নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া শ্বাস কষ্ট নিয়ে পলি আক্তার (২০) নামের এক যুবতীর মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে গত ৮দিনে জেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৯জন। এদিকে জেলার চাটখিল উপজেলা নতুন করে (২৮) এক যুবক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২৩জন। যার মধ্যে জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলায় ১১জন, সদরে ২জন, সোনাইমুড়ীতে ৩জন, হাতিয়ায় ২জন, সেনবাগে ১জন, কবিরহাটে ২জন ও চাটখিলে ২জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন সোনাইমুড়ীতে এক ইতালি প্রবাসী ও সেনবাগে এক রাজমেস্ত্রী। সুস্থ হয়েছেন সোনাইমুড়ীতে মৃত ইতালী প্রবাসীর স্ত্রী।
হাতিয়া উপজেলা স্বা্স্থ্য কমপ্লেক্স
হাতিয়া উপজেলা মেডিক্যাল অফিসার রোগ নিয়ন্ত্রণ ডা. নিজাম উদ্দিন বলেন, হাতিয়া পৌরসভা ওছখালি তিন নং ওয়ার্ড চরকৈলাশ গ্রামের নেছার উদ্দিনের মেয়ে পলি আক্তার শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা গেছেন। এর ২০মিনিট আগে তাকে হাসপাতালে আনে তার পরিবার। পলির শ্বাস কষ্ট ছিল। শরীরে করোনা উপসর্গ থাকায় তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একই সাথে তার সংস্পর্শে আসা তার বড় বোনেরও নমুনা নেওয়া হয়েছে। লকডাউন করা হয়েছে তার বাড়ী। যেখানে রয়েছে ৪টি পরিবার। আগামী রবিবার নমুনা পরীক্ষার জন্য বিআইটিআইডি চট্টগ্রামে পাঠানো হবে।
মৃতের পরিবারের বরাত দিয়ে ডা. নিজাম উদ্দিন বলেন, পলি আক্তার ও তার বোন ওছাখালীর একটি কম্পিউটারাইস ল্যাবে ল্যাব সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিল। তার মাথা ব্যাথা ও ন্যাকের পলিপে সমস্য থাকায় গত ২মাস আগে ঢাকা থেকে চিকিৎসা নিয়ে ওষুধ খাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। কিছুদিন আগে ঢাকাতে সোহেল নামের এক হাতিয়ার বাসিন্দার করোনা পজিটিভ আসে। সোহেল হাতিয়া থাকা অবস্থায় জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে এই ল্যাবে পরীক্ষার জন্য আনে সোহেলের বাবা। সোহেলের রক্ত ল্যাবে পরীক্ষার কাজ করছিল পলি ও তার বোন। এছাড়াও সোহেলের বাবার সংস্পর্শে আসছিল তারা দুই বোন।
এদিকে নোয়াখালীতে আরও এক যুবকের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ২৮ বছর বয়সী এ যুবকের বাড়ী কুড়িগ্রাম জেলায়। সে একটি ওষুধ কোম্পানীর মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টিটিভ। সে চাটখিল পৌরসভার ছায়েদ ম্যানশন নামের একটা বাসায় ভাড়া থাকতো।
চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ৩০এপ্রিল কুড়িগ্রাম থেকে চাটখিলে আসে ওষুধ কোম্পানীর এ প্রতিনিধি। পরে বিষয়টি জানতে পেরে গত ২মে শনিবার তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার করোনা পজিটিভের রিপোর্টটি আসে। রাতেই তার বাসাটি লকডাউন করা হয়েছে। তাকে আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার সংস্পর্শে আসা বাকীদেরও নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
উল্লেখ, গত ৬মে সন্ধ্যা ৬টার দিকে মারা গেছেন বেগমগঞ্জের মীরওয়ারিশপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বেচুর দোকান এলাকার এড. ফারুকের বাসার ভাড়াটিয়া তারেক হোসেন (৩০)। তার বাড়ী সোনাইমুড়ী উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের পতিশ গ্রামে। একই সন্ধ্যা ৭টার দিকে চট্টগ্রাম নেওয়ার পথে মারা যান সেনবাগ উপজেলার কাদরা ইউনিয়নে উত্তর জামালপুর গ্রামের মৌলভী বাড়ীর জালাল আহম্মদের ছেলে কবির আহম্মদ (৩২)। গত ৫মে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মারা গেছেন চৌমুহনী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইমাম হোসেন (৬০), একইদিন দুপুর ১২টার দিকে মারা গেছেন সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া ইউনিয়নে চিলাদি গ্রামের সোহেল (২৫), ৪মে সোমবার দুপুরে মারা গেছেন সুবর্ণচর উপজেলার উত্তর কচ্ছপিয়া গ্রামে রেশমা আক্তার (৪০) নামের এক গৃহবধূ। ৩মে রবিবার রাতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইউসুফ (৩২) নামের চৌমুহনীর এক বাসিন্দা। ৩মে রবিবার সকালে সেনবাগ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নে নানার বাড়িতে মারা গেছেন মাদ্রাসা ছাত্রী সামিয়া আক্তার (১৩)। তার বাড়ী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার লাউতলি গ্রামে। গত ৩০এপ্রিল বুধবার সকালে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নোয়াখালীর সদর উপজেলার করমুল্যা এলাকার বাসিন্দা রোকসানা আক্তার (১৭)।