ঢাকা ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

আজ থেকে ‘স্বাভাবিক’ হচ্ছে সব কিছু

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৪:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ মে ২০২০ ২৯০ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

এনকে বার্তা ডেস্ক::

আজ ৩১ মে (রোববার) থেকে চালু হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক, গণ-পরিবহন। রাষ্ট্রায় সাধারণ ছুটিকালীন ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ঠ সরকারি অফিস সীমিত পরিসরে চালু ছিল। কিন্তু আজ থেকে সব করোনা পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক নিয়মে খুলবে। এই ‘স্বাভাবিক’ হওয়ার চেষ্টা আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আদৌ স্বাভাবিক করবে কি-না সেই প্রশ্ন উঠেছে সব মহলে।

করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারি ছুটি চলছে। বন্ধ ছিল স্থল, পানি ও আকাশ পথের গণপরিবহন ব্যবস্থা। এরমধ্যে বিশেষ বিবেচনায় কিছু ফ্লাইট চলেছে। ৬৫ দিন পরে আজ সব একসঙ্গে খুলে দেয়া হচ্ছে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে দিক দিয়ে রাজধানী ঢাকার অবস্থান হচ্ছে শীর্ষে। দুই কোটি মানুষের বসবাসের এই শহর ইতোমধ্যে করোনা আক্রান্তের হটস্পটে পরিণত হয়েছে। অপর বাণিজ্যিক নগর চট্টগ্রামও এই খেতাব পেয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা জেলাও হট-স্পট বলে চিহ্নিত হয়েছে।

অপরদিকে স্বাস্থ অধিদপ্তরের দৈনিক তথ্য বাতায়ন জানান দিচ্ছে এই সময়ে সর্বোচ্চ হারে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিশ্লেষকদের মতে, দুই মাসের বেশি সময় ধরে মধ্যবিত্ব ও স্বল্প আয়ের মানুষরা জীবনের তাগিদে এই সময়েও ঘাপটি মেরে বসে ছিলেন ঘরে।


প্রায় দুই কোটি পরিবারই হচ্ছে এই শ্রেণির তালিকায়। এখন অফিস-আদালত, গণপরিবহন খোলায় সবাইকেই ঘর থেকে সড়কে নামতে হবে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। আর এতে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। এর পূর্বে তৈরি পোশাক খাত খুলে দেয়ার অভিজ্ঞতা তাই বলছে।

গত ২৮ মে সরকার ঘোষণা করে আজ ৩১ মে রোববার থেকে অফিস খুলবে, বাস-লঞ্চ-ট্রেন-বিমান চলবে, খুলবে পুঁজিবাজার, ব্যাংকে লেনদেন হবে আগের মতোই।
ওই দিনই সরকারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংকালে জানায় এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ব্যক্তির করোনা আক্রান্ত হওয়ার তথ্য। যা অব্যাহত থাকে পরের দিনও। গত ২৯ মে করোনা আক্রান্ত হয় নতুন করে দুই হাজার ৫২৩ জন হয়।

এর পরের দিন ৩০ মে পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক পূর্বের দিনের চেয়ে কিছুটা কমেছে। গতকাল নতুন করে এক হাজার ৭৬৪ জন শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা অতীতকে ছাড়িয়েছে। দিনটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের, যা দেশে একদিনের হিসেবে সর্বোচ্চ।

দেশের করোনা পরিস্থিতির এই সময়ে সব-কিছু একসঙ্গে খুলে দেয়াকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন না কেউ।

প্রতিবেশি দেশ ভারতও গত ২৬ মার্চ থেকে লক-ডাউন ঘোষণা করেছে। কিন্তু পরিস্থিতির বিবেচনায় সেই লক-ডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু ধাপে ধাপে এই লক-ডাউন তুলে নিবে দেশটির সরকার। একটি ধাপ অতিক্রম করে পরিস্তিতি পর্যবেক্ষণ করে পরের ধাপে যাবে দেশটি। আগামী ৮ জুন সীমিত পরিসরে শপিং মল খুলবে। কিন্তু গণপরিবহন কবে খুলবে সেই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি।

কিন্তু বাংলাদেশ সবকিছু একসঙ্গেই খুলে দিচ্ছে। এই সিদ্ধান্তে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কতোটুকু গতি পাবে তা নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মানুষ এখনো জীবন নিয়ে শঙ্কা ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন। এই সময়ে অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হলেও গ্রাহক উপস্থিতি আশানুরূপ হবে না। নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হবে না। এতে অর্থনীতির চাকা ৫০ শতাংশও সচল হবে না।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মানসুর মনে করেন, এমন পরিস্থিতিতে সব কিছু খুলে দিয়ে ৫০ শতাংশ অর্থনীতিও সচল করা যাবে না। তৈরি পোশাক খাত বড় উদাহরণ। অর্ডার আছে বলে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হল। কিন্তু তাতে কী হল? এপ্রিলে মাত্র ৪০ কোটি ডলার পোশাক রপ্তানি করলাম আমরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক
ট্যাগস :

আজ থেকে ‘স্বাভাবিক’ হচ্ছে সব কিছু

আপডেট সময় : ০৫:৫৪:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ মে ২০২০

এনকে বার্তা ডেস্ক::

আজ ৩১ মে (রোববার) থেকে চালু হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক, গণ-পরিবহন। রাষ্ট্রায় সাধারণ ছুটিকালীন ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ঠ সরকারি অফিস সীমিত পরিসরে চালু ছিল। কিন্তু আজ থেকে সব করোনা পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক নিয়মে খুলবে। এই ‘স্বাভাবিক’ হওয়ার চেষ্টা আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আদৌ স্বাভাবিক করবে কি-না সেই প্রশ্ন উঠেছে সব মহলে।

করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারি ছুটি চলছে। বন্ধ ছিল স্থল, পানি ও আকাশ পথের গণপরিবহন ব্যবস্থা। এরমধ্যে বিশেষ বিবেচনায় কিছু ফ্লাইট চলেছে। ৬৫ দিন পরে আজ সব একসঙ্গে খুলে দেয়া হচ্ছে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে দিক দিয়ে রাজধানী ঢাকার অবস্থান হচ্ছে শীর্ষে। দুই কোটি মানুষের বসবাসের এই শহর ইতোমধ্যে করোনা আক্রান্তের হটস্পটে পরিণত হয়েছে। অপর বাণিজ্যিক নগর চট্টগ্রামও এই খেতাব পেয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা জেলাও হট-স্পট বলে চিহ্নিত হয়েছে।

অপরদিকে স্বাস্থ অধিদপ্তরের দৈনিক তথ্য বাতায়ন জানান দিচ্ছে এই সময়ে সর্বোচ্চ হারে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিশ্লেষকদের মতে, দুই মাসের বেশি সময় ধরে মধ্যবিত্ব ও স্বল্প আয়ের মানুষরা জীবনের তাগিদে এই সময়েও ঘাপটি মেরে বসে ছিলেন ঘরে।


প্রায় দুই কোটি পরিবারই হচ্ছে এই শ্রেণির তালিকায়। এখন অফিস-আদালত, গণপরিবহন খোলায় সবাইকেই ঘর থেকে সড়কে নামতে হবে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। আর এতে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। এর পূর্বে তৈরি পোশাক খাত খুলে দেয়ার অভিজ্ঞতা তাই বলছে।

গত ২৮ মে সরকার ঘোষণা করে আজ ৩১ মে রোববার থেকে অফিস খুলবে, বাস-লঞ্চ-ট্রেন-বিমান চলবে, খুলবে পুঁজিবাজার, ব্যাংকে লেনদেন হবে আগের মতোই।
ওই দিনই সরকারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংকালে জানায় এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ব্যক্তির করোনা আক্রান্ত হওয়ার তথ্য। যা অব্যাহত থাকে পরের দিনও। গত ২৯ মে করোনা আক্রান্ত হয় নতুন করে দুই হাজার ৫২৩ জন হয়।

এর পরের দিন ৩০ মে পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক পূর্বের দিনের চেয়ে কিছুটা কমেছে। গতকাল নতুন করে এক হাজার ৭৬৪ জন শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা অতীতকে ছাড়িয়েছে। দিনটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের, যা দেশে একদিনের হিসেবে সর্বোচ্চ।

দেশের করোনা পরিস্থিতির এই সময়ে সব-কিছু একসঙ্গে খুলে দেয়াকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন না কেউ।

প্রতিবেশি দেশ ভারতও গত ২৬ মার্চ থেকে লক-ডাউন ঘোষণা করেছে। কিন্তু পরিস্থিতির বিবেচনায় সেই লক-ডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু ধাপে ধাপে এই লক-ডাউন তুলে নিবে দেশটির সরকার। একটি ধাপ অতিক্রম করে পরিস্তিতি পর্যবেক্ষণ করে পরের ধাপে যাবে দেশটি। আগামী ৮ জুন সীমিত পরিসরে শপিং মল খুলবে। কিন্তু গণপরিবহন কবে খুলবে সেই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি।

কিন্তু বাংলাদেশ সবকিছু একসঙ্গেই খুলে দিচ্ছে। এই সিদ্ধান্তে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কতোটুকু গতি পাবে তা নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মানুষ এখনো জীবন নিয়ে শঙ্কা ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন। এই সময়ে অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হলেও গ্রাহক উপস্থিতি আশানুরূপ হবে না। নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হবে না। এতে অর্থনীতির চাকা ৫০ শতাংশও সচল হবে না।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মানসুর মনে করেন, এমন পরিস্থিতিতে সব কিছু খুলে দিয়ে ৫০ শতাংশ অর্থনীতিও সচল করা যাবে না। তৈরি পোশাক খাত বড় উদাহরণ। অর্ডার আছে বলে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হল। কিন্তু তাতে কী হল? এপ্রিলে মাত্র ৪০ কোটি ডলার পোশাক রপ্তানি করলাম আমরা।