ঢাকা ০২:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

অবৈধ বালু উত্তোলনের হিড়িক, এলাকাবাসীর সড়ক অবরোধ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৪১:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২ ১২২২৭ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

 

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদীর ভিতরের অংশ থেকে অবাধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে অবৈধ বালু বহনকারী ট্রাক্টরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামীণ পাকা সড়ক গুলো। অবৈধ বালুর গাড়ি আটক করলে উপজেলার রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার কামাল (৪০) কে মারধর করে গাড়ি ছিনিয়ে নেয় বালু উত্তোলনকারীরা।

 

রোববার (১৭ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে চৌকিদারের ওপর হামলার প্রতিবাদে উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বামনী বাজার টু বাংলাবাজার সড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী।

 

রামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজীস সালেকীন রিমন অভিযোগ করে বলেন, ইতিমধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি অবৈধ বালু বহনকারী ট্রাক্টরে রামপুর ইউনিয়নের অনেক পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। একপর্যায়ে খবর নিয়ে জানলাম মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ও ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. আলী আজগর জাহাঙ্গীর ও তাঁর ভাই জালাল উদ্দিন ৬টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে গত ২ মাস ধরে রাতদিন ছোট ফেনী নদীর ভিতরের অংশ থেকে বালু উত্তোলন করছে। অবৈধ বালুবহনকারী ট্রাক্টরে পাকা সড়কের ক্ষতি হওয়ায় রোববার দুপুর ২টার দিকে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার কামাল আমার নির্দেশে রামপুর ইউনিয়নের বাঞ্ছারাম বাজারে অবৈধ দুটি বালুর ট্রাক্টর আটক করে। কিছুক্ষণ পরে চৌকিদার জানায় বালু উত্তোলনকারী জালাল, চৌকিদারকে মারধর করে তার থেকে চাবি নিয়ে গাড়ি নিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমি আরো ৩টি বালুবাহী ট্রাক্টর আটক করে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে আসি।

 

চেয়ারম্যান রিমন অভিযোগ করে আরো বলেন, দীর্ঘ দুই মাস থেকে অবৈধ ভাবে মুছাপুর ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছে। এ বালু উত্তোলন নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলেও প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধে কোন ভূমিকা রাখেনি। আমার প্রশ্ন প্রশাসন কি করতেছে। এরপর অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে এলাকাবাসী রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের পর্যটন এলাকা হিসেবে খ্যাত মুছাপুর ক্লোজারের প্রধান সড়ক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। জনগণের আকুতিতে তিনি এমন সিন্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান।

 

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ফলে এলাকার ফেনী নদীর পাশে থাকা পাকা সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি হাজার হাজার একর ফসলি জমি ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হবে। এর আগেও ছোট ফেনী নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পাকা সড়কে ভাঙ্গন দেখা দেয়। স্থায়ীভাবে এসব অপরিকল্পিত ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে মুছাপুর ক্লোজারে যাওয়ার পাকা সড়ক এবং এলাকার বিশাল অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. আলী আজগর জাহাঙ্গীর বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। বালু উত্তোলনের সঙ্গে তিনি জড়িত নয় বলে দাবি করেন।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী বলেন, বালু উত্তোলনের সঙ্গে তিনি জড়িত নেই। তবে তার ইউনিয়নের মুছাপুর ক্লোজার সংলগ্ন একটি পয়েন্ট থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হয় বলেও তিনি নিশ্চিত করেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বালু উত্তোলন করতে এখানে আসিনি। আমি জনগণের সেবা করতে এসেছি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহাবুবুর রহমান বলেন, যারা চৌকিদারকে মারধর করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলা হয়েছে। চৌকিদারকে মারার অধিকার কারো নেই। বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক
ট্যাগস :

অবৈধ বালু উত্তোলনের হিড়িক, এলাকাবাসীর সড়ক অবরোধ

আপডেট সময় : ০৯:৪১:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

 

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদীর ভিতরের অংশ থেকে অবাধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে অবৈধ বালু বহনকারী ট্রাক্টরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামীণ পাকা সড়ক গুলো। অবৈধ বালুর গাড়ি আটক করলে উপজেলার রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার কামাল (৪০) কে মারধর করে গাড়ি ছিনিয়ে নেয় বালু উত্তোলনকারীরা।

 

রোববার (১৭ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে চৌকিদারের ওপর হামলার প্রতিবাদে উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বামনী বাজার টু বাংলাবাজার সড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী।

 

রামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজীস সালেকীন রিমন অভিযোগ করে বলেন, ইতিমধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি অবৈধ বালু বহনকারী ট্রাক্টরে রামপুর ইউনিয়নের অনেক পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। একপর্যায়ে খবর নিয়ে জানলাম মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ও ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. আলী আজগর জাহাঙ্গীর ও তাঁর ভাই জালাল উদ্দিন ৬টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে গত ২ মাস ধরে রাতদিন ছোট ফেনী নদীর ভিতরের অংশ থেকে বালু উত্তোলন করছে। অবৈধ বালুবহনকারী ট্রাক্টরে পাকা সড়কের ক্ষতি হওয়ায় রোববার দুপুর ২টার দিকে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার কামাল আমার নির্দেশে রামপুর ইউনিয়নের বাঞ্ছারাম বাজারে অবৈধ দুটি বালুর ট্রাক্টর আটক করে। কিছুক্ষণ পরে চৌকিদার জানায় বালু উত্তোলনকারী জালাল, চৌকিদারকে মারধর করে তার থেকে চাবি নিয়ে গাড়ি নিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমি আরো ৩টি বালুবাহী ট্রাক্টর আটক করে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে আসি।

 

চেয়ারম্যান রিমন অভিযোগ করে আরো বলেন, দীর্ঘ দুই মাস থেকে অবৈধ ভাবে মুছাপুর ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছে। এ বালু উত্তোলন নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলেও প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধে কোন ভূমিকা রাখেনি। আমার প্রশ্ন প্রশাসন কি করতেছে। এরপর অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে এলাকাবাসী রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের পর্যটন এলাকা হিসেবে খ্যাত মুছাপুর ক্লোজারের প্রধান সড়ক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। জনগণের আকুতিতে তিনি এমন সিন্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান।

 

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ফলে এলাকার ফেনী নদীর পাশে থাকা পাকা সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি হাজার হাজার একর ফসলি জমি ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হবে। এর আগেও ছোট ফেনী নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পাকা সড়কে ভাঙ্গন দেখা দেয়। স্থায়ীভাবে এসব অপরিকল্পিত ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে মুছাপুর ক্লোজারে যাওয়ার পাকা সড়ক এবং এলাকার বিশাল অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. আলী আজগর জাহাঙ্গীর বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। বালু উত্তোলনের সঙ্গে তিনি জড়িত নয় বলে দাবি করেন।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী বলেন, বালু উত্তোলনের সঙ্গে তিনি জড়িত নেই। তবে তার ইউনিয়নের মুছাপুর ক্লোজার সংলগ্ন একটি পয়েন্ট থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হয় বলেও তিনি নিশ্চিত করেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বালু উত্তোলন করতে এখানে আসিনি। আমি জনগণের সেবা করতে এসেছি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহাবুবুর রহমান বলেন, যারা চৌকিদারকে মারধর করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলা হয়েছে। চৌকিদারকে মারার অধিকার কারো নেই। বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।