এনকে বার্তা ডেস্ক::
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দু’মাসেরও অধিক সময় বন্ধ থাকার পর সীমিত পরিসরে সব কিছুই খুলছে রোববার। সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহণসহ সব ধরণের কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে বন্ধ থাকছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এদিকে গণপরিবহন চালুর সরকারি সিদ্ধান্তের পর বাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ। তবে রেল, লঞ্চ এবং বিমান ভাড়া অপরিবর্তিত থাকবে।
দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল প্রথম দফায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর কয়েক দফায় সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়।
২৬ এপ্রিল থেকে ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগ এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারের ১৮টি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ও বিভাগগুলো সীমিত পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। ১৯ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
২৮ মে সাধারণ ছুটি না বাড়িয়ে অফিস খোলার এই ঘোষণা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ সময় কঠোর বিধি-নিষেধ মেনে ১৫ জুন পর্যন্ত সর্বসাধারণের চলাচলেরও অনুমতি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
অফিস খোলার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক আদেশে বলা হয়েছে, ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিসগুলো নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে।
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তানসম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না বলেও ওই আদেশে বলা হয়েছে।
বন্ধ থাকা যানবাহন চালুর নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শর্ত সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি-নিষেধ নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে। তবে সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। এদিকে সড়কে বাস চালাচলের বিষয়ে ১৩টি, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচলের বিষয়ে ১৪টি করে ও বিমান চলাচলের বিষয়ে ১০টি কারিগরি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এদিকে সংকটের সময়ে বাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বাস-মিনিবাস ও আন্তঃজেলা সব ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে সরকারি এই সংস্থাটি।
এছাড়াও প্রতিটি বাসে আসনের অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী বহন করতে পারবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। শনিবার বিআরটিএ’র ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে বিআরটিএ’র কর্মকর্তা ছাড়াও মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে বিদ্যমান ভাড়ায় রোববার থেকে আপাতত লঞ্চ চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তবে ভাড়া বাড়বে কিনা- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, জীবন ও জীবিকার তাগিদে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও স্বাভাবিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হতে হবে।
গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীদের মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতে একটি বাসের মোট আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে হবে।
রোববার থেকে চালু হচ্ছে স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনা অনুযায়ী, পূর্বের সময়সূচী অনুযায়ী ব্যাংকের লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। আর লেনদেন পরবর্তী ব্যাংকের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য শাখা ও প্রধান কার্যালয় বিকাল ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
তবে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সীমিত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে। একই সাথে চালু হচ্ছে শেয়ার বাজারের লেনদেন। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম তিন জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশের পর শেয়ার বাজারে ধস নামা শুরু হয়। এরপর কয়েক দফায় দরপতন হতে থাকে। পরবর্তীতে ১৯ মার্চ থেকে শেয়ার বাজারে লেনদেনের সময় একঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়।
এদিকে করোনা সংক্রমণে মৃত্যু যখন বাড়ছে তখন সবকিছু খুলে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে ভালো ভাবে দেখছেন না স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সীমিত পরিসরে বলা হলেও জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ ঘরের বাইরে বের হলে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগের মতো আরো দুই সপ্তাহ লোকজনকে ঘরে ধরে রাখা হলে ভালো হতো বলে মন্তব্য করেন তারা।