ঢাকা ০২:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মালিকানা ছিনতাই করেও এনসিপি সংগঠন হিসেবে ব্যর্থ হয়েছে: নাছির Blind Amjad receives Eid gift from Tarique Zia জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দৃষ্টি হারানো আমজাদ পেলো তারেক জিয়ার ঈদ উপহার ভাড়াটিয়ার দোকানে তালা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা School student murdered in trivial incident: Police unravel mystery নোয়াখালীতে তুচ্ছ ঘটনায় স্কুল ছাত্র খুন: রহস্য উদঘাটন করল পুলিশ তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে কবিরহাটের ইতালি মার্কেটে পথচারীদের মাঝে ইফতার বিতরণ নিখোঁজের ২ দিন পর সেপটিক ট্যাংক থেকে স্কুল ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে কবিরহাটের পথচারীদের মাঝে ইফতার বিতরণ নিজ এলাকায় হামলার শিকার এনসিপি নেতা হান্নান মাসুদ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, আহত-১৫

শুল্ক ছাড়ের সুফল কোথায়? বাড়ল চাল তেল চিনি ও পেঁয়াজের দাম

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:০৪:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪ ৯৫ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

 

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলছে। একটির দাম কমে তো বাড়ে আরো চারটির। এতে ক্রেতাদের স্বস্তি মিলছেই না। এবার বাড়ল চাল তেল চিনি ও পেঁয়াজের দাম। তবে দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য আগেই এই পণ্যগুলোতে শুল্ক-কর ছাড় দিয়েছে সরকার। এরপরেও দাম বাড়ায় প্রশ্ন উঠেছে- শুল্ক ছাড়ের সুফল যাচ্ছে কোথায়?

 

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্য, শুল্কছাড়ের পণ্য এখনো বাজারে আসেনি।

অন্যদিকে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, শুল্ক কমানোর সঙ্গে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে, তাহলে প্রভাব পড়বে। দাম যাতে কমে, সে বিষয়ে নজরদারিও দরকার।

নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে চাপে পড়ে চালের দাম বাড়লে। দেশে দু-তিন বছর ধরেই চালের দাম বেশ চড়া। এ সপ্তাহে খুচরা বাজারে মাঝারি ও সরু চালের দাম কেজিতে ১–৩ টাকা বেড়েছে। বেশি বেড়েছে মাঝারি চালের দাম, যার ক্রেতা স্বল্প আয়ের মানুষ।

ঢাকার কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সোমবার মাঝারি মানের ব্রি-২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ৬১-৬২ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৮-৫৯ টাকা। ব্রি-২৯ চাল কেনা যাচ্ছে ৬২-৬৪ টাকা কেজি। এ চালের দামও কেজিতে ৩ টাকা বেড়েছে।

সরু চালের মধ্যে মিনিকেট ও নাজিরশাইলের দাম কেজিতে ১–২ টাকা বেড়েছে। রশিদ, ডায়মন্ডসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট প্রতি কেজি ৭০–৭২ টাকা এবং ভালো মানের নাজিরশাইল ৮০ টাকা বা তার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের কেজি ৫২–৫৫ টাকা। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়েনি।

কারওয়ান বাজার ও কৃষি মার্কেটের পাইকারি দোকান থেকে বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা চাল কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। দুই বাজারের খুচরা দোকানেও দাম কিছুটা কম থাকে। সে তুলনায় রাজধানীর অন্য বাজার ও পাড়ার খুচরা দোকানে দাম আরো বেশি।

কৃষি মার্কেটের বেঙ্গল রাইস এজেন্সির মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ধানের সরবরাহ কম, এ কারণ দেখিয়ে মিলের মালিকেরা চালের দাম বাড়িয়েছেন।

এখন আমন মৌসুম চলছে। এই মৌসুমে অসময়ের অতিবৃষ্টি ও বন্যায় আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর আসছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমনে উৎপাদন কম হলে চালের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে।

এদিকে দুই দিন আগে সরকার চাল আমদানির শুল্ক–কর কমিয়ে দেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে বলা হয়েছিল, শুল্ক–কর কমানোর ফলে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে। যদিও চাল আমদানি এখনো শুরু হয়নি।

চালের বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরিস্থিতি বুঝে চাল আমদানি বাড়াতে হবে। যাতে বাজারে সরবরাহে কোনো সংকট তৈরি না হয়। ঘাটতির আশঙ্কা থেকে মিলমালিকেরাও সুযোগ নিতে না পারেন।

তেল, চিনি ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে

মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার ভোজ্যতেল ও চিনিতে শুল্ক–কর ছাড় দিয়েছে। যদিও এর প্রভাব এখনো বাজারে পড়েনি। পণ্য দুটির দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহে চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ৩–৪ টাকা। বাজার ও দোকানভেদে এখন এক কেজি খোলা চিনি ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্কছাড়ের চিনি বাজারে এখনো আসেনি।

১৭ অক্টোবরই ভোজ্যতেলের শুল্ক কমানো হয়। ব্যবসায়ীরা মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়ার পর সরকার শুল্ক কমায়, যাতে দাম বাড়াতে না হয়।

কিন্তু সরকারি সংস্থা টিসিবি বলছে, খোলা সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম লিটারে ১–২ টাকা বেড়েছে এক সপ্তাহে। বাজারে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৫৩-১৫৬ টাকা ও পাম তেল ১৪৮-১৫১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত তেলের দাম বাড়েনি।

গত দুই দিনে কেজিতে পেঁয়াজের দাম ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে প্রতি কেজি ১২০-১৩০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম, ১১০-১১৫ টাকা।

দেশে পেঁয়াজের বড় পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমারী হাটের আড়তদার রাজা হোসেন বলেন, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ভারত থেকে আসার পর প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকার ওপরে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে দেশি পেঁয়াজের দামও বাড়িয়েছেন কৃষকেরা।

তিনি জানান, কৃষকের কাছে পেঁয়াজের মজুত শেষের দিকে। বছরের এ সময়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসার কথা। কিন্তু বন্যা-বৃষ্টির কারণে মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগাতে দেরি করেন কৃষকেরা। এটিও মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণ।

দীর্ঘদিন ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের আশপাশে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরো বেশি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভের একটি কারণ ছিল নিত্যপণ্যের দাম। নতুন সরকার দাম কমানোর চেষ্টা করছে। হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির পেছনে অসময়ে বৃষ্টি ও বন্যাকে দায়ী করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক

শুল্ক ছাড়ের সুফল কোথায়? বাড়ল চাল তেল চিনি ও পেঁয়াজের দাম

আপডেট সময় : ০৭:০৪:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

 

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলছে। একটির দাম কমে তো বাড়ে আরো চারটির। এতে ক্রেতাদের স্বস্তি মিলছেই না। এবার বাড়ল চাল তেল চিনি ও পেঁয়াজের দাম। তবে দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য আগেই এই পণ্যগুলোতে শুল্ক-কর ছাড় দিয়েছে সরকার। এরপরেও দাম বাড়ায় প্রশ্ন উঠেছে- শুল্ক ছাড়ের সুফল যাচ্ছে কোথায়?

 

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্য, শুল্কছাড়ের পণ্য এখনো বাজারে আসেনি।

অন্যদিকে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, শুল্ক কমানোর সঙ্গে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে, তাহলে প্রভাব পড়বে। দাম যাতে কমে, সে বিষয়ে নজরদারিও দরকার।

নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে চাপে পড়ে চালের দাম বাড়লে। দেশে দু-তিন বছর ধরেই চালের দাম বেশ চড়া। এ সপ্তাহে খুচরা বাজারে মাঝারি ও সরু চালের দাম কেজিতে ১–৩ টাকা বেড়েছে। বেশি বেড়েছে মাঝারি চালের দাম, যার ক্রেতা স্বল্প আয়ের মানুষ।

ঢাকার কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সোমবার মাঝারি মানের ব্রি-২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ৬১-৬২ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৮-৫৯ টাকা। ব্রি-২৯ চাল কেনা যাচ্ছে ৬২-৬৪ টাকা কেজি। এ চালের দামও কেজিতে ৩ টাকা বেড়েছে।

সরু চালের মধ্যে মিনিকেট ও নাজিরশাইলের দাম কেজিতে ১–২ টাকা বেড়েছে। রশিদ, ডায়মন্ডসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট প্রতি কেজি ৭০–৭২ টাকা এবং ভালো মানের নাজিরশাইল ৮০ টাকা বা তার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের কেজি ৫২–৫৫ টাকা। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়েনি।

কারওয়ান বাজার ও কৃষি মার্কেটের পাইকারি দোকান থেকে বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা চাল কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। দুই বাজারের খুচরা দোকানেও দাম কিছুটা কম থাকে। সে তুলনায় রাজধানীর অন্য বাজার ও পাড়ার খুচরা দোকানে দাম আরো বেশি।

কৃষি মার্কেটের বেঙ্গল রাইস এজেন্সির মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ধানের সরবরাহ কম, এ কারণ দেখিয়ে মিলের মালিকেরা চালের দাম বাড়িয়েছেন।

এখন আমন মৌসুম চলছে। এই মৌসুমে অসময়ের অতিবৃষ্টি ও বন্যায় আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর আসছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমনে উৎপাদন কম হলে চালের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে।

এদিকে দুই দিন আগে সরকার চাল আমদানির শুল্ক–কর কমিয়ে দেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে বলা হয়েছিল, শুল্ক–কর কমানোর ফলে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে। যদিও চাল আমদানি এখনো শুরু হয়নি।

চালের বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরিস্থিতি বুঝে চাল আমদানি বাড়াতে হবে। যাতে বাজারে সরবরাহে কোনো সংকট তৈরি না হয়। ঘাটতির আশঙ্কা থেকে মিলমালিকেরাও সুযোগ নিতে না পারেন।

তেল, চিনি ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে

মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার ভোজ্যতেল ও চিনিতে শুল্ক–কর ছাড় দিয়েছে। যদিও এর প্রভাব এখনো বাজারে পড়েনি। পণ্য দুটির দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহে চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ৩–৪ টাকা। বাজার ও দোকানভেদে এখন এক কেজি খোলা চিনি ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্কছাড়ের চিনি বাজারে এখনো আসেনি।

১৭ অক্টোবরই ভোজ্যতেলের শুল্ক কমানো হয়। ব্যবসায়ীরা মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়ার পর সরকার শুল্ক কমায়, যাতে দাম বাড়াতে না হয়।

কিন্তু সরকারি সংস্থা টিসিবি বলছে, খোলা সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম লিটারে ১–২ টাকা বেড়েছে এক সপ্তাহে। বাজারে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৫৩-১৫৬ টাকা ও পাম তেল ১৪৮-১৫১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত তেলের দাম বাড়েনি।

গত দুই দিনে কেজিতে পেঁয়াজের দাম ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে প্রতি কেজি ১২০-১৩০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম, ১১০-১১৫ টাকা।

দেশে পেঁয়াজের বড় পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমারী হাটের আড়তদার রাজা হোসেন বলেন, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ভারত থেকে আসার পর প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকার ওপরে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে দেশি পেঁয়াজের দামও বাড়িয়েছেন কৃষকেরা।

তিনি জানান, কৃষকের কাছে পেঁয়াজের মজুত শেষের দিকে। বছরের এ সময়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসার কথা। কিন্তু বন্যা-বৃষ্টির কারণে মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগাতে দেরি করেন কৃষকেরা। এটিও মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণ।

দীর্ঘদিন ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের আশপাশে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরো বেশি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভের একটি কারণ ছিল নিত্যপণ্যের দাম। নতুন সরকার দাম কমানোর চেষ্টা করছে। হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির পেছনে অসময়ে বৃষ্টি ও বন্যাকে দায়ী করা হচ্ছে।