স্মৃতি বিজড়িত জাতীয় কবির আট চালা ঘর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৪
স্মৃতি বিজড়িত জাতীয় কবির আট চালা ঘর
জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত আট চালা ঘর।

নিজস্ব প্রতিবেদক:

 

 

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গায় এই আট চালা ঘরে থাকতেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এই ঘরে বসে লিখেছেন বেশ কয়েকটি বই। এই এলাকায় রয়েছে কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত বাবুদের তালপুকুর নামের কবিতা, ভৈরব নদীরপাড়ে সানবাধাঁনো ঘাট স্মৃতি হয়ে রয়েছে।

 

দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের শেষ মাথায় মেইন সড়কের পূর্ব দিকে মিশন পল্লীতে রয়েছে এই আট চালা ঘর। সড়কের পশ্চিম দিকে বাবুদের তালপুকুর ও আট চালা ঘরের উত্তর দিকে রয়েছে ভৈরব নদীর সানবাধাঁনো ঘাট। যেখানে বসতেন কবি নজরুল ইসলাম। ঐ সময়ের মাটির দেওয়াল ও খড়ের ছাউনির সেই ঘরের স্মৃতি ধরে রাখতে ঘরটি ভেঙে ইটের দেয়াল তুলে প্লাস্টার করে সমস্ত ঘরে কাদার প্রলেদ দিয়ে রাখা হয়েছে। যা সময়ে সময়ে খসে পড়ে।

স্মৃতি বিজড়িত জাতীয় কবির আট চালা ঘর

প্রতি বছর ঘরটি খড় দিয়ে ছাওয়া হয়ে থাকে। তবে অনেক কিছুরই অস্তিত্ব নেই এখন সেখানে। তৎকালীন সময়ে তালপুকুরের চারপাশে ছিল সারিসারি তাল গাছ। বর্তমানে পুকুরটিই রয়েছে। তবে পুকুরপাড়ে তালগাছের কোনো অস্তিত্ব নেই। কার্পাসডাঙ্গায় সরকারিভাবে নজরুল স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার দাবি জানান এলাকাবাসী।

স্থানীয় প্রবীণরা জানান, ঐ সময় লেখাপড়া বা চাকরির সুবাদে কার্পাসডাঙ্গার অনেকে ভারতের কলকাতা শহরে বসবাস ও ব্যবসা করতেন। তখন কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে কার্পাসডাঙ্গার মিশন পল্লীর হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের। হর্ষপ্রিয় বিশ্বাস ছিলেন তৎকালীন নদীয়া কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক।

স্মৃতি বিজড়িত জাতীয় কবির আট চালা ঘর
১৯২৬ ও ১৯২৮ সালে কবি কার্পাসডাঙ্গা মিশন পল্লীর মহিন সরকারের আমন্ত্রণে কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকে পানিপথে স্বপরিবারে কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। সে সময় ভারতবর্ষে চলছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম গঠন করেছিলেন ‘শ্রমিক প্রজা কৃষক পাটি’।

রাজনৈতিক কারণে তিনি স্বপরিবারে আসেন কার্পাসডাঙ্গায়। তিনি নদীয়া কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের বাড়ির আট চালা ঘরে উঠেন। এখানে তিনি টানা দুই মাস অবস্থান করেন। ঐ ঘরটিতে স্বদেশি বিপ্লবী রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক করতেন তিনি।

স্মৃতি বিজড়িত জাতীয় কবির আট চালা ঘর
এখন হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের উত্তরসুরিরা নিজ অর্থ ব্যয় করে নজরুলের স্মৃতিঘেরা বাড়িটি টিকিয়ে রেখেছেন। ঐ সময় কার্পাসডাঙ্গার ভৈরব নদের তীরে বসেই সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রচনা করেছেন। ভৈরব নদের তীরে কবির স্মৃতি ধরে রাখতে যে স্থানে কবি বসতেন, সেখানে করা হয়েছে সানবাধাঁনো ঘাট। এখানকার জীবনযাত্রা ও পরিবেশ তাকে সাহিত্যকর্ম করতে উৎসাহিত করেন। তিনি এখানে লিখেছেন মৃত্যুক্ষুধা ও পদ্মগোখরো এবং লিচুচোর কবিতাসহ অনেক গান।

কবির স্মৃতিঘেরা সে বাড়িতে এখন থাকছেন হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের পরিবারের সদস্যরা। হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের দুই ছেলে-প্রকৃতি বিশ্বাস ওরফে বকুল বিশ্বাস ও প্রণতি বিশ্বাস ওরফে মধু বিশ্বাস এখন ওই বাড়িতে থাকেন। যে ঘরে কবি থাকতেন সেই ঘরে সস্ত্রীক থাকেন বকুল বিশ্বাস (স্ত্রী মণি বিশ্বাস ও তাদের দুই সন্তান)।

 

বকুল বিশ্বাস বলেন, ‘ছনের এই ঘরটির পেছনে প্রতিবছরই কিছু টাকা খরচ হয়। এই ঘরটি ভেঙে একই স্থানে একই আদলে একটি কংক্রিটের ঘর তৈরি করে পর্যটকদের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়াই আমার ইচ্ছা। কিন্তু সামর্থ্যে কুলাচ্ছে না। সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নিলে জমি দেওয়াসহ সার্বিক সহযোগিতা করার ইচ্ছা রয়েছে পরিবারের সদস্যদের।’

 

নজরুল স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জানান, কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি ধরে রাখতে ১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কার্পাসডাঙ্গা হাইস্কুল মাঠে স্থানীয়দের উদ্যোগে নজরুল মেলার আয়োজন করা হয়। স্থানীয় হাইস্কুল চত্বরে নির্মাণ করা হয় নজরুল মঞ্চ। এই এলাকার প্রভাবশালি ইব্রাহিমের পুত্র প্রকৌশলী ম. এনামুল হক ২০০৪ সালে কার্পাসডাঙ্গায় নজরুল নামকরণ করার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করেন।

 

২০১৩ সালের ৭ ডিসেম্বর নজরুল সম্মেলনে ম. এনামুল হক নজরুল স্মৃতিভূমি আনুমোদনের বিস্তারিত তুলে ধরে কার্পাসডাঙ্গায় নজরুল স্মৃতিভূমি পেতে চায়। ২০১৫ সালে কার্পাসডাঙ্গায় ১০দিন ব্যাপি নজরুল মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ বছরই ১২ মে নজরুলের জন্ম জয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো ৫০ হাজার টাকা সরকারি অনুদান পাওয়ায় জাতীয় স্বীকৃতি পায়।

 

২০১৬ সালের ২৬ আগস্ট নজরুর সম্মেলনে ঐ সময়কার সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর আসেন এখানকার আট চালা ঘর পরিদর্শন করেন ও নজরুল চর্চা কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রতি দেন। ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি সাবেক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এই ঘর পরিদর্শন করেন। এরপর নজরুল ইসলামের ৪৪তম মৃত্যু দিবসে ভার্চুয়াল স্বরণসভায় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ হাসান কার্পাসডাঙ্গায় নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র ও ভাস্কর্য নির্মাণের প্রতিশ্রতি দেন।

 

২০২০ সারের ১৩ সেপ্টেম্বর নজরুল ইনস্টিটিউট এর নির্বাহী পরিচালক চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহিদুল ইসলাম আট চালা ঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় তার নির্দেশে প্রকল্প প্রস্তুত করে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর থেকে এর আর কোনো অগ্রগতি নেই। কার্পাসডাঙ্গায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান এলাকাবাসী।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০