ঢাকা ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

যুবলীগ নেতার বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, মাঠে নেই আ.লীগ

ছাত্র-জনতার দখলে নোয়াখালীর রাজপথ
  • আপডেট সময় : ০৬:০৮:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪ ১৭ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

 

এক দফা দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে নোয়াখালীর রাজপথ ছিল ছাত্র-জনতার দখলে। অপরদিকে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল থেকে জমায়েতের কর্মসূচি থাকেলে স্বল্প কিছু কর্মি-সমর্থক ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিদের জোরালো ভাবে মাঠে থাকতে দেখা যায়নি।

 

রোববার (৪ আগস্ট) সকালে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে জেলা শহর মাইজদীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবিতে নানান স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন হাতে দেখা যায়। অনেকের গায়ে ও মাথায় ছিলো জাতীয় পতাকা।

 

স্থানীয় ব্যবসায়ী মাহমুদুর রহমান জানান, সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনকারীদের সাথে সদরের জিলা স্কুল এলাকায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই সময় স্থানীয়রা কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজ শুনতে পায়। পরে পুলিশ চলে গেলে আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। তবে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলির অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন।

 

এদিকে দুপুর দেড়টার দিকে শহরের মাইজদী বাজার এলাকায় অবস্থিত জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইমন ভট্রের বাসভবনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আন্দোলনকারীদের সাথে বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংষর্ষে ছাত্রলীগের ১০জন নেতাকর্মি আহত হয়। আহতদের মধ্যে মীরওয়ারিশপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, কুতুবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শেখ রাসেল ও ছাত্রলীগ নেতা সোহেলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর আন্দোলনকারীরা চৌমুহনী পৌরসভায় হামলা চালায়। একপর্যায়ে চৌমুহনী পৌরসভায় অগ্নিসংযোগ করে। তখন তারা পৌরসভার বেশ কয়েকটি গাড়িতেও অগ্নিসংযাগ করে বলে অভিযোগ করেন চৌমুহনী পৌরসভা মেয়র মো. খালেদ সাইফুল্লাহ।

 

প্রত্যক্ষদর্শী ইমন জানান, হামলাকারীরা বেগমগঞ্জে ঘন্টাব্যাপী তান্ডব চালায়। ওই সময় তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরনের গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের ফ্যাক্টরি, বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে হামলা চালায় এবং চৌরাস্তা এলাকায় মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে, একই দিন সকাল ১০টার দিকে তারা বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদে ইট পাটকেল নিক্ষপ করে এবং জেলা শহরের জিসান হোটেলে হামলা চালায়।

 

স্থানীয়রা আরও জানায়, সকালে শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জেলা শহরে জড়ো হয়। অসহযোগ আন্দোলনের ফলে জেলা শহরে সব ধরনের দোকানপাট, মার্কেট ও বিতানগুলো বন্ধ দেখা যায়। সকাল থেকে রাস্তাঘাটেও যান চলাচল কম দেখা গেছে । তবে ব্যক্তিগত কিছু গাড়ি ছিল। এদিকে নোয়াখালী থেকে ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি কোন ধরনের দূরপাল্লার গণপরিবহন ।

 

অন্যদিক, অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেও খোলা রয়েছে সরকারি অফিস আদালত ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠান। অফিসগুলোতেও সেবা প্রত্যাশীদের অন্যান্য দিনের তুলনায় সেবা নিতে কিছুটা কম দেখা গিয়েছে। তবে বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এতে করে পুরো নোয়াখালী জুড়ে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইমন ভট্র নিজের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হামলার সময় আমি বাসায় ছিলাম না। হামলার পরও তারা অনেকক্ষন আমার বাসা ঘিরে রাখে।

 

নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইমঅ্যান্ড অপস্) মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, যুবলীগ নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের বিষয়টি শুনেছি। যখন বিষয়টি ডিসিকে মুঠোফোনে জানায় তখন আমরা সাথে ছিলাম। কিন্ত বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। রাস্তা ঘাট এমন ভাবে ব্যারিকেড দিয়ে রাখছে সব জায়গায় পুলিশ পাঠানো সম্ভব হচ্ছেনা।

 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের কোনো ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়নি। ওই সময় কোনো গুলি ছোড়া হয়নি। বাইরের গুলির কোন শব্দ আমাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। এ ধরনের কোনো অভিযোগও নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক

যুবলীগ নেতার বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, মাঠে নেই আ.লীগ

আপডেট সময় : ০৬:০৮:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

 

এক দফা দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে নোয়াখালীর রাজপথ ছিল ছাত্র-জনতার দখলে। অপরদিকে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল থেকে জমায়েতের কর্মসূচি থাকেলে স্বল্প কিছু কর্মি-সমর্থক ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিদের জোরালো ভাবে মাঠে থাকতে দেখা যায়নি।

 

রোববার (৪ আগস্ট) সকালে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে জেলা শহর মাইজদীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবিতে নানান স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন হাতে দেখা যায়। অনেকের গায়ে ও মাথায় ছিলো জাতীয় পতাকা।

 

স্থানীয় ব্যবসায়ী মাহমুদুর রহমান জানান, সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনকারীদের সাথে সদরের জিলা স্কুল এলাকায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই সময় স্থানীয়রা কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজ শুনতে পায়। পরে পুলিশ চলে গেলে আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। তবে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলির অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন।

 

এদিকে দুপুর দেড়টার দিকে শহরের মাইজদী বাজার এলাকায় অবস্থিত জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইমন ভট্রের বাসভবনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আন্দোলনকারীদের সাথে বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংষর্ষে ছাত্রলীগের ১০জন নেতাকর্মি আহত হয়। আহতদের মধ্যে মীরওয়ারিশপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, কুতুবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শেখ রাসেল ও ছাত্রলীগ নেতা সোহেলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর আন্দোলনকারীরা চৌমুহনী পৌরসভায় হামলা চালায়। একপর্যায়ে চৌমুহনী পৌরসভায় অগ্নিসংযোগ করে। তখন তারা পৌরসভার বেশ কয়েকটি গাড়িতেও অগ্নিসংযাগ করে বলে অভিযোগ করেন চৌমুহনী পৌরসভা মেয়র মো. খালেদ সাইফুল্লাহ।

 

প্রত্যক্ষদর্শী ইমন জানান, হামলাকারীরা বেগমগঞ্জে ঘন্টাব্যাপী তান্ডব চালায়। ওই সময় তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরনের গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের ফ্যাক্টরি, বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে হামলা চালায় এবং চৌরাস্তা এলাকায় মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে, একই দিন সকাল ১০টার দিকে তারা বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদে ইট পাটকেল নিক্ষপ করে এবং জেলা শহরের জিসান হোটেলে হামলা চালায়।

 

স্থানীয়রা আরও জানায়, সকালে শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জেলা শহরে জড়ো হয়। অসহযোগ আন্দোলনের ফলে জেলা শহরে সব ধরনের দোকানপাট, মার্কেট ও বিতানগুলো বন্ধ দেখা যায়। সকাল থেকে রাস্তাঘাটেও যান চলাচল কম দেখা গেছে । তবে ব্যক্তিগত কিছু গাড়ি ছিল। এদিকে নোয়াখালী থেকে ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি কোন ধরনের দূরপাল্লার গণপরিবহন ।

 

অন্যদিক, অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেও খোলা রয়েছে সরকারি অফিস আদালত ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠান। অফিসগুলোতেও সেবা প্রত্যাশীদের অন্যান্য দিনের তুলনায় সেবা নিতে কিছুটা কম দেখা গিয়েছে। তবে বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এতে করে পুরো নোয়াখালী জুড়ে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইমন ভট্র নিজের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হামলার সময় আমি বাসায় ছিলাম না। হামলার পরও তারা অনেকক্ষন আমার বাসা ঘিরে রাখে।

 

নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইমঅ্যান্ড অপস্) মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, যুবলীগ নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের বিষয়টি শুনেছি। যখন বিষয়টি ডিসিকে মুঠোফোনে জানায় তখন আমরা সাথে ছিলাম। কিন্ত বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। রাস্তা ঘাট এমন ভাবে ব্যারিকেড দিয়ে রাখছে সব জায়গায় পুলিশ পাঠানো সম্ভব হচ্ছেনা।

 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের কোনো ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়নি। ওই সময় কোনো গুলি ছোড়া হয়নি। বাইরের গুলির কোন শব্দ আমাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। এ ধরনের কোনো অভিযোগও নেই।