নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালী-লক্ষীপুর সড়কে যমুনা হাই-ডিলাক্স ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড পরিচালিত বাস মালিকদের কাছে মাসে এক লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে বাস কাউন্টার বন্ধ করে শ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ ওঠেছে। এর প্রতিবাদে ওই রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা। এতে ওই সড়কে গত দুইদিন যমুনা হাই-ডিলাক্স ট্রান্সপোর্টের বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে অন্যান্য পরিবহনগুলো।
বুধবার ( ৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে নোয়াখালীর চৌমুহনী পাবলিক হল গেইটে নির্যাতনের শিকার পরিবহন শ্রমিকরা সাংবাদিকদের কাছে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। একই দিন দুপুরে লক্ষীপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন যমুনার সাধারণ বাস মালিক ও শ্রমিকরা।
বাস মালিক ও শ্রমিকরা বলেন, জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন হাজারও মানুষ লক্ষীপুর-নোয়াখালী-ফেনী রুটে চলাচল করে। এই রুটে যাত্রীদের পরিবহন সেবা প্রদান করতে যমুনা হাই-ডিলাক্স ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড পরিচালিত অর্ধশতাধিক বাস চলাচল করে আসছে। গত দুই মাস ধরে এই পরিবহনের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে প্রভাবশালী চাঁদাবাজরা। আমরা তাদের চাহিদামত চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় চাঁদাবাজরা আমাদের বাসের শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা এক সপ্তাহ আগে লক্ষীপুর টার্মিনালের প্রধান কাউন্টার, মান্দারী, জকশীন, চন্দ্রগঞ্জ বাজারের বাস কাউন্টারে তালা দিয়ে কাউন্টার বন্ধ করে দেয়। কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়ায় পের্টোল পাম্প থেকে বাসে যাত্রী তুলতে গেলে সেখানেও শ্রমিকদের মারধর করে বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে দেয় চাঁদাবাজরা। এতে চাঁদাবাজদের নির্যাতনের শিকার হয়ে গতকাল মঙ্গলবার (৭ ফ্রেব্রæয়ারী) সকাল থেকে এই রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
লক্ষীপুরে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, যমুনা বাসের মালিক হাবিবুর রহমান, ড্রাইভার জাবেদ পাঠান, শ্রমিক নেতা রাজীব আহমেদ, শাকিল আহমেদ প্রমুখ।
যমুনা হাই-ডিলাক্স ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মিলন বলেন, সাধারণ মালিকদের কষ্টের টাকায় কেনা বাসগুলোর সমন্বয়ে আমরা যমুনা হাই-ডিলাক্স ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড লক্ষীপুর-নোয়াখালী- ফেনী রুটে গত কয়েক বছর ধরে সুনামের সহিত পরিবহন সেবা দিয়ে আসছি। গত দুই মাস আগ থেকে লক্ষীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম রকি ওই রুটে বাস চলাচল অব্যাহত রাখতে হলে তাকে মাসিক এক লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে জানায়। আমরা ওই চাঁদা দিতে অস্বীকার করতে রকির ভাই রাকিব পাটোয়ারী ও তার চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা আমাদের পরিবহনের শ্রমিকদের মারধর শুরু করে ৪টি কাউন্টার বন্ধ করে দেয়। পরে আমরা স্থানীয় পের্টোল পাম্প থেকে যাত্রী ওঠানোর সিদ্ধান্ত করলে সেখানেও রকির লোকজন শ্রমিকদের মারধর করে। এতে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে বাস চালানো বন্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, এবিষয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি লক্ষীপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। এরআগে লক্ষীপুর বাস মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে লক্ষীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম রকির মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এতে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
লক্ষীপুর জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাজী শাহজাহান বলেন, ওই পরিবহনের শ্রমিকদের মারধর এবং কাউন্টার বন্ধের কথা শুনেছি। তবে কি কারণে হয়েছে তা বলতে পারবো না।
লক্ষীপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি নুর নবী বলেন, বিষয়টি নিয়ে পরিবহনের চেয়ারম্যান মিলন ও ছাত্রলীগ সভাপতি রকিকে নিয়ে বসছিলাম, কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। চাঁদা দাবি এবং শ্রমিকদের মারধরে বিষয়টি সত্য কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি এখন কোন মন্তব্য করতে চাই না।
লক্ষীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো.মাহফুজ্জামান আশরাফের সরকারি মোবাইল নাম্বারে বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ১৯ মিনিটে একাধিক বার কল করলে মোবাইল রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
লক্ষীপুর-নোয়াখালী-ফেনী রুটে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বাস মালিক ও শ্রমিকরা।