ঢাকা ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, একমাসপর ভিডিও ভাইরাল, আটক-১

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৫৪:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অক্টোবর ২০২০ ৩১৩৫ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ

 

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে অনৈতিক কাজের অপবাদ দিয়ে এক নারী (৩৬) কে সমস্ত শরীর বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে একদল যুবক। নির্যাতনকারীদের বার বার বাবা ডেকেও শেষ রক্ষা হয়নি ওই নারীর। রবিবার দুপুর থেকে নির্যাতনের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হলে জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। টনক নড়ে উঠে প্রশাসনের। ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আব্দুর রহিম (২৪) নামের এক যুবককে আটক করেছে। এদিকে নির্যাতনকারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়ীতে তালা দিয়ে বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে গেছে নির্যাতিতা ও তার পরিবারের লোকজন। তার স্বজনদের কাছ থেকেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একলাশপুর থেকে তাকে আটক করা হয়। আটককৃত আব্দুর রহিম জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে। সে স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারের সেকেন্ড ইন কমান্ড বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, গত তিন বছর আগে ওই নারীর বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে তার স্বামী আরো একটি বিয়ে করলে তাদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওইনারীর আগের স্বামী তার সাথে দেখা করতে তার ঘরে ঢুকেন। বিষয়টি দেখে পেলে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার। রাত ১০টার দিকে দেলোয়ার তার লোকজন নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে পর পুরুষের সাথে অনৈতিক কাজ করেছে বলে অভিযোগ এনে তাকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে পিটিয়ে নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারন করে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ভিডিও টিতে দেখা যায়, নির্যাতনকারীদের মধ্যে এক যুবক নারীর পরনে থাকা জামা কাপড় টেনে হিচঁড়ে সম্পূর্ণ খুলে ফেলে। এসময় ওই নারী বিচানার ছাদর, তোষক, খাটের ওপর থাকা বিভিন্ন কাপড় দিয়ে নিজের দেহ ডেকে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু নির্যাতনকারীদের মধ্যে কয়েকজন চারদিক থেকে কাপড়গুলো টেনে সরিয়ে দেয়। এক যুবক নারীর মুখে বার বার লাথি মারে। একজন তার মুখ ও বুকের বিভিন্ন স্থানে কামড় দিচ্ছে। এক যুবক নারীর গোপনাঙ্গে বার বার হাত দিচ্ছে ও আঘাত করছে। আরেক যুবক তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করছে। নির্যাতনকারীদের বারবার বাবা ডেকেও রক্ষা পায়নি ওই নারী।

ভিডিও চিত্র দেখা একাধিক ব্যক্তি বলেন, স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বাদল, কালাম, সাইফুদ্দিন, রহিম ও সুমন সহ ৬-৭ জন ওই নারীর ওপর এ নির্যাতন চালিয়েছে। নির্যাতনকারী দেলোয়ার ও তার বাহিনীর লোকজনের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও দেখে পুলিশ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে আব্দুর রহিম নামের নির্যাতনকারী দলের এক সদস্যকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবদুর রহিম ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরকে আটকের চেষ্টা চলছে। এ নেক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যতই ক্ষমতাধর হোকনা কেন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি প্রদান করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক
ট্যাগস :

গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, একমাসপর ভিডিও ভাইরাল, আটক-১

আপডেট সময় : ০৯:৫৪:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অক্টোবর ২০২০

নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ

 

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে অনৈতিক কাজের অপবাদ দিয়ে এক নারী (৩৬) কে সমস্ত শরীর বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে একদল যুবক। নির্যাতনকারীদের বার বার বাবা ডেকেও শেষ রক্ষা হয়নি ওই নারীর। রবিবার দুপুর থেকে নির্যাতনের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হলে জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। টনক নড়ে উঠে প্রশাসনের। ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আব্দুর রহিম (২৪) নামের এক যুবককে আটক করেছে। এদিকে নির্যাতনকারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়ীতে তালা দিয়ে বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে গেছে নির্যাতিতা ও তার পরিবারের লোকজন। তার স্বজনদের কাছ থেকেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একলাশপুর থেকে তাকে আটক করা হয়। আটককৃত আব্দুর রহিম জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে। সে স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারের সেকেন্ড ইন কমান্ড বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, গত তিন বছর আগে ওই নারীর বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে তার স্বামী আরো একটি বিয়ে করলে তাদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওইনারীর আগের স্বামী তার সাথে দেখা করতে তার ঘরে ঢুকেন। বিষয়টি দেখে পেলে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার। রাত ১০টার দিকে দেলোয়ার তার লোকজন নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে পর পুরুষের সাথে অনৈতিক কাজ করেছে বলে অভিযোগ এনে তাকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে পিটিয়ে নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারন করে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ভিডিও টিতে দেখা যায়, নির্যাতনকারীদের মধ্যে এক যুবক নারীর পরনে থাকা জামা কাপড় টেনে হিচঁড়ে সম্পূর্ণ খুলে ফেলে। এসময় ওই নারী বিচানার ছাদর, তোষক, খাটের ওপর থাকা বিভিন্ন কাপড় দিয়ে নিজের দেহ ডেকে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু নির্যাতনকারীদের মধ্যে কয়েকজন চারদিক থেকে কাপড়গুলো টেনে সরিয়ে দেয়। এক যুবক নারীর মুখে বার বার লাথি মারে। একজন তার মুখ ও বুকের বিভিন্ন স্থানে কামড় দিচ্ছে। এক যুবক নারীর গোপনাঙ্গে বার বার হাত দিচ্ছে ও আঘাত করছে। আরেক যুবক তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করছে। নির্যাতনকারীদের বারবার বাবা ডেকেও রক্ষা পায়নি ওই নারী।

ভিডিও চিত্র দেখা একাধিক ব্যক্তি বলেন, স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বাদল, কালাম, সাইফুদ্দিন, রহিম ও সুমন সহ ৬-৭ জন ওই নারীর ওপর এ নির্যাতন চালিয়েছে। নির্যাতনকারী দেলোয়ার ও তার বাহিনীর লোকজনের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও দেখে পুলিশ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে আব্দুর রহিম নামের নির্যাতনকারী দলের এক সদস্যকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবদুর রহিম ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরকে আটকের চেষ্টা চলছে। এ নেক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যতই ক্ষমতাধর হোকনা কেন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি প্রদান করা হবে।