দেশের প্রতিটি ঘর আলোকিত করেছি, কোন মানুষ গৃহহারা থাকবে না। দেশের মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করারই আমার একমাত্র লক্ষ্য। দেশের মানুষের মুখে যখন হাসি ফুটে তখন আমার আনন্দ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের সম্পদ কাজে লাগিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা কক্সবাজার সৈকতে আয়োজিত ‘উন্নয়নের নতুন জোয়ার বদলে যাওয়া কক্সবাজার’- শীর্ষক অনুষ্ঠানে ভার্সোয়াল কনফারেন্স প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক নগরি গড়ে তোলতে কক্সবাজারকে ঘিরে উন্নযনের কর্মযজ্ঞ চলছে। সারা দেশের সাথে কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে সড়কের পাশাপাশি বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু করেছি। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ করে খেলার জগতে কক্সবাজারকে অর্ন্তভূক্ত করেছি। হকিসহ অন্যান্য খেলার মাঠ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, একটা সময় মহেশখালীর মানুষ শুধু মাছ ধরা আর লবন চাষ ছাড়া কিছুই করতো না। তার সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ১৯৯১ সালে বিধ্বস্ত মহেশখালী অঞ্চলকে পরিবর্তন করা হচ্ছে। চাষিরা যেন আধুনিক পদ্ধতিতে যেন লবন চাষ করতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে আশ্রয় হারা মানুষের জন্য খুরুশকুলে আমরা আশ্রয় কেন্দ্র করে দিয়েছি। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নযনের পাশাপাশি আধুনিক শুটকি পল্লী করা হচ্ছে। টেকনাফের সাবরাংএ বিশেষ অর্থনীতি অঞ্চল করা হচ্ছ।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সম্ভবনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশাল সমুদ্র সৈকত আমাদের সম্পদ। বিশ্বের কোন দেশে এমন দীর্ঘতম সৈকত নেই। আমরা এ সম্পদ কাজে লাগাতে কাজ করছি। পর্যটকদের জন্য সাবরাং এক্সক্লুসিভ জোন করা হচ্ছে। বিদেশী পর্যটকদের জন্য পৃথক পর্যটন স্পট গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব নির্মাণ কাজ শেষ হলে কক্সবাজার হবে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য যোগাযোগের সেতু বন্ধন। এখান থেকে রিপুয়েলিং করতে নামবে বিদেশীরা। সোনাদিয়া চমৎকার একটা দ্বীপ। সেখানেও পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
কক্সবাজার থেকে মিরসরাই পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারের কোন অংশ উন্নয়ন থেকে বাদ পড়বে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যদার এ অর্জন সফল হতো না যদি আমার উপর জনগণের আস্থা না থাকতো। যদি না আমি আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেতাম।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট সবাইকে হারিয়ে ছিলাম। শুধু আমরা দুইবোন বেঁচে ছিলাম। বিদেশের মাটিতে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে ঘরছাড়া, বাড়ি ছাড়া পরিবার পরিজন ছাড়া। মা, বাবা, ভাই হারিয়ে শোক বুকে নিয়ে দিন কাটাতে হয়েছে। এত শোক ব্যাথার মাঝেও বাবার স্বপ্ন যেন বৃথা না যায় সে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম দুইবোন। তখন কোথা থেকে শক্তি পেয়েছি জানি না।
বিভিন্ন সময় কক্সবাজার এসেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারাগার থেকে যখনই বাবা ছাড়া পেতেন তখনই কক্সবাজার বেড়াতে যেতেন। এত দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর কোথাও নেই। বদরখালীতে চিংড়ি চাষী লবন চাষীদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেছি।
সমুদ্র সীমা বিজয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বিশাল সমুদ্র সীমার অধিকার রক্ষায় ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি আইন করেছিলেন। সমুদ্রে আমাদের যে অধিকার তা নিশ্চিত করে গিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সে আইন বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ নেয়নি পরবর্তী সরকার। আমরা প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসে সমুদ্র সীমার অধিকার রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছি। দ্বিতীয় দফায় সমুদ্র সীমার অধিকার অর্জন করি।
গ্রামে যেন বিদ্যুৎ পৌঁছে তার জন্য বঙ্গবন্ধু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজ করতে গিয়ে বারবার বাঁধা এসেছে, সব বাঁধা অতিক্রম করে ৯৬ সালে ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করি। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আশ্রয়ন কেন্দ্র তৈরি করি।
এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছি বলে সুফল পাচ্ছি আমরা। আজকে উন্নত থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে মর্যদা পেয়েছি। এভাবেই একদিন জাতির পিতার স্বপ্ন পুরণ হবে।
আমাদের এ অগ্রযাত্রা যেন আমরা ধরে রাখতে পারি সে জন্য পরিকল্পনা করেছি। বাংলাদেশকে আর পেছনে টানতে পারবে না। আমাদের বিশ্বাস ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ।
‘উন্নয়নের নতুন জোয়ার, বদলে যাওয়া কক্সবাজার’ জাতীয় পর্যায়ের এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে সাজানো হয়েছে অপরূপ ভাবে। ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, স্যাটেলাইট, টানেল, সাবমেরিনসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্পের।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ উদযাপনে প্রথম পর্বটি সকালে কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্ট প্রান্তে হবার কথা থাকলেও জোয়ারের পানিতে অনুষ্ঠান স্থল তলিয়ে থাকায় সেখানে করা যায়নি। সকালের অনুষ্ঠানটি কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সেরে নেয়া হয়েছে। এসময় মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব, সচিব, উর্ধতন কর্মকর্তা ও বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, সিডিউল মতো-জাতীয় সংগীত পরিবেশন, স্বাগত বক্তব্য, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বিষয়ে ডকুড্রামা প্রদর্শন করা হয়। এরপর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা’র কবিতা আবৃত্তি, স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় দেশাত্মবোধক গান ও পল্লী সংগীত অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে স্কুল শিক্ষার্থীদের সংলাপ, স্কুল শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পর্ব হয়েছে। বিকেলে স্কুল পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ এবং স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পর্ব রয়েছে।
ডিসি জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় ২য় পর্বের অনুষ্ঠান বিচের লাবনী পয়েন্টে শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন। ‘জোরসে চলো বাংলাদেশ” শীর্ষক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস’র সঞ্চালনায় উন্নয়নের উপর বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি এবং নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন প্রকল্পে উপকারভোগীরা।
এরপর “একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার” গানের সাথে দলীয় নৃত্য পরিবেশন, আতশবাজি ফোটানো এবং ‘ফুয়াদ এন্ড ফ্রেন্ডস’ ও ‘চিরকুট’ এর সংগীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জমকালো আয়োজনের পরিসমাপ্তি ঘটে।