এনকে বার্তা ডেস্ক::
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সঙ্গে সব রকমের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।গতকাল শুক্রবার সংস্থাটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ সংস্কার সাধনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে। এখনো চীনের ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি সংস্থাটি। যে কারণে এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার মতো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বছরে ৪৫ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দিত মার্কিন সরকার। সে অর্থ এখন থেকে অন্য সংস্থার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রকল্পে খরচ করা হবে বলে ট্রাম্প জানিয়েছেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, এ অর্থ এখন বিশ্বজুড়ে কাজ করে এমন অন্য স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোকে দেবেন তিনি। এসব সংস্থার কাজ করার জন্য প্রচুর অর্থ প্রয়োজন। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, যখন প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছিল, তখন চীনা কর্মকর্তাদের কথামতো সারা বিশ্বকে ভুল বুঝিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম শুরু হয়েছিল। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ লক্ষাধিক। এর মধ্যে মারা গেছে ৩ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ। এ ভাইরাসে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ। করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুও হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। করোনায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে ১ লাখের গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে।
করোনাভাইরাসকে ‘চীনের জঘন্য উপহার’ বলে গত বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই বিশ্ব স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য সংস্থার ওপর খড়গহস্ত হলেন তিনি।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে বলেন, ‘ওদের জন্য আমাদের একটা বিস্তারিত নিয়মবিধি ছিল , যা নিয়ে ওরা কাজ করতে পারত, কিন্তু তারা সে অনুযায়ী কাজ করতে রাজি হয়নি।’
ট্রাম্প আরো বলেন, ‘তাদের একটা বড়সড় পরিবর্তন দরকার ছিল। ওরা সে পরিবর্তনের অনুরোধ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে আজকের পর থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।’
চীনের বক্তব্যের ওপর অন্ধের মতো ভরসা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভুল তথ্য দেওয়ার কারণে বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি অনুমানের চেয়েও ভয়াবহ আকার নিয়েছে বলে এর আগে অভিযোগ করেছিলেন ট্রম্প। বন্ধ করেছিলেন সংস্থাটিকে দেওয়া মার্কিন সাহায্য। এ চীন নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বেশি কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে ব্যর্থতার জন্য এবার যুক্তরাষ্ট্র সংস্থাটির সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানছে বলে এদিন সংবাদ সম্মেলনে জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এদিকে, হংকং ইস্যুতেও এদিন মর্কিন প্রশাসনের নয়া নীতির কথা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এতদিন হংকংয়ের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নীতি চালু ছিল। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সে নিয়মের অবসান হতে চলেছে। হংকংয়ের বিশেষ তকমা প্রত্যাহার করে নেওয়া হতে চলেছে বলে ট্রাম্প জানিয়েছেন। ফলে চীনের মূল ভূখণ্ডের মতোই হংকং সমান মর্যাদা পেতে পারে। একই সঙ্গে কিছু চীনা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বন্ধ হতে যাচ্ছে মার্কিন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা। আগামীতে তাঁরা আর মার্কিন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবেন না।
‘এক দেশ, দুই নীতি’ অনুসারে কাগজে কলমে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও স্বায়ত্ত্বশাসন সুবিধা ভোগ করে হংকং। কিন্তু, হংকংয়ের ওপর সম্প্রতি বিতর্কত জাতীয় নিরাপত্তা আইন চাপিয়ে দিয়েছে চীনের কমিউনিস্ট সরকার। এ আইন হংকংয়ের স্বাধীনতা হরণ করবে বলে অভিযোগ। এমন এক প্রেক্ষাপটে হংকং ইস্যুতে মার্কিন নীতি বদলের কথা ঘোষণা করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।