ডেস্কঃ
ভারতে করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে নতুন করে আরো এক বিপদ শুরু হয়েছে। হাজির হয়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল। নতুন এই বিপদে মহাচিন্তায় পড়েছেন উত্তর ভারতের চাষিরা। পঙ্গপালের আক্রমণের আশঙ্কায় দেশটির বেশ কিছু রাজ্যে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এরই মধ্যে হিমাচল প্রদেশের মোট ১২টি জেলার চারটিতে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এই চার জেলার মধ্যে রয়েছে কাংরা, উনা, বিলাসপুর ও সোলান।
হিমাচল প্রদেশের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা আর কে কুন্ডাল জানান, মরুভূমির পঙ্গপালের একটি বিশাল ঝাঁক হিমাচল প্রদেশের প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে হানা দিয়ে ফসল ধ্বংস করে দিচ্ছে। পঙ্গপালের দিকে অবিরাম নজরদারি রাখতে এবং জরুরি পরিস্থিতির জন্য মাঠকর্মী ও কৃষকদের সতর্ক করা হয়েছে। এই মরু পঙ্গপাল বাতাসের ওপর নির্ভর করে প্রতি ঘণ্টায় ১৬ থেকে ১৯ কিলোমিটার বেগে উড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে হাওয়ার ওপর তাদের গতিবেগ নির্ভর করে।
এর মধ্যেই ভারতের রাজস্থান রাজ্যের ৩৩টি জেলার ১৬টি পঙ্গপালের কবলে পড়েছে। ফলে শস্য উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পঙ্গপাল হানা দিয়েছে মধ্যপ্রদেশেও। পঙ্গপাল তাড়াতে ড্রাম ও থালাবাটি বাজানোর কথা বলা হয়েছে।
এদিকে, পঙ্গপালের সতর্কবার্তায় উত্তরপ্রদেশের ১০ জেলায় অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পঙ্গপালের দলকে যদি আটকানো না যায়, তাহলে ভারতের শস্যভাণ্ডারে টান পড়তে পারে। পঙ্গপালের বিরাট দল একসঙ্গে হামলা করায় এরা যেকোনো বড় শস্যক্ষেত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফাঁকা করে দিতে পারে।
এবার পঙ্গপালের হানার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে রাজধানী নয়াদিল্লিতেও। উত্তরপ্রদেশ থেকে পঙ্গপালের ঝাঁক দিল্লিতে হানা দিতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। দিল্লি সরকার এর মধ্যেই প্রশাসনকে কীটনাশক ছিটাতে বলেছে। এ ছাড়া ফসল, সবজিক্ষেত ও ফলের বাগানে পতঙ্গনাশক রাসায়নিক ছিটানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছে।
এর মধ্যেই পঙ্গপালের ঝাঁক রাজস্থানে ঢুকে ফসল ধ্বংস করে দিয়েছে এবং পাঞ্জাব, গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশেও একই দশা করেছে। এ ছাড়া মহারাষ্ট্রের নাগপুরে বিপুল পরিমাণে কমলালেবুর ক্ষতি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভারতে চার ধরনের পঙ্গপাল লক্ষ করা যাচ্ছে। এগুলো হলো মরুভূমি পঙ্গপাল, মিগ্রাটরি পঙ্গপাল, বম্বে পঙ্গপাল ও গাছের পঙ্গপাল। এদের মধ্যে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পঙ্গপাল হলো মরুভূমির পঙ্গপাল। এই পঙ্গপালের ঝাঁক দিনে উড়ে বেড়ায় এবং রাতে বিশ্রাম নেয়।
এদিকে, পঙ্গপাল মারতে এবার জলকামান ব্যবহারের সিদ্ধান্তও নিয়েছে ভারত। এর জন্য ফায়ার সার্ভিসের ৮৯টি ইঞ্জিনের মাধ্যমে স্প্রেসহ বিশাল পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষিকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
পঙ্গপালের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের ৮৯টি ইঞ্জিন থেকে কীটনাশক স্প্রে করার পাশাপাশি একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১২০টি সার্ভে যান মোতায়েন করা হয়েছে। এই গাড়িগুলো পঙ্গপালের গতিবিধির ওপর নজর চালাবে এবং তাদের গতিপথ সম্পর্কে অনুসন্ধান করবে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ছাড়াও ৪৭টি গাড়ি থেকে কীটনাশক স্প্রে করা হবে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া একইভাবে কীটনাশক স্প্রে করার জন্য আরো ৮১০টি ট্রাক্টর প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে স্প্রে করার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় এক হাজার যান। প্রয়োজন অনুযায়ী, সেই সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।