ঢাকা ১১:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডা জনীত রোগীর সংখ্যা ক্রমসই বাড়ছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:১৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২২ ২০০০৩ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দিলীপ কুমার দাস, ময়মনসিংহ:

 

 

ময়মনসিংহে শীত মৌসুমে শুরুর সাথে শিশুদের শ্বাস কষ্ট ও ঠান্ডা জনিত রোগের প্রকাপ বেড়েছে। ফলে নবজাতক ও শিশুদের ব্যাপারে বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের। এদিকে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও প্রতিদিনই বাড়ছে শিশু রোগীর চাপ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রবিবার হাসপাতালে নবজাতক ও শিশু ওর্য়াড মিলিয়ে ১১০ বেডের বিপরীতে ভর্তি ছিল ৬১৩ জন শিশু। এর মাঝে নবজাতক ওয়ার্ডে ৫০টি বেডের বিপরীতে রোগি ভর্তি ২০৪ জন। শিশু ওয়ার্ডে ৬০ বেডের বিপরীতে রোগি ভর্তি ৪০৯ জন। এই সকল ওয়ার্ডের বারান্দা ও চলা ফেরার রাস্তায় অনেক শিশু রোগীকে নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে অভিবাবকরা। হাসপাতালের বেড ও বারান্দায় মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকর ও নার্সরা।

 

 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে গত এক সপ্তাহে নবজাতক ওয়ার্ডে (এসআইসিইউ) ১৩৫৩ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মাঝে ৭৪ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালের ৩০ ও ৩১ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছে মোট ২৮৭৭ শিশু। এর মাঝে মারা গেছে ২২ শিশু। রবিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম কিবরিয়া এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

 

চুরখাই এলাকার আয়াত নামে এক শিশুর মা জানান, আমার বাচ্চার বয়স ২০ মাস। কয়েকদিন আগে ঠান্ডা লেগেছিল। তারপর ভালো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গতকাল থেকে বমি ও পাতলা পায়খানা রোগে ভোগছেন। তাই ভর্তি করেছি। রোগীর চাপ বেশি থাকলেও চিকিৎসকরা খুবই আন্তরিক। বাচ্চা আগের চাইতে কিছুটা ভাল আছেন। শেরপুর থেকে দেড় বছর বয়সী শিশু ইরাদকে নিয়ে এসেছেন লাভলু মিয়া। তিনি বলেন, সম্প্রতি বাচ্চার পাতলা পায়খানা ও সর্দি জ্বর হয়। পরে তিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হই। এখানে চিকিৎসকরা শিশুদের যতœ সহকারে চিকিৎসা করেন। আমার বাচ্চা আগের চাইতে অনেকটাই ভাল আছে।

 

 

শেখ রাসেল স্ক্যানু (এনআইসিইউ) ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের অন্যান্য হাসপাতলের তুলনায় ময়মনসিংহে নবজাতক মৃত্যুর হার অনেক কম। এই ওয়ার্ডে সংকটাপন্ন নকজাতকই ভর্তি হয়। সাধারনত জন্মগত সমস্যার কারণে এখানে গড়ে প্রতিদিন ৫-৬জন মারা যায়। বিশেষ করে যারা বাড়িতে এবং বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিকে ডেলিভারী করান তাদের নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যাটা বেশি।

 

 

তিনি আরও বলেন, ৫০ শয্যার বিপরীতে গড়ে ২০০ নবজাতক প্রতিদিন ভর্তি থাকায় চিকিৎসা দিতেও আমাদের হিমশিম খেতে হয়। প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের জনবল কম। রবিবার ওয়ার্ডে ২০৪ জন ভর্তি ছিলো।

 

 

গত ২৪ ঘন্টায় ৮জন শিশু নবজাতক ওয়ার্ডে মারা গেছে। শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. বিশ্বজিত চৌধুরী বলেন, বর্তমানে ওয়ার্ডে ঠান্ডা জনিত রোগেই বেশি শিশু ভর্তি হচ্ছে। তবে রোগীর ভর্তির তুলনায় মৃত্যুর হার অনেক কম। শীত জনিত রোগের ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। আর শিশুদের হাসপাতালে আনতে গিয়ে দেরী করা যাবে না।

 

 

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, এই সময়ে ঠান্ডা জনিত রোগে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। হাসপাতালে শিশু ভর্তির সংখ্যাও বাড়ে। মৃত্যুহার সম্পর্কে তিনি বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়াও আশেপাশের জেলা থেকে খুবই জটিল শিশু রোগি বিশেষ করে নবজাতকরা এখানে ভর্তি হয়। এ কারনে নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

 

 

শয্যার তুলনায় নবজাতক এবং শিশু ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকায় প্রতিনিয়ত সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরেও আমরা কোন রোগীকে ফিরিয়ে না দিয়ে ভর্তি করে সেবা দেয়ার চেষ্টা করি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক
ট্যাগস :

শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডা জনীত রোগীর সংখ্যা ক্রমসই বাড়ছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে

আপডেট সময় : ১২:১৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২২

দিলীপ কুমার দাস, ময়মনসিংহ:

 

 

ময়মনসিংহে শীত মৌসুমে শুরুর সাথে শিশুদের শ্বাস কষ্ট ও ঠান্ডা জনিত রোগের প্রকাপ বেড়েছে। ফলে নবজাতক ও শিশুদের ব্যাপারে বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের। এদিকে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও প্রতিদিনই বাড়ছে শিশু রোগীর চাপ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রবিবার হাসপাতালে নবজাতক ও শিশু ওর্য়াড মিলিয়ে ১১০ বেডের বিপরীতে ভর্তি ছিল ৬১৩ জন শিশু। এর মাঝে নবজাতক ওয়ার্ডে ৫০টি বেডের বিপরীতে রোগি ভর্তি ২০৪ জন। শিশু ওয়ার্ডে ৬০ বেডের বিপরীতে রোগি ভর্তি ৪০৯ জন। এই সকল ওয়ার্ডের বারান্দা ও চলা ফেরার রাস্তায় অনেক শিশু রোগীকে নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে অভিবাবকরা। হাসপাতালের বেড ও বারান্দায় মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকর ও নার্সরা।

 

 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে গত এক সপ্তাহে নবজাতক ওয়ার্ডে (এসআইসিইউ) ১৩৫৩ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মাঝে ৭৪ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালের ৩০ ও ৩১ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছে মোট ২৮৭৭ শিশু। এর মাঝে মারা গেছে ২২ শিশু। রবিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম কিবরিয়া এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

 

চুরখাই এলাকার আয়াত নামে এক শিশুর মা জানান, আমার বাচ্চার বয়স ২০ মাস। কয়েকদিন আগে ঠান্ডা লেগেছিল। তারপর ভালো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গতকাল থেকে বমি ও পাতলা পায়খানা রোগে ভোগছেন। তাই ভর্তি করেছি। রোগীর চাপ বেশি থাকলেও চিকিৎসকরা খুবই আন্তরিক। বাচ্চা আগের চাইতে কিছুটা ভাল আছেন। শেরপুর থেকে দেড় বছর বয়সী শিশু ইরাদকে নিয়ে এসেছেন লাভলু মিয়া। তিনি বলেন, সম্প্রতি বাচ্চার পাতলা পায়খানা ও সর্দি জ্বর হয়। পরে তিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হই। এখানে চিকিৎসকরা শিশুদের যতœ সহকারে চিকিৎসা করেন। আমার বাচ্চা আগের চাইতে অনেকটাই ভাল আছে।

 

 

শেখ রাসেল স্ক্যানু (এনআইসিইউ) ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের অন্যান্য হাসপাতলের তুলনায় ময়মনসিংহে নবজাতক মৃত্যুর হার অনেক কম। এই ওয়ার্ডে সংকটাপন্ন নকজাতকই ভর্তি হয়। সাধারনত জন্মগত সমস্যার কারণে এখানে গড়ে প্রতিদিন ৫-৬জন মারা যায়। বিশেষ করে যারা বাড়িতে এবং বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিকে ডেলিভারী করান তাদের নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যাটা বেশি।

 

 

তিনি আরও বলেন, ৫০ শয্যার বিপরীতে গড়ে ২০০ নবজাতক প্রতিদিন ভর্তি থাকায় চিকিৎসা দিতেও আমাদের হিমশিম খেতে হয়। প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের জনবল কম। রবিবার ওয়ার্ডে ২০৪ জন ভর্তি ছিলো।

 

 

গত ২৪ ঘন্টায় ৮জন শিশু নবজাতক ওয়ার্ডে মারা গেছে। শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. বিশ্বজিত চৌধুরী বলেন, বর্তমানে ওয়ার্ডে ঠান্ডা জনিত রোগেই বেশি শিশু ভর্তি হচ্ছে। তবে রোগীর ভর্তির তুলনায় মৃত্যুর হার অনেক কম। শীত জনিত রোগের ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। আর শিশুদের হাসপাতালে আনতে গিয়ে দেরী করা যাবে না।

 

 

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, এই সময়ে ঠান্ডা জনিত রোগে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। হাসপাতালে শিশু ভর্তির সংখ্যাও বাড়ে। মৃত্যুহার সম্পর্কে তিনি বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়াও আশেপাশের জেলা থেকে খুবই জটিল শিশু রোগি বিশেষ করে নবজাতকরা এখানে ভর্তি হয়। এ কারনে নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

 

 

শয্যার তুলনায় নবজাতক এবং শিশু ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকায় প্রতিনিয়ত সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরেও আমরা কোন রোগীকে ফিরিয়ে না দিয়ে ভর্তি করে সেবা দেয়ার চেষ্টা করি।