এনকে বার্তা ডেস্ক::
এপ্রিলের ৩ তারিখ প্রথম একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাপারসনের করোনায় আক্রান্তের খবর আসে। এর পর এক মাস ২৪ দিনে দুই শতাধিক সংবাদকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারাও গেছেন একজন। সে সঙ্গে করেনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও তিন জন।
বুধবার (২৭ মে) দুপুর দেড়টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ ‘আমাদের গণমাধ্যম-আমাদের অধিকার’ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গ্রুপটির কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে ৭০টি গণমাধ্যমের ২০১ জন সংবাদকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ৪২ জন সংবাদকর্মী।
এরইমধ্যে গত ২৯ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে দৈনিক সময়ের আলোর নগর সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খোকনের মৃত্যু হয়। এরপর গত ৭ মে একই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সাব-এডিটর মাহমুদুল হাকিম অপু করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান। এছাড়া করোনার উপসর্গ (শ্বাসকষ্ট) নিয়ে একই দিন ভোরের কাগজের ক্রাইম রিপোর্টার আসলাম রহমানের মৃত্যু হয়। তবে আসলাম রহমানের মৃত্যুর আগে করোনা টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। অন্যজন হলেন বাংলাদেশের খবরের ফটো সাংবাদিক মিজানুর রহমান।
‘আমাদের গণমাধ্যম-আমাদের অধিকার’ গ্রুপের প্রধান সাংবাদিক আহম্মদ ফয়েজ বলেন, আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে এবং সরাসরি আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এসব তথ্য পাচ্ছি। ঢাকার বাইরে থেকেও বিভিন্ন জন তথ্য দিয়ে সহায়তা করছেন। এই তথ্যগুলো অবশ্যই ক্রস চেক করার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। তবে অনেকই গোপন রাখেন বলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে আমাদের ধারণা।
সুস্থতার সংখ্যা কম হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সুস্থতার সংখ্যাটা আমরা যা আপডেট করেছি, তার চেয়ে কিছুটা বেশি হবে। কারণ আক্রান্ত হলে জানা গেলেও, অনেক সময় সুস্থতার খবরটা জানা কঠিন হয়ে যায়। এর বাইরে দেখা যাবে সার্বিকভাবেই করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির তুলনায় সুস্থতার হার আমাদের দেশে কম দেখা যাচ্ছে। মানে সুস্থ হতে একটু বেশি সময় লাগছে, তার প্রভাব এখানেও দেখা যায়।
বুধবার (২৭ মে) পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত সংবাদকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন- ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ৫ জন (সুস্থ:২), যমুনা টিভির ৪ (সুস্থ:২), দীপ্ত টিভির ৮ সংবাদকর্মী (সুস্থ:৬), এটিএন নিউজের ১ জন রিপোর্টার (সুস্থ), আমাদের নতুন সময়ের ৪ জন সংবাদকর্মী (সুস্থ:১), একাত্তর টিভির ১০ (সুস্থ:১), বাংলাদেশের খবরের ১ জন রিপোর্টার (সুস্থ), দৈনিক সংগ্রামের ১ জন (সুস্থ), মাছরাঙা টিভির ১ জন সংবাদকর্মী এবং সাধারণ সেকশন থেকে ১ জন কর্মকর্তাসহ আক্রান্ত ২ জন (সুস্থ:১), নারায়নগঞ্জের শীতলক্ষ্যা পত্রিকার সম্পাদক (সুস্থ), রেডিও টুডের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি (সুস্থ), ভোরের কাগজের বামনা উপজেলা (বরগুনা) প্রতিনিধি (সুস্থ), চ্যানেল আইয়ের ৩ জন (সুস্থ:১), দৈনিক প্রথম আলোর ২ জন (সুস্থ:২), দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের একজন কর্মী এবং কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি (সুস্থ), নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিমের জামালপুর প্রতিনিধি (সুস্থ), আজকালের খবরের বামনা (বরগুনা) প্রতিনিধি (সুস্থ), নিউজ পোর্টাল বিবার্তার একজন সংবাদকর্মী (সুস্থ), দৈনিক ইনকিলাবের একজন সংবাদকর্মী (সুস্থ), দৈনিক জনতার ৩ জন সংবাদকর্মী (সুস্থ:১), দৈনিক কালের কণ্ঠের ২ জন সংবাদকর্মী (সুস্থ:১)।
আক্রান্তদের মধ্যে আরও রয়েছেন- এনটিভির ২০ (সুস্থ:২), দৈনিক আমার বার্তা’র সম্পাদক (সুস্থ), আরটিভির ৪ জন সংবাদকর্মী (সুস্থ:২), বাংলাভিশনের একজন রিপোর্টার (সুস্থ), এসএ টিভির ৬ জন, দৈনিক সময়ের আলোর নগর সম্পাদক হুমায়ুন কবির খোকন (মৃত), এবং দৈনিকটির আরো ৪ জন সংবাদকর্মী ও জেনারেল সেকশনের ৩ জন কর্মী। সিনিয়র সাবএডিটর মাহমুদুল হাকিম অপু করোনা উপসর্গে মারা গেছেন।
এছাড়াও যশোরের স্থানীয় দৈনিক লোকসমাজের একজন সাব-এডিটর (সুস্থ), দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের একজন রিপোর্টার (সুস্থ), নতুন সময় টিভির (আইপিটিভি) একজন নিউজ প্রেজেন্টার (সুস্থ), দৈনিক দেশ রূপান্তরের ৩ জন, রেডিও আমারের ১ জন সংবাদকর্মী, দৈনিক ইত্তেফাকের ২১ জন (সুস্থ:১), দেশ টিভির একজন নিউজ প্রেজেন্টার, বিটিভির ৩ জন (সুস্থ:১), ডিবিসি নিউজের ১ জন সংবাদকর্মী (সুস্থ), দৈনিক মানবজমিনের ১ জন সংবাদকর্মী, এটিএন বাংলার ২ জন সংবাদকর্মী, সময় টিভির ১২ জন, যায়যায়দিনের রিডিং সেকশেনের ১ জন (সুস্থ), ঢাকা ট্রিবিউনের ৩ জন, বাংলা ট্রিবিউনের রিডিং সেকশনের ১ জন, একুশে টিভির ২ জন সংবাদকর্মী, চ্যানেল-২৪ এর ১০ জন, ডেইলি স্টারের ১ জন সংবাদকর্মী, বার্তা সংস্থা ইউএনবির চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪ এর ১জন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি (সুস্থ), এশিয়ান টেলিভিশনের ২ জন, চট্টগ্রামের নিউজ পোর্টাল সিভয়েস২৪ডটকমের ১ জন রিপোর্টার, নিউ নেশনের ১ জন সংবাদকর্মী, রেডিও ধ্বনির ১ জন সংবাদকর্মী, নিউজ পোর্টাল ঢাকা টাইমসের মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
কোভিড-১৯ রোগে আরও আক্রান্ত হয়েছেন আমাদের অর্থনীতির একজন, দৈনিক নয়া দিগন্তের একজন সংবাদকর্মী, জাগোনিউজের ১ জন সংবাদকর্মী, আমার কাগজের ১ জন সংবাদকর্মী, দৈনিক বনিক বার্তার কম্পিউটার সেকশনের ১ জন কর্মী, দৈনিক খোলা কাগজের ১ জন সংবাদকর্মী, অন্যদিগন্তের ১ জন সংবাদকর্মী, ঢাকা ডিপ্লোমেট ডটকমের ১ জন সংবাদকর্মী, দৈনিক জনকণ্ঠের ১ জন সংবাদকর্মী, দৈনিক সমকালের ১ জন কর্মকর্তা, দৈনিক নতুন সংবাদের ১জন সংবাদকর্মী, দৈনিক মানবকণ্ঠের ১ জন সংবাকমর্কী, ৬৯. দৈনিক পূর্বকোণ (চট্টগ্রাম) ২ জন সংবাদকর্মী এবং দৈনিক কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) ১ জন সংবাদকর্মীসহ মোট ২০১ জন।
দেশে একের পর এক সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনগুলো। এ সংখ্যা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য অশনিসংকেতও বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।