ঢাকা ১০:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

সেবা প্রত্যাশী নারীকে অশ্লীল গালাগালের ভিডিও ভাইরালে ক্লোজড এসআই রতন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:১৫:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ অক্টোবর ২০২২ ৯৪৭৬ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নোয়াখালী প্রতিনিধ:

 

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে রোঁস্তোরায় বৈঠক বসতে অসম্মতি জানালে সেবা প্রত্যাশী এক নারীকে (৫৭) পুলিশের উপ-পরিদর্শকের অশ্রাব্য-অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

 

এঘটনায় রোববার (১৬ অক্টোবর) রাতে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়াকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত (ক্লোজড) করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী সেতারা বেগম কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের আকবর হাজী বাড়ির মৃত আবুবক্কর ছিদ্দিকের স্ত্রী।

 

গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার প্রধান ফটকে ও মুঠোফোনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর দিন সকালে ভুক্তভোগী ওই নারীকে বাড়ি গিয়েও হুমকি ধমকি দিয়ে শাসিয়ে এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে বারণ করেন এসআই রতন।

 

ভুক্তভোগী ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, ৭ মাস আগে তার ছেলে নুরনবীকে (২৭) প্রতারণা করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সৌদি নিয়ে ৪লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেহের আলী কামলা বাড়ির সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলাম। কথা ছিল সাইফুল সৌদি নিয়ে আমার ছেলেকে আবাসিক হোটেলে চাকরি দিবে। বেতন হবে ১হাজার ৮০০শত রিয়াল। কিন্তু তিন মাস একটা রুমে রাখে চাকরি না দিয়ে। গত ৭ মাসেও সে আমার ছেলেকে কোন চাকরি দিতে পারেনি। একপর্যায়ে আকামা করার জন্য পুনরায় ১হাজার রিয়াল নেয়। এখানেও সাইফুল প্রতারণা করে আমার ছেলেকে খুরুজ লাগানো আকামা দেয়। এ কারণে কেউ তাকে আকামা দেখে কাজ দেয়না।

 

তিনি আরো জানান, এসব প্রতারণার অভিযোগ তুলে গত ১৫-২০ দিন আগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে বিবাদী করা হয় সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলামের মা-বাবা ও স্ত্রীকে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি এ অভিযোগটি তদন্ত করার দায়িত্ব দেন এসআই রতনকে। সমস্যার সমাধান করতে রতন আমাদের কাছে ৫হাজার টাকা দাবি করে। পরে তাকে ২হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকী টাকা পরে দেওয়ার কথা ছিল।

ওই নারী বলেন, গত শুক্রবার প্রথম বৈঠকে থানায় বিবাদী পক্ষের কেউ আসেনি। দ্বিতীয় বৈঠক বসার জন্য এসআই রতন বিবাদীদের বাড়িতে গিয়ে বৈঠকে বসার বিষয়ে অবহিত করে আসেন। তারপর গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে এসআই রতন বাদীকে ফোন দিয়ে জানায় থানায় কোন বৈঠক হবেনা। বৈঠক হবে বসুরহাট বাজারের হক হোটেলে। এ নিয়ে অভিযোগকারী নারী রোঁস্তোরায় গিয়ে বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই রতন ওই নারীকে মুঠোফোনে অশ্রাব্য-অশ্লীল ভাষায় বেজায় গালাগাল করেন। তখন মুঠোফোনে ওই নারী এসআই রতনকে জানায় থানায় অভিযোগ করেছি বৈঠকও থানায় হবে। এরপর এসআই তাকে থানার গেইটে আসতে বলে। সেবা প্রত্যাশী নারী থানার গেইটের ভিতরে প্রবেশ করলে পুনরায় সে ওই নারীকে বিশ্রী ভাষায় প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষের সামনে গালমন্দ করে। যা লেখার অযোগ্য। পরে ওই নারী কাঁদতে কাঁদতে থানা থেকে চলে যায়। এসআই রতনের অশ্রাব্য-অশ্লীল ভাষায় গালাগালের একটি অডিও রেকডিং ও ভিডিও এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষতি আছে।

 

ভুক্তভোগী অভিযোগ করে আরো বলেন, একজন মাকে তার ছেলের সামনে প্রকাশ্যে এভাবে কোন পুলিশ কর্মকর্তা গালিগালাজ করতে পারে। যা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায়না। ওই নারী আরো জানান তিনি আতঙ্কে গত দুদিন যাবত কিছুই খাননি। এ ঘটনায় তিনি এসআই রতনের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন বাংলাদেশ পুলিশ প্রধানের কাছে।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়া বলেন, ওই নারী থানায় কোন লিখিত অভিযোগ করেনি। তার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বিষয়টি সমাধান করতে চেয়েছিলেন। তবে হোটেলে বৈঠকে না যাওয়ায় তিনি রাগের মাথায় একটু উত্তোজিত হয়ে ওই নারীর সাথে এ ব্যবহার করেছিলেন বলে দাবি করেন। তবে ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে শাসানো হয়নি এবং টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

 

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়ার পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত (ক্লোজড) করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভুক্তভোগী নারী কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও সম্পর্কের কারণে বিষয়টি সমাধানে এসআই রতন তৎপর ছিল। কিন্তু গালিগালাজের যে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়েছে তা দুঃখজনক। গতকাল রাতেই তাকে ক্লোজড করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক
ট্যাগস :

সেবা প্রত্যাশী নারীকে অশ্লীল গালাগালের ভিডিও ভাইরালে ক্লোজড এসআই রতন

আপডেট সময় : ০৫:১৫:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ অক্টোবর ২০২২

নোয়াখালী প্রতিনিধ:

 

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে রোঁস্তোরায় বৈঠক বসতে অসম্মতি জানালে সেবা প্রত্যাশী এক নারীকে (৫৭) পুলিশের উপ-পরিদর্শকের অশ্রাব্য-অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

 

এঘটনায় রোববার (১৬ অক্টোবর) রাতে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়াকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত (ক্লোজড) করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী সেতারা বেগম কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের আকবর হাজী বাড়ির মৃত আবুবক্কর ছিদ্দিকের স্ত্রী।

 

গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার প্রধান ফটকে ও মুঠোফোনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর দিন সকালে ভুক্তভোগী ওই নারীকে বাড়ি গিয়েও হুমকি ধমকি দিয়ে শাসিয়ে এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে বারণ করেন এসআই রতন।

 

ভুক্তভোগী ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, ৭ মাস আগে তার ছেলে নুরনবীকে (২৭) প্রতারণা করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সৌদি নিয়ে ৪লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেহের আলী কামলা বাড়ির সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলাম। কথা ছিল সাইফুল সৌদি নিয়ে আমার ছেলেকে আবাসিক হোটেলে চাকরি দিবে। বেতন হবে ১হাজার ৮০০শত রিয়াল। কিন্তু তিন মাস একটা রুমে রাখে চাকরি না দিয়ে। গত ৭ মাসেও সে আমার ছেলেকে কোন চাকরি দিতে পারেনি। একপর্যায়ে আকামা করার জন্য পুনরায় ১হাজার রিয়াল নেয়। এখানেও সাইফুল প্রতারণা করে আমার ছেলেকে খুরুজ লাগানো আকামা দেয়। এ কারণে কেউ তাকে আকামা দেখে কাজ দেয়না।

 

তিনি আরো জানান, এসব প্রতারণার অভিযোগ তুলে গত ১৫-২০ দিন আগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে বিবাদী করা হয় সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলামের মা-বাবা ও স্ত্রীকে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি এ অভিযোগটি তদন্ত করার দায়িত্ব দেন এসআই রতনকে। সমস্যার সমাধান করতে রতন আমাদের কাছে ৫হাজার টাকা দাবি করে। পরে তাকে ২হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকী টাকা পরে দেওয়ার কথা ছিল।

ওই নারী বলেন, গত শুক্রবার প্রথম বৈঠকে থানায় বিবাদী পক্ষের কেউ আসেনি। দ্বিতীয় বৈঠক বসার জন্য এসআই রতন বিবাদীদের বাড়িতে গিয়ে বৈঠকে বসার বিষয়ে অবহিত করে আসেন। তারপর গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে এসআই রতন বাদীকে ফোন দিয়ে জানায় থানায় কোন বৈঠক হবেনা। বৈঠক হবে বসুরহাট বাজারের হক হোটেলে। এ নিয়ে অভিযোগকারী নারী রোঁস্তোরায় গিয়ে বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই রতন ওই নারীকে মুঠোফোনে অশ্রাব্য-অশ্লীল ভাষায় বেজায় গালাগাল করেন। তখন মুঠোফোনে ওই নারী এসআই রতনকে জানায় থানায় অভিযোগ করেছি বৈঠকও থানায় হবে। এরপর এসআই তাকে থানার গেইটে আসতে বলে। সেবা প্রত্যাশী নারী থানার গেইটের ভিতরে প্রবেশ করলে পুনরায় সে ওই নারীকে বিশ্রী ভাষায় প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষের সামনে গালমন্দ করে। যা লেখার অযোগ্য। পরে ওই নারী কাঁদতে কাঁদতে থানা থেকে চলে যায়। এসআই রতনের অশ্রাব্য-অশ্লীল ভাষায় গালাগালের একটি অডিও রেকডিং ও ভিডিও এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষতি আছে।

 

ভুক্তভোগী অভিযোগ করে আরো বলেন, একজন মাকে তার ছেলের সামনে প্রকাশ্যে এভাবে কোন পুলিশ কর্মকর্তা গালিগালাজ করতে পারে। যা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায়না। ওই নারী আরো জানান তিনি আতঙ্কে গত দুদিন যাবত কিছুই খাননি। এ ঘটনায় তিনি এসআই রতনের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন বাংলাদেশ পুলিশ প্রধানের কাছে।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়া বলেন, ওই নারী থানায় কোন লিখিত অভিযোগ করেনি। তার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বিষয়টি সমাধান করতে চেয়েছিলেন। তবে হোটেলে বৈঠকে না যাওয়ায় তিনি রাগের মাথায় একটু উত্তোজিত হয়ে ওই নারীর সাথে এ ব্যবহার করেছিলেন বলে দাবি করেন। তবে ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে শাসানো হয়নি এবং টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

 

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়ার পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত (ক্লোজড) করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভুক্তভোগী নারী কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও সম্পর্কের কারণে বিষয়টি সমাধানে এসআই রতন তৎপর ছিল। কিন্তু গালিগালাজের যে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়েছে তা দুঃখজনক। গতকাল রাতেই তাকে ক্লোজড করা হয়েছে।