চালু হচ্ছে না দেশের বৃহত্তম অক্সিজেন প্লান্ট দক্ষ প্রকৌশলীর অভাবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০২০

ডেস্ক রিপোর্ট::

করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্তদের জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন। এর অভাবে মারা যাচ্ছে অনেক মানুষ। যদিও দক্ষ জনবলের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না দেশের বৃহত্তম অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন। জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের এ প্লান্টের দৈনিক অক্সিজেন উৎপাদন সক্ষমতা ২৭০ মেট্রিক টন।

জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, দেশের বাজারের মানসম্মত ইস্পাতের বিপুল চাহিদা থাকায় বছর দুয়েক আগে বড় আকারে সম্প্রসারণ প্রকল্প গ্রহণ করে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ইস্পাতের খাতের প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে ৯৫ শতাংশের বেশি সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষ করে। আর পাঁচ শতাংশ কাজের মধ্যে বাকি আছে ‘এয়ার সেপারেশন ইউনিট’ বা ‘এএসইউ’-এর। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড জিপিএইচ ইস্পাতের নতুন প্লান্টে বসানো হয় দৈনিক ৩০০ মেট্রিক টন উৎপাদন সক্ষমতার ‘এএসইউ’।

দেশের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক প্রযুক্তির এ প্লান্টে প্রতিদিন ২৭০ টন মেট্রিক টন বায়বীয় অক্সিজেন উৎপাদিত হবে। এর মধ্যে নিজেদের কারখানায় ইস্পাত উৎপাদন ও পরিশোধনে ব্যবহার করা হবে দৈনিক ২০০ মেট্রিক টন এবং মানুষের জীবন রক্ষায় ৭০ মেট্রিক টন বাজারের সরবরাহ করা হবে।

শুধু অক্সিজেন নয়, এ প্লান্টে প্রতিদিন বায়বীয় নাইট্রোজেন, তরল নাইট্রোজেন এবং তরল আর্গন গ্যাস তৈরি হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ও আর্গন গ্যাসও বিক্রি করবে প্রতিষ্ঠানটি। চীন থেকে আমদানি করা প্রায় ১৫ মিলিয়ন ইউএস ডলারের এ প্লান্টটি চালু করার জন্য আসার কথা ছিল সাতজন চীনা এবং ১৭ জন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীর। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল বন্ধ ও ভিসা জটিলতা থাকায় এবং আমদানিকৃত খুচরা যন্ত্রাংশ পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় প্লান্টটি চালু করা যাচ্ছে না। অথচ দেশে এখন অক্সিজেনের অভাবে প্রতিনিয়ত মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এমনকি মারা যাচ্ছে। শুধু সামান্য কিছু জটিলতার কারণে দেশের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক প্লান্ট চালু করা যাচ্ছে না। অপরদিকে লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড দেশে ১৩০ টন অক্সিজেন তৈরি করে।

সম্প্রতি পরিদর্শনকালে উপস্থিত জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের কর্মকর্তারা ‘এএসইউ’ প্লান্ট উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, প্রাকৃতিক বাতাসকে কমপ্রেসার দিয়ে টেনে নিয়ে কমপ্রেস করা হবে। এরপর সেটির টেম্পারেচার বেড়ে যাবে। তারপর ঠাণ্ডা করে এবজরভারে পাঠানো হবে। সেখানে পানি, হাইড্রোজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি বের করে দেওয়া হবে। আরও কয়েক ধাপ পর লিকুইড হয়ে লোয়ার কলামে চলে যাবে অক্সিজেন। ওপরে উঠে যাবে নাইট্রোজেন। এ সময় অক্সিজেনের পিউরিটি থাকবে ৪০ শতাংশ। আরও কয়েক ধাপে পরিশোধন করে ৯৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাওয়া যাবে।

তারা আরও বলেন, আমাদের কারখানায় উন্নতমানের স্টিল পণ্যের জন্য দৈনিক ২০০ থেকে ২২০ টন অক্সিজেন দরকার হবে। তাই চীন থেকে এয়ার সেপারেশন ইউনিটটি আনা হয়েছে। এ ইউনিটের অক্সিজেন স্টোরেজ ক্ষমতা এক লাখ ৫০ হাজার লিটার। এর মধ্যে ৭৫ হাজার লিটারের দুটি স্টোরেজ ট্যাংক রয়েছে। এছাড়া ১০০ কিউবিক মিটার অক্সিজেন জমা রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এরই মধ্যে ইনস্টলেশনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এখন কমিশনিং চলছে।

এ বিষয়ে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড দেশের প্রথম ও একমাত্র কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেসে বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদনকারী কারখানা। আর এ প্লান্টে উৎপাদিত হবে দেশের সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন। আমাদের এ প্লান্টে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের পাশাপাশি দৈনিক ৭০ মেট্রিক টন মেডিকেল গ্রেডের অক্সিজেন উৎপাদন সক্ষমতা আছে। এ প্লান্ট চালু করার জন্য কিছু কাজ বাকি আছে। সে কাজগুলো করার জন্য এখন আসার কথা ছিল সাত চীনা এবং ১৭ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীর। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে তারা আসতে না পারায় এবং আমদানিকৃত খুচরা যন্ত্রাংশ পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় প্লান্টটি চালু করা যাচ্ছে না। অথচ দেশে এখন অক্সিজেনের অভাবে প্রতিনিয়ত মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এমনকি মারা যাচ্ছে। শুধু সামান্য কিছু জটিলতার কারণে দেশের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক প্লান্ট চালু করা যাচ্ছে না। এ জটিলতাগুলো কাটানো গেল আমরাও মানুষের এ কঠিন সময়ে অক্সিজেন দিয়ে পাশে থাকতে পারতাম। এ সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো তো মানবিক দায়িত্ব।’

উল্লেখ্য, আশির দশকের শেষের দিকে চট্টগ্রামে ট্রেডিং ব্যবসা শুরু করেন শিল্পোদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর আলম। প্রথমে নিজে গড়া জাহাঙ্গীর অ্যান্ড আদারস নামের প্রতিষ্ঠানটি থেকে তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঢেউটিন, রড, সিমেন্টের মতো নির্মাণ-সংশ্লিষ্ট পণ্য সরবরাহ করতেন। এরপর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে মোল্লা সল্ট গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি নামে একটি সিমেন্ট কারখানা করেন। এরপর ২০০০ সালে চট্টগ্রামে একটি ম্যানুয়াল রি-রোলিং মিল কিনে অন্য ভাইদের ও পরিচিতিদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে রড ম্যানুফ্যাকচারিং শুরু করেন। কিছু কাল পর ২০০৬ সালে প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন ও কলেবর বাড়ানোর পাশাপাশি কোম্পানির নাম দেন জিপিএইচ ইস্পাত। আর সময়ের পরিক্রমায় জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডে কোয়ান্টাম প্রক্রিয়ায় দেশের শীর্ষ মানসম্মত ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০