নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে এক ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্যের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী।
হামলার শিকার ইউপি চেয়ারম্যান মো. হানিফ সবুজ (৫০) উপজেলার ৪নং চরকাঁকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ ফরিদ খোকন (৪৫)।
তারা সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অনুসারী। অপরদিকে, হামলাকারী আওয়ামীলীগ নেতা ফখরুল ইসলাম সবুজ ও ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওমর ফারুক সবুজ ও তাঁর ভাই রনি এবং প্রদীপ, দুলাল, সাইফুল ইসলাম, লাভলু তারা মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার অনুসারী।
মঙ্গলবার (৭ জুন) সন্ধ্যা ৭টার দিকে চরকাঁকড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সালেহ আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে ওই ইউনিয়নের পেশকারহাট রাস্তার মাথা বাজারে এ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, চরকাঁকড়া ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জামাল উদ্দিন, ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দিদার হোসেন সৌরভ, উপজেলা যুবলীগ নেতা রবিউল আউয়াল সোহেল প্রমূখ। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা অনতিবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানান।
একই সময়ে চেয়ারম্যানের উপর হামলার ঘটনায় মামলা নেওয়া ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে পেশকার হাট রাস্তার মাথা বাজারে চেয়ারম্যানের সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ হামলার ঘটনায় মামলা নেওয়া ও আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
এর আগে গত সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সীমান্তবর্তী বিল্লা বাড়ির সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ সবুজ অভিযোগ করে বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইউপি সদস্য খোনকসহ আমি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে বের হই। বের হলে আমি দেখি মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার অনুসারী ফখরুল ইসলাম সবুজ ও তাঁর ভাতিজারাসহ ইউপি সদস্য সবুজ এবং তাঁর ভাই রনি, প্রদীপ, দুলাল, সাইফুল ইসলাম, লাভলু সহ ২০-৩০ জন ইউনিয়ন পরিষদের সামনের রাস্তায় ওঁৎ পেতে আছে। ওই সময় তারা উল্টো পথে গিয়ে বিল্লা বাড়ির সামনে আমার গতিরোধ করে আমার ওপর হকিস্টিক, লোহার রড, হাতুড়ি দিয়ে অতর্কিত আক্রমন চালিয়ে আমার একটি পা, বুকের পাজর ভেঙ্গে দেয় এবং মাথা ফাটিয়ে দেয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের মির্জা অনুসারী আওয়ামীলীগ নেতা মো. ফখরুল ইসলাম সবুজ ও ইউপি সদস্য মো. ওমর ফারুক সবুজ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে দাবি করেন তারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জা ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ সবুজ এবং একজন সদস্যের উপর নিজের অনুসারীদের হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন । তিনি বলেন, স্থানীয় একটি বিরোধ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের উপর হামলা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁরা কেউই তাঁর অনুসারী নন। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
আব্দুল কাদের মির্জা বসুরহাট পৌরসভার মেয়র এবং আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আপন ছোট ভাই।
অপরদিকে, গত সোমবার ৬জুন সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান ওপর হামলার প্রতিবাদে ও জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ইউপি কার্যালয়ের সব নাগরিক সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পরিষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সকল ইউপি সদস্য মিলে এ সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণে আজ মঙ্গলবার অনেক সেবাগ্রহীতা ইউপি কার্যালয়ে এসে ফিরে গেছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, কারও ব্যক্তিস্বার্থে ইউপি কার্যালয়ে নাগরিক সেবা বন্ধ থাকতে পারে না। কেউ হামলার শিকার হলে থানায় মামলা করবেন, পুলিশ সেটি দেখবে। তিনি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে থানার ওসিকে বলেছেন। সেবাপ্রত্যাশীরা এসে সেবা না পেলে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।