এনকে বার্তা ডেস্ক::
চীনের একদল গবেষক নভেল করোনাভাইরাসের একটি কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারের দাবি করেছেন। এই ওষুধটি করোনাভাইরাস মহামারি থামাতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করছেন তারা। মঙ্গলবার ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশটির বিখ্যাত পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ওষুধটি তৈরি করার পর ইতোমধ্যে পরীক্ষাও চালিয়েছেন। গবেষকরা বলেছেন, এই ওষুধটি শুধুমাত্র সংক্রমিত রোগীদের সুস্থ হওয়ার সময়ই কমিয়ে আনে না, বরং কম সময়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থাও গড়ে তোলে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে উৎপত্তি হওয়ার পর করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাসের চিকিৎসা এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কারর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির বেইজিং অ্যাডভান্সড ইনোভেশন সেন্টার ফর জিনোমিক্সের পরিচালক সানি সাই বলেছেন, প্রাণীর দেহে পরীক্ষার পর্যায়ে ওষুধটি সফল হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সংক্রমিত ইঁদুরের শরীরে নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করেছিলাম। এর পাঁচদিন পর দেখা যায় ইঁদুরটির শরীরে ভাইরাস লোড আড়াই হাজার ফ্যাক্টরে কমে এসেছে। এর অর্থ হলো এই ওষুধটির সফলতার সম্ভাবনা রয়েছে।
গবেষকরা করোনা সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা ৬০ জনের শরীর থেকে অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করেন। মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে তৈরি হওয়া নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে ওষুধটি তৈরি করেন সাই এবং তার দল।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সেলে রোববার চীনা গবেষকদের এই গবেষণা প্রকাশিত হয়। এতে তারা বলেন, নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি ব্যবহারের ফলে রোগটির সম্ভাব্য নিরাময় এবং পুনরুদ্ধারের সময় কমিয়ে আসে।
সাই বলেন, আশার ব্যাপার হলো এই নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডিগুলো একটি বিশেষায়িত ওষুধে পরিণত হতে পারে; যা মহামারী বন্ধ করবে।
চীনে ইতোমধ্যে আরও পাঁচটি ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে বলে গত সপ্তাহে দেশটির একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, করোনাভাইরাসের একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
বিজ্ঞানীরা করোনার চিকিৎসায় প্ল্যাজমা থেরাপির সম্ভাবনার দিকেও নজর দিচ্ছেন। এ চিকিৎসায় করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির শরীর থেকে প্ল্যাজমা সংগ্রহ করে রোগীকে দেয়া হয়। সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির শরীরে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। আর এই অ্যান্টিবডি রোগীকে দেয়া হলে করোনার বিরুদ্ধে তার শরীরে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
চীনে এখন পর্যন্ত ৭০০ জনের বেশি রোগীকে প্ল্যাজমা থেরাপি দেয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় খুব ভালো থেরাপিউটিক প্রভাব দেখা গেছে বলে চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে সাই বলেছেন, প্ল্যাজমার সরবরাহ খুবই সীমিত।
পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি ওষুধে ১৪টি নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি ব্যবহার করা হবে। ফলে এই ওষুধটির দ্রুত গণহারে উৎপাদনে যাওয়া যাবে বলে মনে করেন গবেষক সাই।
প্রতিরোধ এবং নিরাময়
ওষুধে অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে চিকিৎসাপদ্ধতি নতুন নয়। এইচআইভি, ইবোলা এবং মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের (মার্স) মতো বেশ কিছু ভা্ইরাসের চিকিৎসায় এর সফলতা রয়েছে।
সাই বলেন, চীনে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এবং অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার আগেই তার গবেষক দল ওষুধটি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ইবোলার ওষুধ রেমডেসিভির প্রয়োগে আশাব্যাঞ্জক ফল মিলেছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা যায়, রেমডেসিভির প্রয়োগে রোগীরা অন্য ওষুধের তুলনায় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। অন্যান্য ওষুধে রোগীর সুস্থ হতে ১৪ দিন সময় লাগলেও রেমডেসিভির মাত্র ১১ দিনে রোগীকে সুস্থ করে তোলে। তবে রোগীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে তেমন উল্লেখেযোগ্য কোনও ভূমিকা রাখতে পারেনি রেমডেসিভির।
তবে চীনা গবেষকদের নতুন ওষুধটি আরও কম সময়ে রোগীদের সুরক্ষা দিতে পারবে। গবেষকরা বলেছেন, ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগেই যদি ইঁদুরের শরীরে নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করা যায় তাহলে ইঁদুর সংক্রমণমুক্ত থাকে এবং কোনও ভাইরাস শনাক্ত হয় না।
গবেষক সাই বলেন, এই ওষুধের মাধ্যমে মেডিক্যাল কর্মীরা কয়েক সপ্তাহের জন্য সাময়িক সুরক্ষিত থাকবেন। তবে এই সুরক্ষিত রাখার বিষয়টিকে কয়েকমাস করার আশা করছেন তারা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শতাধিক ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। ভ্যাকসিন তৈরির চাহিদা বেশি হওয়ায় নতুন ওষুধটি দ্রুত এবং অধিক কার্যকরী উপায়ে করোনাভাইরাস ঠেকাতে সক্ষম হবে বলে আশা করছেন সাই।
তিনি বলেন, এমনকি ভ্যাকসিন না এলেও আমরা কার্যকরী এই ওষুধ দিয়ে মহামারি থামাতে সক্ষম হবো।
সূত্র: এএফপি।