ক্রীড়াঙ্গন ডেস্ক:
বাংলাদেশি স্পিনারদের তোপের মুখে দাঁড়াতেই পারছে না আইরিশরা। প্রথম ইনিংসে ১৫৫ রানে পিছিয়ে থেকে আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে পড়েছে বিপদে।
৮ রানের মধ্যে হারিয়ে বসেছে ৩ উইকেট। ইনিংসের প্রথম ওভারেই আঘাত হেনেছেন সাকিব আল হাসান। চতুর্থ বলটি সরাসরি আইরিশ ওপেনার জেমস ম্যাককলামের প্যাডে লাগে। কিন্তু আম্পায়ার আলিম দার সাকিবের আবেদনে সাড়া দেননি।
টাইগার অধিনায়ক এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে নিয়ে নেন রিভিউ। রিভিউতে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন আম্পায়ার। শূন্যতে এলবিডব্লিউ হন ম্যাককলাম, ১ রানে প্রথম উইকেট হারায় আইরিশরা।
আইরিশদের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে ৭ রানে। এবার তাইজুল ইসলামের বল প্যাডে লাগে মুরে কমিন্সের। আবেদন হলে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। কমিন্স রিভিউ নিয়েছিলেন। রিপ্লেতে দেখা যায় বল স্টাম্পের ওপরের অংশে লাগতো। আম্পায়ার্স কলে ফিরতে হয় কমিন্সকে (১)। এরপর তাইজুল বোল্ড করেন আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নিকে (৩)।
এরপর সাকিবের দ্বিতীয় শিকার হন কুর্তিস ক্যাম্ফার। ক্যাম্ফারের (১) ব্যাটে বলের হালকা ছোঁয়া লেগে সেটি চলে যায় উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে।
এর আগে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ৮০.৩ ওভারে অলআউট হয়েছে ৩৬৯ রানে। দলের শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন মিরাজ। ৮০ বলে ৫৫ রানের ইনিংসে ৬টি বাউন্ডারি আর ২টি ছক্কা হাঁকান এই অলরাউন্ডার।
আইরিশ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল অ্যান্ডি ম্যাকব্রিন। ১১৮ রান দিয়ে এই অফস্পিনার একাই শিকার করেন ৬ উইকেট।
বাংলাদেশ বড় লিড পেয়েছে মূলত মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে। ইনিংসটা বড় হচ্ছিল আস্তে আস্তে। তবে একটা সময় ধৈর্যচ্যুতি ঘটেই গেলো ডানহাতি এই ব্যাটারের। আইরিশ অফস্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনকে তুলে মারতে গিয়ে লংঅনে দুর্দান্ত এক ক্যাচ হন মুশফিক।
১৬৬ বলে গড়া মুশফিকের ১২৬ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংসটিতে ছিল ১৫ বাউন্ডারি আর ১টি ছক্কার মার। তিনটি জুটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। সাকিবের সঙ্গে ১৫৯, লিটনের সঙ্গে ৮৭ আর মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গে ৪৫ রান যোগ করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।
তার আগে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়ে তুলেছিলেন সাকিব। ১৫৯ রানের দুর্দান্ত এই জুটি বাংলাদেশকে লিড নেয়ার পর্যায়েও নিয়ে এসেছিলো। সাকিবও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু এক-দুটা বলে রান করতে না পারলে হঠাৎ করেই যেন ধৈর্যচ্যুতি ঘটে বাংলাদেশের ব্যাটারদের।
সাকিব আল হাসানেরও তেমনটা হয়েছে। ধৈর্যচ্যুতি ঘটার কারণে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে থাকা একটি বলে কট বিহাইন্ড হয়ে গেলেন তিনি। লেগ সাইডে ফিল্ডিং পুরোপুরি ফাঁকা রেখেছিলো আয়ারল্যান্ড। আর বোলার অ্যান্ড ম্যাকব্রাইন বল করছিলেন টানা অফ স্ট্যাম্পের বাইরে।
এই ফাঁদেই পা দেন সাকিব। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল টেনে এনে শট খেলতে চাচ্ছিলেন বারবার। অবশেষে বলটা মিস করলেন তিনি। ব্যাটের উপরের কানায় লেগে গিয়ে বলটি জমা পড়লো উইকেটরক্ষকের হাতে। দলীয় ১৯৯ রানের মাথায় আউট হলেন সাকিব। এ সময় তার নামের পাশে শোভা পাচ্ছিল ৯৪ বলে ৮৭ রান।
এর আগে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারের ওপর ভর করে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছিলো বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের করা ২১৪ রানের জবাব দিতে নেমে শুরুতে কিছুটা বিপদে পড়ে টাইগাররা। কিন্তু অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের দৃঢ়তায় সে বিপদ কাটিয়ে ওঠে স্বাগতিকরা।
ঝোড়ো গতিতে ব্যাট করে প্রথমে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন অধিনায়ক সাকিব। ঝোড়ো গতিতে না হলেও তার দেখাদেখি হাফসেঞ্চুরির মাইলফলক পার হন মুশফিকুর রহিমও। ৬৯ বলে ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি।
৩৪ রান নিয়ে দিন শুরু করার পরপরই মুমিনুল হকের উইকেট হারিয়ে দারুণ বিপদে পড়েছিলো বাংলাদেশ। এরপর সেই বিপদ থেকে টাইগারদের টেনে তোলার গুরুদায়িত্ব পালন করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম।
আগের দিন নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হয়েছেন শূন্য রানে। তামিম ইকবাল আউট হন দিনের শেষ বলে ২১ রান করে। আর দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ১৭ রান করে বিদায় নেন মুমিনুল হকও। ৪০ রানের মধ্যে অভিজ্ঞ তিন ব্যাটার আউট হওয়ার পর বেশ চাপে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে মুশফিক আর সাকিবের প্রতিরোধ।
প্রথম দিন শেষ বিকেলে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারিয়ে অস্বস্তি নিয়ে দিন শেষ করেছিলো টাইগাররা। রান ছিল ৩৪। ১৮০ রানে তখনও পিছিয়ে বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় আজ সকালে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুমিনুল হক এবং মুশফিকুর রহিমের ওপর প্রত্যাশা ছিল সবচেয়ে বেশি। এ দু’জন ভালো একটা জুটি গড়বেন এবং বাংলাদেশকে একটা শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবেন, এ প্রত্যাশা নিয়ে সকাল সকাল মানুষ খেলা দেখতে বসেছিলেন।
কিন্তু সকালের খেলা শুরু হতে না হতেই বোল্ড হয়ে যান মুমিনুল হক (৩৪ বলে ১৭)। মার্ক অ্যাডেয়ারের বলটি ছিল লেগ স্ট্যাম্পের ওপর ফুল লেন্থের। মুমিনুল এক পা এগিয়ে এসে স্কয়ার লেগের ওপর কাট করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিচু হয়ে আসা বলটির লাইনেই যেতে পারলেন না। তার আগে দেখলেন নিজের স্ট্যাম্প উড়ে গেলো।