ঢাকা ০১:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মালিকানা ছিনতাই করেও এনসিপি সংগঠন হিসেবে ব্যর্থ হয়েছে: নাছির Blind Amjad receives Eid gift from Tarique Zia জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দৃষ্টি হারানো আমজাদ পেলো তারেক জিয়ার ঈদ উপহার ভাড়াটিয়ার দোকানে তালা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা School student murdered in trivial incident: Police unravel mystery নোয়াখালীতে তুচ্ছ ঘটনায় স্কুল ছাত্র খুন: রহস্য উদঘাটন করল পুলিশ তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে কবিরহাটের ইতালি মার্কেটে পথচারীদের মাঝে ইফতার বিতরণ নিখোঁজের ২ দিন পর সেপটিক ট্যাংক থেকে স্কুল ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে কবিরহাটের পথচারীদের মাঝে ইফতার বিতরণ নিজ এলাকায় হামলার শিকার এনসিপি নেতা হান্নান মাসুদ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, আহত-১৫

লক্ষীপুরে লকডাউন মানতে বলায় স্বাস্থ্যকর্মীকে মারধর করার অভিযোগ সন্ত্রসী মুন্নার’বিরুদ্ধে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:০৭:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জুন ২০২০ ৩৬৭ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রতিবেদক::

লক্ষীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়ার এক ইউপি সদস্যের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তাঁর বাড়ি লকডাউন করে দেয় স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন। কিন্তু লকডাউন না মেনে ওই বাড়ির লোকজন হাটে-বাজারে ঘোরাফেরা করছেন। উল্টো বাড়ি লকডাউন করার কারণে স্থানীয় এক স্বাস্থ্যকর্মীকেও মারধর করেছেন ওই বাড়ির এক ছাত্রলীগ নেতা। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৩ মে সন্ধ্যায় হাজিরপাড়া বাজারে। এ ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন স্বাস্থ্যকর্মী মো. ফিরোজ (৩০)। অভিযুক্ত জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন মুন্না হাজিরপাড়া এলাকার করোনা আক্রান্ত রোগীর বাড়ির বাসিন্দা।পুলিশ সুত্রে জানাজায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নিজাম উদ্দিন মুন্না বিগত সময়ে একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধান ছিলেন। হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি। কয়েক বছর আগে তিনি অস্ত্রসহ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করেন।

স্বাস্থ্যকর্মী ফিরোজের উপর হামলার ঘটনায় থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে ওই বাড়ির হেজু ও মো. সুমন হোসেন নামে আরও দুই জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৯ মে হাজিরপাড়ার এক ইউপি সদস্যের দেহে করোনা করোনা শনাক্ত হলে ইউনিয়নের ইউসুফপুর গ্রামের কামার বাড়ি লকডাউন করে স্থানীয় প্রশাসন। এতে সহযোগীতা করে ওই এলাকার দায়িত্বরত স্থাস্থ্য সহকারী মো. ফিরোজ। বাড়ির আশেপাশে লাল পাতাকা টাঙ্গিয়ে দেন তিনি। এছাড়া চিকিৎসার জন্য আক্রান্ত ইউপি সদস্যকে সদর হসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর সংস্পর্শে এসে তাঁর মা করোনায় আক্রান্ত হন। তাকে বাড়িতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু লকডাউনকৃত বাড়িটি হাজিরপাড়া বাজার সংলগ্ন হওয়ায় ওই বাড়ির লোকজন লকডাউন ভঙ্গ করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে প্রতিনিয়ত হাট-বাজারে অবাধে চলাফেরা করতে থাকে। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে হাজিরপাড়াসহ আশপাশ এলাকা।

স্বাস্থ্যকর্মী ফিরোজ বলেন, ১৯ মে যখন ইউপি সদস্যের করোনা পজিটিভি রিপোর্ট আসে, তখন আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এবং হাজিরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যানের অনুরোধে আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে যাই। তাদের নির্দেশে আমি বাড়ির লোকজনকে লকডাউন মেনে চলার পরামর্শ দেই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ওই বাড়ির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সন্ত্রাসী মুন্না। ‘তাদের বাড়িতে কোন করোনা রোগী নেই’-এমন প্রচার চালিয়ে মুন্না এবং তাঁর বাড়ির লোকজন অবাধে চলাচল করে। ২৩ মে বিকেলে মুন্নার সাথে আমার হাজিরপাড়ার বাজারের একটি বিদ্যালয়ের মাঠে দেখা হয়। এ সময় সে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আমি তাদের বাড়িটি লকডাউনে সহায়তা করেছি- এমন অভিযোগ তুলে সে আমাকে মারধর করে। তখন স্থানীয় লোকজন এসে তাঁর হাত থেকে আমাকে উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগি ফিরোজ আলম বলেন, আমি শুধু আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। এই অপরাধে আমার উপর হামলা ও আমাকে গালমন্দ করা হয়েছে। আমি বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন, ইউপি চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। পরে আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দিই। কিন্তু মুন্না আমাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে।
হাজিরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল পাটওয়ারী বলেন, এই ঘটনা জানার পর আমি দু:খ প্রকাশ করছি এবং ভুক্তভোগীকে সাথে নিয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানা ও সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।

অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নিজাম উদ্দিন মুন্না মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, স¦াস্থ্যকর্মী ফিরোজ আলমের সাথে আমাদের বাড়ির লোকজনের তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। রাগের বসবতী হয়ে তাকে চড়-থাপ্পড় মারি। পরে এ ঘটনায় তাঁর কাছে দুঃখ প্রকাশ করি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়ির লকডাউনের বিষয়টি স্বাস্থ্যকর্মী ফিরোজ মাইকে এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে। তা কতটুকু আইনসঙ্গত? আমি এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে অভিযোগ দেব।

এ ব্যাপারে চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসীম উদ্দিন বলেন, হামলার ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। থানার এসআই শাহজালালকে অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রেদয়োন আরমান শাকিল বলেন, করোনা রোগীর বাড়ি লকডাউন নিশ্চিত করতে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করবেন। কিন্তু এ ব্যাপারে তাঁরা যদি বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে অভিযোগ পেলে অবশ্যই অপরাধীরেদর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা: আবদুল গাফ্ফার বলেন, এ বিষয়টি ভূক্তভোগী স্বাস্থ্যকর্মী আমাকে জানিয়েছে। আমি ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক
ট্যাগস :

লক্ষীপুরে লকডাউন মানতে বলায় স্বাস্থ্যকর্মীকে মারধর করার অভিযোগ সন্ত্রসী মুন্নার’বিরুদ্ধে

আপডেট সময় : ০৭:০৭:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জুন ২০২০

প্রতিবেদক::

লক্ষীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়ার এক ইউপি সদস্যের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তাঁর বাড়ি লকডাউন করে দেয় স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন। কিন্তু লকডাউন না মেনে ওই বাড়ির লোকজন হাটে-বাজারে ঘোরাফেরা করছেন। উল্টো বাড়ি লকডাউন করার কারণে স্থানীয় এক স্বাস্থ্যকর্মীকেও মারধর করেছেন ওই বাড়ির এক ছাত্রলীগ নেতা। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৩ মে সন্ধ্যায় হাজিরপাড়া বাজারে। এ ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন স্বাস্থ্যকর্মী মো. ফিরোজ (৩০)। অভিযুক্ত জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন মুন্না হাজিরপাড়া এলাকার করোনা আক্রান্ত রোগীর বাড়ির বাসিন্দা।পুলিশ সুত্রে জানাজায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নিজাম উদ্দিন মুন্না বিগত সময়ে একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধান ছিলেন। হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি। কয়েক বছর আগে তিনি অস্ত্রসহ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করেন।

স্বাস্থ্যকর্মী ফিরোজের উপর হামলার ঘটনায় থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে ওই বাড়ির হেজু ও মো. সুমন হোসেন নামে আরও দুই জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৯ মে হাজিরপাড়ার এক ইউপি সদস্যের দেহে করোনা করোনা শনাক্ত হলে ইউনিয়নের ইউসুফপুর গ্রামের কামার বাড়ি লকডাউন করে স্থানীয় প্রশাসন। এতে সহযোগীতা করে ওই এলাকার দায়িত্বরত স্থাস্থ্য সহকারী মো. ফিরোজ। বাড়ির আশেপাশে লাল পাতাকা টাঙ্গিয়ে দেন তিনি। এছাড়া চিকিৎসার জন্য আক্রান্ত ইউপি সদস্যকে সদর হসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর সংস্পর্শে এসে তাঁর মা করোনায় আক্রান্ত হন। তাকে বাড়িতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু লকডাউনকৃত বাড়িটি হাজিরপাড়া বাজার সংলগ্ন হওয়ায় ওই বাড়ির লোকজন লকডাউন ভঙ্গ করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে প্রতিনিয়ত হাট-বাজারে অবাধে চলাফেরা করতে থাকে। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে হাজিরপাড়াসহ আশপাশ এলাকা।

স্বাস্থ্যকর্মী ফিরোজ বলেন, ১৯ মে যখন ইউপি সদস্যের করোনা পজিটিভি রিপোর্ট আসে, তখন আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এবং হাজিরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যানের অনুরোধে আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে যাই। তাদের নির্দেশে আমি বাড়ির লোকজনকে লকডাউন মেনে চলার পরামর্শ দেই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ওই বাড়ির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সন্ত্রাসী মুন্না। ‘তাদের বাড়িতে কোন করোনা রোগী নেই’-এমন প্রচার চালিয়ে মুন্না এবং তাঁর বাড়ির লোকজন অবাধে চলাচল করে। ২৩ মে বিকেলে মুন্নার সাথে আমার হাজিরপাড়ার বাজারের একটি বিদ্যালয়ের মাঠে দেখা হয়। এ সময় সে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আমি তাদের বাড়িটি লকডাউনে সহায়তা করেছি- এমন অভিযোগ তুলে সে আমাকে মারধর করে। তখন স্থানীয় লোকজন এসে তাঁর হাত থেকে আমাকে উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগি ফিরোজ আলম বলেন, আমি শুধু আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। এই অপরাধে আমার উপর হামলা ও আমাকে গালমন্দ করা হয়েছে। আমি বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন, ইউপি চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। পরে আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দিই। কিন্তু মুন্না আমাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে।
হাজিরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল পাটওয়ারী বলেন, এই ঘটনা জানার পর আমি দু:খ প্রকাশ করছি এবং ভুক্তভোগীকে সাথে নিয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানা ও সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।

অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নিজাম উদ্দিন মুন্না মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, স¦াস্থ্যকর্মী ফিরোজ আলমের সাথে আমাদের বাড়ির লোকজনের তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। রাগের বসবতী হয়ে তাকে চড়-থাপ্পড় মারি। পরে এ ঘটনায় তাঁর কাছে দুঃখ প্রকাশ করি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়ির লকডাউনের বিষয়টি স্বাস্থ্যকর্মী ফিরোজ মাইকে এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে। তা কতটুকু আইনসঙ্গত? আমি এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে অভিযোগ দেব।

এ ব্যাপারে চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসীম উদ্দিন বলেন, হামলার ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। থানার এসআই শাহজালালকে অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রেদয়োন আরমান শাকিল বলেন, করোনা রোগীর বাড়ি লকডাউন নিশ্চিত করতে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করবেন। কিন্তু এ ব্যাপারে তাঁরা যদি বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে অভিযোগ পেলে অবশ্যই অপরাধীরেদর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা: আবদুল গাফ্ফার বলেন, এ বিষয়টি ভূক্তভোগী স্বাস্থ্যকর্মী আমাকে জানিয়েছে। আমি ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেছি।