭-৮ দিন আগে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন তিনি। গত ২৭ মে তিনি করোনার উপসর্গ নিয়ে সপরিবারে চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। দু’দিন তিনি বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করালেও রোববার বিকালে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রদান করেন। সেদিন (রোববার) রাত ৮টার দিকে তিনি নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করলে তার বসতঘরের দ্বিতল ভবনের একটি কক্ষে মরদেহ রেখে পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যান। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু জানান, নিজের টাকায় কাফনের কাপড় কিনে, সমাজপতি, গ্রামের লোকদের অনেকটা বুঝিয়ে খাট ও পর্দার কাপড় সংগ্রহ করা হয়। রাত ২টার দিকে গ্রামপুলিশ ও ইসলামি আন্দোলনের লোকদের সঙ্গে নিয়ে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মৃত ব্যক্তির মরদেহ দাফন করা হয়।

তিনি বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত সাহাবউদ্দিনকে শেষ বিদায় জানাতে পরিবারের সদস্য, স্বজন ও বাড়ির লোকজন কেউ এগিয়ে আসেননি। সবাই পালিয়ে গেছেন। অথচ মৃত লোকটি পেট্রলপাম্পে কর্মরত থেকে চার ভাইকে প্রবাসে পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনটি মেয়ে বিয়ে দিয়ে জামাইদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিজেও বহু অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন। টাকাপয়সা রোজগার করে সারা জীবনের উপার্জন দিয়ে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। অথচ মহান আল্লাহ তার এমন একটি মৃত্যু দিয়েছেন শেষ বিদায়ে কোনো স্বজন তার পাশে নেই। এর চেয়ে হৃদয়বিদারক আর কি হতে পারে?

তিনি আরও বলেন, মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি কোনো শত্রুকেও যেন তিনি এমন মৃত্যু না দেন। এই মৃত্যু থেকে পৃথিবীর সব মানুষের শিক্ষা নেয়া উচিত। আসলে কার জন্য এই উপার্জন আর অর্থবিত্ত রেখে যাওয়া? করোনার এই মহামারীতে মানবতাও যেন আজ থমকে গেছে!

এ প্রসঙ্গে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উৎফল দাস জানান, রবিবার বিকালে করোনা উপসর্গে মৃত ব্যক্তির কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক
ট্যাগস :

করোনা উপসর্গে মৃত্যু: লাশ রেখে পালালেন স্বজনরা

আপডেট সময় : ০৭:০০:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জুন ২০২০

ফেনী প্রতিনিধি:

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে সাহাবউদ্দিন (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ভয়ে মরদেহ রেখে পালিয়েছেন স্বজনরা। রোববার (৩১ মে) রাত ৮টার দিকে মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামে তিনি নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।

মরদেহ রেখে পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

এদিকে খবর পেয়ে মতিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু ইসলামি আন্দোলনের করোনা রোগে দাফন টিমের লোকদের খবর দেন।

দাফন টিমের সদস্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পিপিই (পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) ও থানা থেকে মরদেহ রাখার জন্য একটি ব্যাগ সংগ্রহ করেন। রাত ১টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে সুনসান নীরবতা দেখা যায়।

গ্রামের মসজিদে রাখা লাশ বহনের খাট ব্যবহার না করার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয়রা। কবর খোঁড়ার কোদালও দিচ্ছেন না কেউ। মরদেহ গোসল করানোর জন্য সমাজের পর্দাও না দেয়ার ঘোষণা দেন সমাজপতিরা। পরে রাত ২টার দিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে ইসলামি আন্দোলনের করোনা রোগে দাফন টিমের লোকজন মৃত ব্যক্তির জানাজা ও দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।

জানা যায়, সোনাগাজীর মতিগঞ্জ ইউনিয়নের হোসেন ডিলার বাড়ির সাহাবউদ্দিন চট্টগ্রামের একটি পেট্রলপাম্পের ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৭-৮ দিন আগে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন তিনি। গত ২৭ মে তিনি করোনার উপসর্গ নিয়ে সপরিবারে চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। দু’দিন তিনি বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করালেও রোববার বিকালে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রদান করেন। সেদিন (রোববার) রাত ৮টার দিকে তিনি নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করলে তার বসতঘরের দ্বিতল ভবনের একটি কক্ষে মরদেহ রেখে পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যান। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু জানান, নিজের টাকায় কাফনের কাপড় কিনে, সমাজপতি, গ্রামের লোকদের অনেকটা বুঝিয়ে খাট ও পর্দার কাপড় সংগ্রহ করা হয়। রাত ২টার দিকে গ্রামপুলিশ ও ইসলামি আন্দোলনের লোকদের সঙ্গে নিয়ে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মৃত ব্যক্তির মরদেহ দাফন করা হয়।

তিনি বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত সাহাবউদ্দিনকে শেষ বিদায় জানাতে পরিবারের সদস্য, স্বজন ও বাড়ির লোকজন কেউ এগিয়ে আসেননি। সবাই পালিয়ে গেছেন। অথচ মৃত লোকটি পেট্রলপাম্পে কর্মরত থেকে চার ভাইকে প্রবাসে পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনটি মেয়ে বিয়ে দিয়ে জামাইদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিজেও বহু অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন। টাকাপয়সা রোজগার করে সারা জীবনের উপার্জন দিয়ে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। অথচ মহান আল্লাহ তার এমন একটি মৃত্যু দিয়েছেন শেষ বিদায়ে কোনো স্বজন তার পাশে নেই। এর চেয়ে হৃদয়বিদারক আর কি হতে পারে?

তিনি আরও বলেন, মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি কোনো শত্রুকেও যেন তিনি এমন মৃত্যু না দেন। এই মৃত্যু থেকে পৃথিবীর সব মানুষের শিক্ষা নেয়া উচিত। আসলে কার জন্য এই উপার্জন আর অর্থবিত্ত রেখে যাওয়া? করোনার এই মহামারীতে মানবতাও যেন আজ থমকে গেছে!

এ প্রসঙ্গে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উৎফল দাস জানান, রবিবার বিকালে করোনা উপসর্গে মৃত ব্যক্তির কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।