ঢাকা ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

পুষ্টি উদ্যোগে বাধা করোনা, প্রধানমন্ত্রীর ৫ দফা প্রস্তাব

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৪২:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩৫১ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাসস

করোনাভাইরাস চ্যালেঞ্জ এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই মহামারী পুষ্টি উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য বাধার সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য এবং পুষ্টির উপর এর প্রভাবগুলির সাথে কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) ‘টোকিও নিউট্রিশন ফর গ্রোথ (এন ফোর জি) সামিট ২০২১’ এ ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

জাতিসংঘের পুষ্টি বিষয়ক কর্মের দশকের মাঝপথে একটি সংকটজনক সময়ে এই শীর্ষ সম্মেলনটি আসায়, তিনি অভিমত দেন যে, ‘সব ধরনের অপুষ্টির অবসান ঘটাতে একটি বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সাহসী অঙ্গীকারের সময় এসেছে।’

তিনি বলেন, সব নাগরিকের জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করা একটি কঠিন কাজ, পুষ্টি নিরাপত্তায় বিনিয়োগ উচ্চ আর্থ-সামাজিক রিটার্ন তৈরি করে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে নিয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

তাঁর প্রথম প্রস্তাবে, তিনি বলেন, পুষ্টি কর্মসূচিতে এর প্রভাবসহ কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসাথে কাজ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, তিনি উচ্চ ফলনশীল পুষ্টিকর খাবারের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য গবেষণার অগ্রগতির জন্য সহযোগিতা বাড়ানোর অভিমত ব্যক্ত করেন।

এছাড়াও, তিনি তাঁর তৃতীয় প্রস্তাবে জরুরি বিপর্যয়ে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্য ব্যাংক গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

চতুর্থত, প্রধানমন্ত্রী খাদ্যে পুষ্টি উপাদান বৃদ্ধির জন্য সর্বোত্তম অনুশীলন এবং দক্ষতা বিনিময়ের উপর জোর দেন।

চূড়ান্ত প্রস্তাবে, তিনি সকলকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জলবায়ু অভিযোজন তহবিল বিতরণ করার জন্য এবং জলবায়ুর দ্বারা সংঘটিত দুর্যোগের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য আহ্বান জানান, কারণ এটি উন্নয়নশীল বিশ্বে খাদ্য উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ গত এক দশকে অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিতে অভূতপূর্ব সাফল্য এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।

তিনি উল্লেখ করেন যে, তাঁর সরকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পুষ্টি বাড়াতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি বলেন, এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা-বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য ভাতা, অসচ্ছল গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য নগদ ভাতা, স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য মধ্যাহ্নভোজ।

সরকার প্রধান যোগ করেন, ‘আমরা খাদ্য নিরাপত্তা এবং উন্নত পুষ্টির লক্ষ্যে শস্য, শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম এবং ফলের উৎপাদনে বৈচিত্র এনেছি।’

তিনি বলেন, তাঁদের এসব কর্মকান্ড লভ্যাংশ দেওয়া শুরু করেছে কারণ গত এক দশকে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে এ নেমে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, দেশ তার শিশুর পুষ্টি অর্জনের পথে রয়েছে কারণ অপুষ্টির হারও হ্রাস পেয়েছে এবং শিশুদের স্টান্টিং ২০০৭ সালে ৪৩ শতাংশ থেকে ২০১৭ সালে ৩১ শতাংশে এ নেমে এসেছে যা এখন ডব্লুওএইচও’র সমালোচনামূলক প্রান্তের নীচে।

একই সময়ের মধ্যে ওয়েস্টিং ১৭ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ এবং কম ওজন ৪৩ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশে এ হ্রাস পেয়েছে, তিনি বলেন, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন ২ দশমিক ৪ শতাংশ যেখানে আঞ্চলিক হার ৫ শতাংশ এবং বিশ্বব্যাপী ৬ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এসডিজি অর্জন এবং পুষ্টির ফলাফল উন্নত করার জন্য পূর্ববর্তী পুষ্টি সম্মেলনে আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলিকে শক্তিশালী করা।’

‘আজ, আমরা ১২টি প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে অপুষ্টির দ্বিগুণ বোঝা মোকাবেলা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যা এসডিজি-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এগুলি একটি বহু-খাতগত পদ্ধতির মাধ্যমে অর্জন করা হবে, দেশীয় এবং উন্নয়ন উভয় অর্থায়নের মাধ্যমে।’

উচ্চ পর্যায়ের এই অধিবেশনে আরো বক্তৃতা করেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশোদা ফুমিও, ডিআরসি প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স আন্তোইন শিসেকেদি শিলোম্বো, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস, ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ডক্টর টেড্রোস আধানম এবং ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোরসহ অন্যরা।

এছাড়াও, পূর্ব তিমুরের প্রধানমন্ত্রী তাউর মাতান রুয়াক এবং এল সালভাদরের ফার্স্ট লেডি গ্যাব্রিয়েলা রদ্রিগেজের ভিডিও বার্তাও প্রচার করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

পুষ্টি উদ্যোগে বাধা করোনা, প্রধানমন্ত্রীর ৫ দফা প্রস্তাব

আপডেট সময় : ১১:৪২:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

বাসস

করোনাভাইরাস চ্যালেঞ্জ এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই মহামারী পুষ্টি উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য বাধার সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য এবং পুষ্টির উপর এর প্রভাবগুলির সাথে কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) ‘টোকিও নিউট্রিশন ফর গ্রোথ (এন ফোর জি) সামিট ২০২১’ এ ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

জাতিসংঘের পুষ্টি বিষয়ক কর্মের দশকের মাঝপথে একটি সংকটজনক সময়ে এই শীর্ষ সম্মেলনটি আসায়, তিনি অভিমত দেন যে, ‘সব ধরনের অপুষ্টির অবসান ঘটাতে একটি বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সাহসী অঙ্গীকারের সময় এসেছে।’

তিনি বলেন, সব নাগরিকের জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করা একটি কঠিন কাজ, পুষ্টি নিরাপত্তায় বিনিয়োগ উচ্চ আর্থ-সামাজিক রিটার্ন তৈরি করে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে নিয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

তাঁর প্রথম প্রস্তাবে, তিনি বলেন, পুষ্টি কর্মসূচিতে এর প্রভাবসহ কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসাথে কাজ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, তিনি উচ্চ ফলনশীল পুষ্টিকর খাবারের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য গবেষণার অগ্রগতির জন্য সহযোগিতা বাড়ানোর অভিমত ব্যক্ত করেন।

এছাড়াও, তিনি তাঁর তৃতীয় প্রস্তাবে জরুরি বিপর্যয়ে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্য ব্যাংক গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

চতুর্থত, প্রধানমন্ত্রী খাদ্যে পুষ্টি উপাদান বৃদ্ধির জন্য সর্বোত্তম অনুশীলন এবং দক্ষতা বিনিময়ের উপর জোর দেন।

চূড়ান্ত প্রস্তাবে, তিনি সকলকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জলবায়ু অভিযোজন তহবিল বিতরণ করার জন্য এবং জলবায়ুর দ্বারা সংঘটিত দুর্যোগের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য আহ্বান জানান, কারণ এটি উন্নয়নশীল বিশ্বে খাদ্য উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ গত এক দশকে অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিতে অভূতপূর্ব সাফল্য এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।

তিনি উল্লেখ করেন যে, তাঁর সরকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পুষ্টি বাড়াতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি বলেন, এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা-বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য ভাতা, অসচ্ছল গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য নগদ ভাতা, স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য মধ্যাহ্নভোজ।

সরকার প্রধান যোগ করেন, ‘আমরা খাদ্য নিরাপত্তা এবং উন্নত পুষ্টির লক্ষ্যে শস্য, শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম এবং ফলের উৎপাদনে বৈচিত্র এনেছি।’

তিনি বলেন, তাঁদের এসব কর্মকান্ড লভ্যাংশ দেওয়া শুরু করেছে কারণ গত এক দশকে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে এ নেমে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, দেশ তার শিশুর পুষ্টি অর্জনের পথে রয়েছে কারণ অপুষ্টির হারও হ্রাস পেয়েছে এবং শিশুদের স্টান্টিং ২০০৭ সালে ৪৩ শতাংশ থেকে ২০১৭ সালে ৩১ শতাংশে এ নেমে এসেছে যা এখন ডব্লুওএইচও’র সমালোচনামূলক প্রান্তের নীচে।

একই সময়ের মধ্যে ওয়েস্টিং ১৭ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ এবং কম ওজন ৪৩ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশে এ হ্রাস পেয়েছে, তিনি বলেন, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন ২ দশমিক ৪ শতাংশ যেখানে আঞ্চলিক হার ৫ শতাংশ এবং বিশ্বব্যাপী ৬ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এসডিজি অর্জন এবং পুষ্টির ফলাফল উন্নত করার জন্য পূর্ববর্তী পুষ্টি সম্মেলনে আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলিকে শক্তিশালী করা।’

‘আজ, আমরা ১২টি প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে অপুষ্টির দ্বিগুণ বোঝা মোকাবেলা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যা এসডিজি-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এগুলি একটি বহু-খাতগত পদ্ধতির মাধ্যমে অর্জন করা হবে, দেশীয় এবং উন্নয়ন উভয় অর্থায়নের মাধ্যমে।’

উচ্চ পর্যায়ের এই অধিবেশনে আরো বক্তৃতা করেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশোদা ফুমিও, ডিআরসি প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স আন্তোইন শিসেকেদি শিলোম্বো, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস, ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ডক্টর টেড্রোস আধানম এবং ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোরসহ অন্যরা।

এছাড়াও, পূর্ব তিমুরের প্রধানমন্ত্রী তাউর মাতান রুয়াক এবং এল সালভাদরের ফার্স্ট লেডি গ্যাব্রিয়েলা রদ্রিগেজের ভিডিও বার্তাও প্রচার করা হয়।