ঢাকা ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, পাঁচ শিশুসহ আহত-৬ মানবিক তারুণ্যের ৮ম যুব সম্মেলন ও এ্যাওয়ার্ড বিতরণ সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে থানায় অভিযোগ, পুলিশের তদন্তকালে বাদীর উপর হামলা, আহত ৪ হাসনাত-সারজিস ছাত্রলীগ থেকে গিয়ে নতুন দলে এসেছে: ইসমাইল সম্রাট কবিরহাটের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র শিরিন গার্ডেনে হামলার অভিযোগ, পুলিশসহ আহত ৭ সুধারামে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে জখম, অভিযোগ যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতকর্মীদের বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মালিকানা ছিনতাই করেও এনসিপি সংগঠন হিসেবে ব্যর্থ হয়েছে: নাছির Blind Amjad receives Eid gift from Tarique Zia জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দৃষ্টি হারানো আমজাদ পেলো তারেক জিয়ার ঈদ উপহার ভাড়াটিয়ার দোকানে তালা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের আক্রমণের মুখে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:১২:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মে ২০২০ ৮২৫ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

এনকে বার্তা ডেস্ক::

কিন্তু উগ্রপন্থীদের মূল আপত্তির বিষয়, সংগঠনটি রমজান মাসে খাবার বিতরণ করছে যাতে মানুষ হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত হয়

সংগঠনের নামে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের অপপ্রচারের কারণে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

উগ্রপন্থীদের দাবি, বিদ্যানন্দ হিন্দু নাম এবং প্রতিষ্ঠাতা সেই ধর্মেরই অনুসারী।

কিন্তু উগ্রপন্থীদের মূল আপত্তির বিষয়, সংগঠনটি রমজান মাসে খাবার বিতরণ করছে যাতে মানুষ হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত হয়।

যদিও সংগঠনটির ৮০% স্বেচ্ছাসেবীই ইসলাম ধর্মের অনুসারী।

গত দুই বছর ধরে সংগঠনটি ধর্মীয় কারণেই আক্রমণের শিকার হচ্ছিলো।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শুরু হলে, কিশোর দাশ অনুদান পেয়ে দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছিলেন।

কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় আক্রমণের কারণে তার কাজ চালিয়ে যেতে পারছিলেন না। তাই মঙ্গলবার সংগঠনের প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ঢাকা বিভাগীয় শাখা ব্যবস্থাপক সালামান খান ইয়াসিন ঢাকা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

যদিও কোভিড-১৯ প্রকল্পটিতে জোর দিতে সংগঠনটির নির্বাহী কমিটি কিশোর দাশের পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেনি।

তানিয়া ইসলাম তন্বী নামে সংগঠনটির একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কিশোরের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে কিনা, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনিই সংগঠনের প্রধান থাকবেন।

তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা গুজব ছড়াচ্ছে। তারা বলছে, আমরা মুসলমানদের খাবারের মধ্যে গোবর মিশিয়ে দিচ্ছি যাতে তাদের ধর্ম নষ্ট হয়।

আরও পড়ুন – পোস্টারের অভূতপূর্ব ব্যবহার, পরিবেশ রক্ষায় ‘বিদ্যানন্দ’

সালমান খান বলেন, “প্রতিষ্ঠানটিতে ঘিরে ২০১৩ সাল থেকেই তার আবেগ এবং ভালবাসা রয়েছে। তিনি এই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, যদিও তিনি দু’বছর আগে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।”

প্রতিবছর রমজানে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন হাজারো মানুষকে ইফতার ও সেহরির খাবার প্রদান করে আসছে।

ভাত, মাছ, মাংস এবং শাকসব্জির সমৃদ্ধ খাবারের প্যাকেট রাস্তায় বসবাসকারী শিশু, ভিক্ষুক, প্রবীণ ব্যক্তি এবং শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের দেওয়া হয় যারা রাস্তায় বা স্টেশনগুলোতে বাস করে। এসব ব্যক্তিদের খাবারের নিয়মিত সংস্থান করে আসছে সংগঠনটি।

সালমান বলেন, “আমরা সকল ধর্মের মানুষের কথা মাথায় রেখেই খাবার প্রস্তুত করি। এখানে মুসলিম স্বেচ্ছাসেবীরা নিজ হাতে খাবার রান্না করেন।”

“তবে কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এটিকে একটি ‘ইসকন’ সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করতে চেষ্টা করে। তবে আমরা ভেঙে পড়িনি। কিন্তু কিশোর তার মা-বাবা ও বাচ্চাদের নিতে নেতিবাচক কথা মেনে নিতে পারেননি” যোগ করেন সালমান।

সংগঠনের বিবৃতিতে মতে, কিশোর সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে কাজ করতে চেয়েছেন।

“বিদ্যানন্দ” নামটি দিয়েছেন এক মুসলমান ব্র্যান্ড এক্সপার্ট। “আনন্দের মাধ্যমে বিদ্যা অর্জন” স্লোগানের সাথে মিল রেখে তিনি নামটি দিয়েছিলেন। অনেকেই এটাকে ব্যক্তির নাম থেকে ভেবে ভুল করেন।

বিদ্যানন্দের প্রবাসী উদ্যোক্তা সশরীরে খুব অল্পই সময় দিতে পারেন। ৯০% মুসলিম স্বেচ্ছাসেবকরাই চালিয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবুও উদ্যোক্তার ধর্ম পরিচয়ে অনেকেই অপপ্রচার চালায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে। যাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কার্যক্রম, অনুদানের গতি।

এক বছর আগে পেরুতে বসবাসকালে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর একটি সাক্ষাতকারে ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে তিনি শৈশবে সংগ্রাম করেছিলেন।

তিনি এমন একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে কোনো শিশু কষ্ট ভোগ করবে না বা না খেয়ে কেউ ঘুমাতে যাবে না।

প্রসঙ্গত, কিশোর কুমার দাশ ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির তার কার্যক্রমের মাধ্যমে ডালপালা বিস্তার করতে থাকে। সর্বশেষ ২০২০ সালে খাগড়াছড়িতে ১২তম শাখা চালু করা হয়। এই সংগঠনটি প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু, দরিদ্র ও অসচ্ছল শিশুর মৌলিক শিক্ষা, এক টাকায় খাবার, চিকিৎসা ও আইনসেবা দিয়ে আসছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক
ট্যাগস :

ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের আক্রমণের মুখে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ

আপডেট সময় : ১০:১২:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মে ২০২০

এনকে বার্তা ডেস্ক::

কিন্তু উগ্রপন্থীদের মূল আপত্তির বিষয়, সংগঠনটি রমজান মাসে খাবার বিতরণ করছে যাতে মানুষ হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত হয়

সংগঠনের নামে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের অপপ্রচারের কারণে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

উগ্রপন্থীদের দাবি, বিদ্যানন্দ হিন্দু নাম এবং প্রতিষ্ঠাতা সেই ধর্মেরই অনুসারী।

কিন্তু উগ্রপন্থীদের মূল আপত্তির বিষয়, সংগঠনটি রমজান মাসে খাবার বিতরণ করছে যাতে মানুষ হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত হয়।

যদিও সংগঠনটির ৮০% স্বেচ্ছাসেবীই ইসলাম ধর্মের অনুসারী।

গত দুই বছর ধরে সংগঠনটি ধর্মীয় কারণেই আক্রমণের শিকার হচ্ছিলো।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শুরু হলে, কিশোর দাশ অনুদান পেয়ে দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছিলেন।

কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় আক্রমণের কারণে তার কাজ চালিয়ে যেতে পারছিলেন না। তাই মঙ্গলবার সংগঠনের প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ঢাকা বিভাগীয় শাখা ব্যবস্থাপক সালামান খান ইয়াসিন ঢাকা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

যদিও কোভিড-১৯ প্রকল্পটিতে জোর দিতে সংগঠনটির নির্বাহী কমিটি কিশোর দাশের পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেনি।

তানিয়া ইসলাম তন্বী নামে সংগঠনটির একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কিশোরের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে কিনা, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনিই সংগঠনের প্রধান থাকবেন।

তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা গুজব ছড়াচ্ছে। তারা বলছে, আমরা মুসলমানদের খাবারের মধ্যে গোবর মিশিয়ে দিচ্ছি যাতে তাদের ধর্ম নষ্ট হয়।

আরও পড়ুন – পোস্টারের অভূতপূর্ব ব্যবহার, পরিবেশ রক্ষায় ‘বিদ্যানন্দ’

সালমান খান বলেন, “প্রতিষ্ঠানটিতে ঘিরে ২০১৩ সাল থেকেই তার আবেগ এবং ভালবাসা রয়েছে। তিনি এই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, যদিও তিনি দু’বছর আগে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।”

প্রতিবছর রমজানে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন হাজারো মানুষকে ইফতার ও সেহরির খাবার প্রদান করে আসছে।

ভাত, মাছ, মাংস এবং শাকসব্জির সমৃদ্ধ খাবারের প্যাকেট রাস্তায় বসবাসকারী শিশু, ভিক্ষুক, প্রবীণ ব্যক্তি এবং শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের দেওয়া হয় যারা রাস্তায় বা স্টেশনগুলোতে বাস করে। এসব ব্যক্তিদের খাবারের নিয়মিত সংস্থান করে আসছে সংগঠনটি।

সালমান বলেন, “আমরা সকল ধর্মের মানুষের কথা মাথায় রেখেই খাবার প্রস্তুত করি। এখানে মুসলিম স্বেচ্ছাসেবীরা নিজ হাতে খাবার রান্না করেন।”

“তবে কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এটিকে একটি ‘ইসকন’ সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করতে চেষ্টা করে। তবে আমরা ভেঙে পড়িনি। কিন্তু কিশোর তার মা-বাবা ও বাচ্চাদের নিতে নেতিবাচক কথা মেনে নিতে পারেননি” যোগ করেন সালমান।

সংগঠনের বিবৃতিতে মতে, কিশোর সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে কাজ করতে চেয়েছেন।

“বিদ্যানন্দ” নামটি দিয়েছেন এক মুসলমান ব্র্যান্ড এক্সপার্ট। “আনন্দের মাধ্যমে বিদ্যা অর্জন” স্লোগানের সাথে মিল রেখে তিনি নামটি দিয়েছিলেন। অনেকেই এটাকে ব্যক্তির নাম থেকে ভেবে ভুল করেন।

বিদ্যানন্দের প্রবাসী উদ্যোক্তা সশরীরে খুব অল্পই সময় দিতে পারেন। ৯০% মুসলিম স্বেচ্ছাসেবকরাই চালিয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবুও উদ্যোক্তার ধর্ম পরিচয়ে অনেকেই অপপ্রচার চালায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে। যাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কার্যক্রম, অনুদানের গতি।

এক বছর আগে পেরুতে বসবাসকালে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর একটি সাক্ষাতকারে ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে তিনি শৈশবে সংগ্রাম করেছিলেন।

তিনি এমন একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে কোনো শিশু কষ্ট ভোগ করবে না বা না খেয়ে কেউ ঘুমাতে যাবে না।

প্রসঙ্গত, কিশোর কুমার দাশ ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির তার কার্যক্রমের মাধ্যমে ডালপালা বিস্তার করতে থাকে। সর্বশেষ ২০২০ সালে খাগড়াছড়িতে ১২তম শাখা চালু করা হয়। এই সংগঠনটি প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু, দরিদ্র ও অসচ্ছল শিশুর মৌলিক শিক্ষা, এক টাকায় খাবার, চিকিৎসা ও আইনসেবা দিয়ে আসছে।