ঢাকা ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, পাঁচ শিশুসহ আহত-৬ মানবিক তারুণ্যের ৮ম যুব সম্মেলন ও এ্যাওয়ার্ড বিতরণ সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে থানায় অভিযোগ, পুলিশের তদন্তকালে বাদীর উপর হামলা, আহত ৪ হাসনাত-সারজিস ছাত্রলীগ থেকে গিয়ে নতুন দলে এসেছে: ইসমাইল সম্রাট কবিরহাটের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র শিরিন গার্ডেনে হামলার অভিযোগ, পুলিশসহ আহত ৭ সুধারামে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে জখম, অভিযোগ যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতকর্মীদের বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মালিকানা ছিনতাই করেও এনসিপি সংগঠন হিসেবে ব্যর্থ হয়েছে: নাছির Blind Amjad receives Eid gift from Tarique Zia জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দৃষ্টি হারানো আমজাদ পেলো তারেক জিয়ার ঈদ উপহার ভাড়াটিয়ার দোকানে তালা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সুবর্ণচরে ব্যাংকারের বাড়ীতে হামলা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৫৯:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুন ২০২০ ২৯৩ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রতিবেদকঃ

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে কামাল হোসেন নামে এক ব্যাংকারের বাড়িতে সন্ত্রাসী কায়দায় লাঠিসোটা নিয়ে হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছেন স্থানীয় চরবাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সামচ্ছুজ্জামান নিজাম।

শুক্রবার বিকালে উপজেলার চরবাটায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত শিক্ষক বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সুবর্ণচর শাখার সভাপতি।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ব্যাংকার কামাল হোসেনের চার শতক জায়গা ব্যবহার করে আসছেন পাশের জামাল উদ্দিন। এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে ঝগড়া লেগে ছিল। শুক্রবার বিকেলে ওই জায়গা নিয়ে পুনরায় জামালের স্ত্রীর সঙ্গে ব্যাংকারের স্ত্রীর কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে জামাল তার আত্মীয় স্থানীয় চরবাটা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সামচ্ছুজ্জামান নিজামকে বিষয়টি জানান। এ সময় তিনি ব্যাংকারের স্ত্রীকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় ফোনে গালি দেন। পরে ব্যাংকারের স্ত্রী তাকে কেন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে বিষয়টি জানতে স্থানীয় কাজল মার্কেট এলাকায় দেখা করেন। এ সময় তিনি উল্টো ব্যাংকারের স্ত্রী ও তার ছেলেকে মারধর করেন। এ সময় ব্যাংকারের ছেলের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের ধস্তাধস্তি হয় এবং মারমুখী শিক্ষককে প্রতিহতের চেষ্টা করেন। পরে ব্যাংকারের ছেলে ও স্ত্রী তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর পুনরায় প্রধান শিক্ষক নিজাম আরও কিছু লোকজনকে নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় নিজাম নিজে লাঠি হাতে ভাঙচুর এবং ব্যাংকারের স্ত্রী ও ছেলেকে মারধর করেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও স্থানীয় এক যুবক তার ফেসবুকে পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষক নিজাম লাঠি হাতে জানালার কাচ ভাঙচুর করছেন। তিনি অকথ্য ভাষায় চিৎকার করে গালিগালাজ ও হুমকি দেন। এ সময় পুরো বাড়িতে আতঙ্ক দেখা দেয়। শিশুরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কান্না করতে থাকে।

ফেসবুকে হামলার ভিডিও পোস্টকারী ও কমেন্টকারীরা ওই শিক্ষকের বিচার দাবি করেন। তারা বলেন, একজন শিক্ষক যদি সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালায় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে।

শেখ আহমেদ নামে একজন বলেন, কেউ যদি অন্যায় করে, তাহলে সমাধান আছে। এভাবে মাস্তানের মত জঘন্যতম কাজ করা ঠিক হয়নি।

সপ্নীল ফারুক নামে একজন বলেন, শিক্ষক নামের কলঙ্ক। সমস্যা হলে সমাধান আছে, কিন্তু কারো বাড়িতে হামলা করার নিয়ম নেই।

মনির আহমেদ নামে একজন বলেন, শিক্ষক হচ্ছে সমাজের দর্পন, শিক্ষক হচ্ছে মানুষ গড়ার কারিগর। সেই শিক্ষক যদি হাতে দেশীয় অস্ত্র ও সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে অন্যের বসত বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা চালায়, তা শুধু ওই শিক্ষকই নয় পুরো শিক্ষক সমাজকে কলঙ্কিত করে। তাই এরকম সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোককে সব সাংগঠনিক সকল পদ থেকে বহিষ্কার করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরি।

মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, দুর্জন বিদ্যান হলেও পরিত্যাজ্য। অপরাধ যাই হোক, ঘটনার প্রেক্ষাপট যাই হোক- একজন শিক্ষকের কাছ থেকে কেউ এমন আচরণ আশা করে না।

এ ঘটনার পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, হামলার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর একাধিক লোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। কেউ কেউ নিজের আগ্রহে আমাকে নক করেছেন। শিক্ষক নিজামের ব্যক্তিচরিত্র নিয়ে অবিশ্বাস্য অভিযোগ শুনলাম। তার শিকার নারীরাও অভিযোগ করেছেন। শিক্ষক যদি হন, নারী লোলুপ আর কী বলার থাকে। তার নারী কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না কেউ।

এ ঘটনায় হামলার শিকার ওই ব্যাংকার থানায় অভিযোগ করেছেন। এরপর অভিযুক্ত শিক্ষক হামলা করে উল্টো হামলার শিকার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চরজব্বার থানার ওসি সাহেদ উদ্দিন। তিনি বলেন, উভয় পক্ষ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্যাংকার কামাল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা করলে একজন উপ-পরিদর্শক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং তাদের রোববার ভূঞারহাট ফাঁড়ি থানায় যেতে বলেন। তবে তিনি থানায় যেতে রাজি হননি। তিনি বলেন, মামলা দিয়েছে, মামলার গতিতে চলবে। সেখানে সমাধানের কিছু নেই।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক মো. সামচ্ছুজ্জামান নিজাম বলেন, স্থানীয় এক নারীর পারিবারিক বিরোধ তিনিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সমাধান করে দেন। তার জের ধরে ব্যাংকারের স্ত্রী তার গায়ে জুতা ছুড়ে মারেন। এমন ঘটনায় স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে কামাল উদ্দিনের বাড়িতে যান। তিনিও নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে লাঠি হাতে নিয়েছেন মাত্র। তবে কোনো ভাঙচুর করেননি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সুবর্ণচরে ব্যাংকারের বাড়ীতে হামলা

আপডেট সময় : ০৯:৫৯:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুন ২০২০

প্রতিবেদকঃ

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে কামাল হোসেন নামে এক ব্যাংকারের বাড়িতে সন্ত্রাসী কায়দায় লাঠিসোটা নিয়ে হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছেন স্থানীয় চরবাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সামচ্ছুজ্জামান নিজাম।

শুক্রবার বিকালে উপজেলার চরবাটায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত শিক্ষক বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সুবর্ণচর শাখার সভাপতি।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ব্যাংকার কামাল হোসেনের চার শতক জায়গা ব্যবহার করে আসছেন পাশের জামাল উদ্দিন। এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে ঝগড়া লেগে ছিল। শুক্রবার বিকেলে ওই জায়গা নিয়ে পুনরায় জামালের স্ত্রীর সঙ্গে ব্যাংকারের স্ত্রীর কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে জামাল তার আত্মীয় স্থানীয় চরবাটা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সামচ্ছুজ্জামান নিজামকে বিষয়টি জানান। এ সময় তিনি ব্যাংকারের স্ত্রীকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় ফোনে গালি দেন। পরে ব্যাংকারের স্ত্রী তাকে কেন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে বিষয়টি জানতে স্থানীয় কাজল মার্কেট এলাকায় দেখা করেন। এ সময় তিনি উল্টো ব্যাংকারের স্ত্রী ও তার ছেলেকে মারধর করেন। এ সময় ব্যাংকারের ছেলের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের ধস্তাধস্তি হয় এবং মারমুখী শিক্ষককে প্রতিহতের চেষ্টা করেন। পরে ব্যাংকারের ছেলে ও স্ত্রী তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর পুনরায় প্রধান শিক্ষক নিজাম আরও কিছু লোকজনকে নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় নিজাম নিজে লাঠি হাতে ভাঙচুর এবং ব্যাংকারের স্ত্রী ও ছেলেকে মারধর করেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও স্থানীয় এক যুবক তার ফেসবুকে পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষক নিজাম লাঠি হাতে জানালার কাচ ভাঙচুর করছেন। তিনি অকথ্য ভাষায় চিৎকার করে গালিগালাজ ও হুমকি দেন। এ সময় পুরো বাড়িতে আতঙ্ক দেখা দেয়। শিশুরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কান্না করতে থাকে।

ফেসবুকে হামলার ভিডিও পোস্টকারী ও কমেন্টকারীরা ওই শিক্ষকের বিচার দাবি করেন। তারা বলেন, একজন শিক্ষক যদি সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালায় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে।

শেখ আহমেদ নামে একজন বলেন, কেউ যদি অন্যায় করে, তাহলে সমাধান আছে। এভাবে মাস্তানের মত জঘন্যতম কাজ করা ঠিক হয়নি।

সপ্নীল ফারুক নামে একজন বলেন, শিক্ষক নামের কলঙ্ক। সমস্যা হলে সমাধান আছে, কিন্তু কারো বাড়িতে হামলা করার নিয়ম নেই।

মনির আহমেদ নামে একজন বলেন, শিক্ষক হচ্ছে সমাজের দর্পন, শিক্ষক হচ্ছে মানুষ গড়ার কারিগর। সেই শিক্ষক যদি হাতে দেশীয় অস্ত্র ও সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে অন্যের বসত বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা চালায়, তা শুধু ওই শিক্ষকই নয় পুরো শিক্ষক সমাজকে কলঙ্কিত করে। তাই এরকম সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোককে সব সাংগঠনিক সকল পদ থেকে বহিষ্কার করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরি।

মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, দুর্জন বিদ্যান হলেও পরিত্যাজ্য। অপরাধ যাই হোক, ঘটনার প্রেক্ষাপট যাই হোক- একজন শিক্ষকের কাছ থেকে কেউ এমন আচরণ আশা করে না।

এ ঘটনার পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, হামলার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর একাধিক লোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। কেউ কেউ নিজের আগ্রহে আমাকে নক করেছেন। শিক্ষক নিজামের ব্যক্তিচরিত্র নিয়ে অবিশ্বাস্য অভিযোগ শুনলাম। তার শিকার নারীরাও অভিযোগ করেছেন। শিক্ষক যদি হন, নারী লোলুপ আর কী বলার থাকে। তার নারী কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না কেউ।

এ ঘটনায় হামলার শিকার ওই ব্যাংকার থানায় অভিযোগ করেছেন। এরপর অভিযুক্ত শিক্ষক হামলা করে উল্টো হামলার শিকার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চরজব্বার থানার ওসি সাহেদ উদ্দিন। তিনি বলেন, উভয় পক্ষ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্যাংকার কামাল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা করলে একজন উপ-পরিদর্শক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং তাদের রোববার ভূঞারহাট ফাঁড়ি থানায় যেতে বলেন। তবে তিনি থানায় যেতে রাজি হননি। তিনি বলেন, মামলা দিয়েছে, মামলার গতিতে চলবে। সেখানে সমাধানের কিছু নেই।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক মো. সামচ্ছুজ্জামান নিজাম বলেন, স্থানীয় এক নারীর পারিবারিক বিরোধ তিনিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সমাধান করে দেন। তার জের ধরে ব্যাংকারের স্ত্রী তার গায়ে জুতা ছুড়ে মারেন। এমন ঘটনায় স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে কামাল উদ্দিনের বাড়িতে যান। তিনিও নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে লাঠি হাতে নিয়েছেন মাত্র। তবে কোনো ভাঙচুর করেননি।