এবছর বোরো ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে!!
- আপডেট সময় : ০৫:০৮:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ মে ২০২০ ১৯০৩ বার পড়া হয়েছে
এনকে বার্তা ডেস্ক:
দেশে করোনা পরিস্থিতিতে এবছর বোরো ধানের উদ্বৃত্ত উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কৃষিবিদ ও কৃষি-কর্মকর্তাগণ। ইতোমধ্যেই দেশের হাওর অঞ্চল থেকে ৯৮ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে, যা মোট বোরো আবাদের ২০ শতাংশ।
আজ রোরবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) কর্মকর্তা ড. আলহাজ উদ্দিন জানান, বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা আশাবাদী, কারণ, কৃষি মন্ত্রণালয় হাওর অঞ্চলে শ্রমিক সংকট নিরসনের জন্য যথাসময়ে পদক্ষেপ নিয়েছিল। এতে সেখানে অতিরিক্ত শ্রমিক প্রেরণের উদ্যোগ নেয়ায় এই বন্যা প্রবণ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ধান কাটাকে ঝামেলা মুক্ত করেছে।
ড. আলহাজ বলেন, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশব্যাপী অচলাবস্থার ফলে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে ফসল কাটার মৌসুমে এ অঞ্চলের কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিক সংকট শুরু হয়েছিল, তবে সরকার সেই সব অঞ্চলে শ্রমিক জোগান দেয়ায়, সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে সৃষ্ট সঙ্কট একেবারে শেষ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বোরো ধান কাটতে গত বছরের তুলনায় ভাল ফলন এবং অনুকূল আবহাওয়া আমাদের উৎপাদনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে আশাবাদী করে তুলেছে।
ডিএইর একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সাতটি হাওর জেলা-কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৪ লাখ ৭৪ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমি থেকে ইতোমধ্যে ৯৮ শতাংশেরও বেশি বোরো ধান উত্তেলন করা হয়েছে। বাকি ৩১ শতাংশ উঁচু জমিতে ফসল কাটার প্রক্রিয়া মধ্য জুনের পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
ডিএই এ বছর সারা দেশে ৪৮ দশমিক ৬৬ লাখ হেক্টর জমি থেকে ২ দশমিক ৪ কোটি টন বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল থেকে হাওর অঞ্চলে ৫০ হাজার শ্রমিককে তাৎক্ষণিকভাবে এনে একত্রিত করা এবং তাদেরকে ধান কাটতে কৃষি জমিতে পাঠানোর মতো যথাযথ শ্রম ব্যবস্থাপনার ফলে সহজ এবং ঝুঁকি মুক্ত উপায়ে ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বোরো থেকেই দেশের বার্ষিক ধানের ৫৫ শতাংশ অর্জিত হয়। হাওর অঞ্চলের কৃষকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়িয়ে ফসলের আবাদ করেছেন বলেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার আশা করছি।
সূত্র জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদের এবছর ভর্তুকি হিসাবে ৮শ’রও বেশি হারভেস্টরস এবং ৪০০ রিপারস্ ও ট্রান্সপ্ল্যান্টার কেনার জন্য ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এর মধ্যে ১৮০টি নতুন হারভেস্টর এবং ১৩৭ টি নতুন রিপার হাওর অঞ্চলে কৃষকদের দেয়া হয়েছে ।
একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টর এক ঘণ্টার মধ্যে ১ দশমিক ২ একর জমি থেকে ধান কাটতে পারে এবং একই সময়ে একটি রিপার শূন্য দশমিক ৪ একর জমিতে ফসল কাটতে সক্ষম।
সারাদেশে সার্বিকভাবে ফসল কাটার কার্যকারিতা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. এম শাজাহান কবির বলেন, ‘গত বছরের নির্ধারিত হেক্টর প্রতি ফলন লক্ষ্যমাত্রার ৪ দশমিক ২ টনের সাথে তুলনা করলে এবছর ৪ দশমিক ৩ টন অর্জনযোগ্য, তাই আমরা অবশ্যই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
মূলত, নিম্ন-হাওর অঞ্চলে বোরো ফসল উত্তেলানের সময় এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ এবং মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বিরূপ আবহাওয়ার পরিস্থিতি বিরাজ করে বলে উৎপাদন ব্যহত হয়। এই বিজ্ঞানী বলেন, হাওর অববাহিকায় আমরা ফসল তোলা শেষ করেছি সুতরাং, সমতল জমির বাকি অংশের ফসল তোলার ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি নেই।
হাওর অঞ্চলে বোরো ফসলের উপর আবহাওয়ার সতর্কতার প্রভাব সম্পর্কে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কতা কেন্দ্রের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার অঞ্চলে ২২০ মি.মি থেকে ৩২০ মি.মি পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সঙ্গে দেশে তীব্র বন্যার সতর্কতা ছিল, তবে পূর্বাভাসের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত কৃষকদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তারা এ অঞ্চলে ঝামেলামুক্ত ভাবেই ফসলের উত্তোলন শেষ করতে পেরেছেন।