আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮৮ রানের ব্যবধানে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠের এই সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজও নিশ্চিত করেছে তামিম ইকবালের দল। পাশাপাশি আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে টাইগাররা।
২০২৩ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত এই ওয়ানডে সুপার লিগে ইতোমধ্যেই ১৪ ম্যাচ খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ। এ যাত্রায় মাঝ পথে এসে ৪ হারের বিপরীতে বাংলাদেশের জয় ১০ ম্যাচে। এর ফলে পয়েন্ট টেবিলের প্রথম দল হিসেবে ১০০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে টাইগাররা।
এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইংল্যান্ড। ১৫ ম্যাচে ইংলিশদের ৯ জয় আর ৫ হারের পাশাপাশি পরিত্যাক্ত হয়েছে একটি ম্যাচ। সবমিলিয়ে ৯৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে ইংল্যান্ড। ১২ ম্যাচ থেকে ৭৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে ভারত।
চট্টলার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টাইগারদের পেস তোপে ১৬ রান তুলতেই দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে রশিদ খানরা। আফগানদের দুটি উইকেটই পড়ে বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলামের কল্যাণে। এ পেসারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে আফিফ হোসেন ধ্রুবর থ্রো-ইনে রানআউটের শিকার হন রিয়াজ হাসান। এরপর ওয়ানডাউনে খেলতে নামা হাশমতউল্লাহ শহীদিকেও সাজঘরে ফেরান তিনি। মুশফিকের হাতে ধরা পড়েন আফগান অধিনায়ক। দুজন মিলে স্কোর বোর্ডে যোগ করেন মাত্র ৬ রান।
ওপেনার রহমতউল্লাহ চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও অন্য প্রান্তে নার্ভ ধরে রাখতে পারেননি আজমতউল্লাহ উমরজাই। সাকিবের সুইয়িংয়ে ব্যাট চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হন তিনি, তৎক্ষণাত মুশফিক বল গ্লাভসবন্ধী করেই আফগান ব্যাটারের স্টাম্প ভেঙে ফেলেন। ৯ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেন উমরজাই। তিন উইকেট হারানোর পর ওপেনার রহমত শাহ ও নাজিবুল্লাহ জাদরান মিলে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠেন। এক-দুই রানের পাশাপাশি প্রায় প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন তারা। ১৩তম ওভারে অর্ধশতক পূর্ণ হয় দলের। মেহেদী হাসান মিরাজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউর শিকার হন নাজিবুল্লাহ। দ্রুতই রিভিউয়ের আবেদন করেন তিনি। রিভিউয়ে দেখা যায় নাজিবুল্লার আত্মবিশ্বাসই ছিল সঠিক। রেফারিও সিদ্ধান্ত বদল করেন, আউট হননি জাদরান।
এরপর ঘটে এক অবাক করা ঘটনা। ক্রিজের স্ট্রাইক প্রান্তে ছিলেন নাজিবুল্লাহ জাদরান, নন স্ট্রাইকে রহমত শাহ। সাকিবের পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে সাকিবের বলে স্ট্রেট খেলে রান নিতে চান জাদরান। অন্যপ্রান্তে বল সাকিবের হাতের কাছ দিয়ে চলে যায় স্টাম্পে, রহমত শাহ তখন ছিলেন দাগের বাইরে। সাকিব আউটের আবেদনও করেন, পরক্ষণে তিনি আবার রেফারিকে বোঝাচ্ছিলেন যে আউট হয়নি, আদতে বলই যে তার হাতে লাগেনি।
রহমত শাহ ও নাজিবুল্লাহ জাদরান মিলে ভয় জাগিয়ে তুলছিলেন টাইগার শিবিরে। সেই ভয় কাটে তাসকিন আহসেদের সুইংয়ে। ফিরে গেছেন রহমত, কিছু বুঝে ওঠার আগেই নেই তার স্টাম্পের বেল। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে নাজিবুল্লাহকে নিয়ে ৮৯ রানের জুটি গড়েন তিনি। ৭১ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৫২ রান। এক ওভার বিরতিতে তাসকিন ফেরান ৫৪ রান করা নাজিবুল্লাহকেও। এরপর যেন কিছু সময়ের জন্য তাসকিনের দেহে ভর করেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি লেগ স্পিনার ইমরান তাহির। আফগান তারকার উইকেট পেয়েই তাহিরের চিরপরিচিত ঢংয়ে ভোঁ দৌড় দেন ডানহাতি পেসার।
গুরবাজ সাকিবের বল পিঠিয়ে খেলতে গিয়ে আউট হন বল স্টাম্পে লেগে। বাকিদের মধ্যে মোহাম্মদ নবিকে মেহেদী হাসান মিরাজ, রশিদ খানকে মুস্তাফিজুর, মুজিব উর রহমানকে মাহমুদউল্লাহ ও ফজল হককে আফিফ হোসেন আউট করেন। নবি ৩২, রশিদ ২৯ ও মুজিব ৮ রান করে তোলেন। ফজল হক নামের পাশে কোনো রানই যোগ করতে পারেননি। বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন সাকিব ও তাসকিন।
এর আগে লিটন দাসের পঞ্চম ওয়ানডে শতক ও মুশফিকুর রহিমের ৮৫ রানে ভর করে ৩০০ পার করে বাংলাদেশ। ৪ উইকেট হারিয়ে টাইগার বাহিনী তুলে ৩০৬ রান। লিটন করেন ১৩৬।