সুবর্ণচরে মাকে পাঁচ টুকরো করে হত্যার রহস্য উদঘাটন করল পুলিশ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২০

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

 

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের নুরজাহান বেগম (৫৭) নামে এক নারীকে পাঁচ টুকরো করে হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।

নিহতের ছেলে হুমাযুনসহ তারা ৭ সহযোগী মিলে ভিকটিমকে হত্যা করে খন্ডিত টুকরোগুলো পাওনাধারদের ধান ক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে।

নৃশংস রহস্যাবৃত এ হত্যার ঘটনায় প্রথমে ভিকটিমের ছেলে হুমায়ুন কবির হুমা (২৮) বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরে পুলিশ তদন্তে নামলে হত্যার সাথে সরাসরি সন্তানের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। একইসাথে তার সাথে তার ৭ সহযোগী এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

পুলিশ বলছে, ৭ আসামির মধ্যে ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে দুইজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। একই সাথে আটক নিহতের ছেলের বন্ধু নিরব ও কসাই নুর ইসলামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকন্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাপাতি, বালিশ, কোদাল, ভিকটিমের ব্যবহৃত কাপড় উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১১টায় নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার অফিসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চট্রগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

জানা যায়, নিহত নারীর ছেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা করে এই হত্যাকন্ডে ঘটিয়েছে। নিহত নারীর দুই সংসারের দুই ছেলে ছিল। আগের সংসারের ছেলে বেলাল তার মা ভিকটিমকে জিম্মা রেখে এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা সুদের উপর ঋণ নেয়। ঋণ রেখে দেড় বছর আগে বেলাল মারা যায়। এরপর বেলালের ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য তার পরের সংসারের ভাই হুমায়নকে পাওনাদাররা চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। হুমায়ন তার মাকে এ বিষয়ে অবহিত করে। তার মা ভিকটিম হুমায়নকে তার ১৩ শতক জমি বিক্রি করে এ ঋণ পরিশোধ করার জন্য বলে। হুমায়ন প্রতি উত্তরে তার মাকে জানান মায়ের মালিকানাধীন ১৪ শতক ও বেলালের স্ত্রীর মালিকানাধীন ১০ শতক জমি বিক্রি করে বেলালের ঋণ পরিশোধ করা হোক। এতে তার মায়ের জোর অসম্মতি ছিল। অপরদিকে ভিকটিম তার ভাই দুলালের কাছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা ছিল। পাওনা টাকা পরিশোধ করার জন্য সে ভাইকে প্রায় চাপ প্রয়োগ করত। এ কারণে হুমায়নের মামাতো ভাই কালাম ও মামাতো বোনের জামাই সুমন ভিকটিমের উপর বেজায় রুষ্ট ছিল।

এ ছাড়াও ভিকটিমের বাড়ির পাশের প্রতিবেশী ইসমাইল ও হামিদের বেলালের জমির প্রতি লোভ ছিল। তাই তারাও হুমায়নকে প্রত্যক্ষ হত্যাকান্ডে সহযোগীতা করে।

হুমায়ন জবানবন্দিতে জানান, বেলালের স্ত্রীর জমি থেকে ২শতাংশ হামিদকে বাকী ৮শতাংশ ইসমাইলকে দেওয়া হবে বলে মৌখিক ভাবে সিন্ধান্ত হয়েছে। তারপর মায়ের জমি সমান ৫ভাগে ভাগ করে হুমায়ন, নোমান, সুমন, কালাম ও কসাই নুর ইসলামকে দেওয়া হবে। এ প্রতিশ্রুতিতে সকল ব্যক্তিরা গত (৬ অক্টোবর ) সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে একটি ব্রিজের উপর বসে হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করে।

পরে হুমায়ন, কালাম, সুমন ও অন্যান্য আসামিদের সহযোগীতায় ঐ রাতের কোন এক সময়ে ঘরের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে ভিকটিমকে হত্যা করে বটি, চাপাতি, কোদাল দিয়ে ৫খন্ড করে পাওনাদারদের ধান ক্ষেতে শরীরের ৫ টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে তারা। প্রেস ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো.আলমগীর হোসেন।

নিহত নুরজাহান বেগম উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মৃত আবদুল বারেকের স্ত্রী। তিনি আট ছেলে ও এক মেয়েসহ ৯ সন্তানের জননী।

উল্লেখ্য, গত (৭ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের উত্তর জাহাজ মারা গ্রামের প্রভিডা ফিডের পিছনের একটি ধান ক্ষেত থেকে ওই গৃহবধূর টুকরো টুকরো মরদেহের সন্ধান পায়।

এর আগে ছেলে হুমায়ন কবির জানিয়েছিল, বুধবার ভোর থেকে তার মা নিখোঁজ ছিল। পরে স্থানীয় এক নারী বিকালে ধানক্ষেতের আইলে শামুক খুঁজতে এসে একটি টুকরো টুকরো মরদেহ দেখতে পায়। পরে সে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মায়ের মরদেহ শনাক্ত করে।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০