অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

গাছের ডাল কাঁটতে গিয়ে পড়ে আহত, ৩য় পক্ষের সার্থে আদালতে মিথ্যা মামলা, হয়রানির শিকার ৭ নিরিহ ব্যাক্তি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪
গাছের ডাল কাঁটতে গিয়ে পড়ে আহত, ৩য় পক্ষের সার্থে আদালতে মিথ্যা মামলা, হয়রানির শিকার ৭ নিরিহ ব্যাক্তি

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

 

নোয়াখালীর সদর উপজেলায় গাছের ডাল কাটতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে মাথা পাটা ও পা ভাঙ্গার ঘটনাকে ৩য় পক্ষের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে অন্তত ২৮ কি:মি: দুরত্বে অন্য ইউনিয়নের জমিনে কাজ করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়েছে দাবি করে আদালতে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে মামলা দায়ের করে একই পরিবারের ৭জনকে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।

আদালতে বাদী পক্ষের দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জানুয়ারী ২০২৪ ইং তারিখে সকাল পৌনে ১০ ঘটিকার দিকে ৩জন লোক নিয়ে জমিতে চাষাবাদের জন্য গেলে সাড়ে ১০ঘটিকার দিকে তাদের কাজে বাঁধা দেয় প্রতিপক্ষের লোকজন। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের হামলায় ঘটনাস্থলে দেশীয় অস্ত্র ধারালো ছেনি দিয়ে ফিরোজ আলম নামের একজন কাজের লোকের মাথায় কুপিয়ে ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে। আহত ফিরোজ আলমকে মোটর সাইকেল যোগে দ্রুত নোয়াখালী ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন মামলার বাদী মো: নুরুল আমি প্র: সাজু।

 

দায়ের কৃত মামলার আলোকে সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, মামলার ১নং সাক্ষী আহত ফিরোজ আলম গত ২১ জানুয়ারী সকালে সদর উপজেলার ২নং দাদপুর ইউনিয়নস্থ নিজ বাড়ির সামনে গাছের ডাল কাঁটতে গিয়ে গাছ থেকে রাস্তার গাইড ওয়ালের উপর পড়ে গিয়ে তার মাথা পেটে যায় এবং ডান পায়ের হাড় ভেঙ্গে গিয়ে ঘটনাস্থলেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে ফিরোজ আলম। সেখান থেকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে গরীব ও অসহায় আহত ফিরোজ আলমের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় দাদপুর বাজারে ব্যাবসাীদের কাছ থেকে চাঁদা উঠিয়ে তার পরিবারকে সহযোগিতা করেন এলাকা বাসি। স্থানীয় দাদপুর বাজারে গেলে একাধিক ব্যাবসায়ী, সাধারণ লোকজন, ইউপি সদস্য এবং শেষে ২নং দাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান শিপন আহত ফিরোজ আলমের গাছ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, যে গত ২১ জানুয়ারী সকালে গাছ থেকে পড়ে সে আহত হওয়ার পর এলাকার সবাই তার চিকিৎসার জন্য টাকা তোলেন। ওই সময় আমি নিজেও তার চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়েছি। আর এ কথাটা আমি নয় শুধু অত্র এলাকার সকলে জানে যে ফিরোজ গাছ থেকে পড়ে আহত হয়েছে।

 

অপর দিকে ঘটনার বিষয়ে আলোকপাত করতে সাংবাদিকরা মামলায় উল্লেখিত ঘটনাস্থলে গেলে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। জানা যায়, উল্লেখিত স্থান ২০নং আন্ডার চর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের আন্ডার চর মৌজায় একটি জমি নিয়ে মো: নুরুল আমিন প্র: সাজুর সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে মামলার আসামী পক্ষের লোকজনের সাথে, সেই বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মিথ্যা গল্প সাজিয়ে এ মামলা দায়ের করে নিরিহ লোকদের হয়রানি করছে মো: নুরুল আমিন প্র: সাজু। সেখানকার আশপাশের একাধিক লোকজন জানান, বিগত ৬মাসেও অত্র এলাকায় এধরণের কোন হামলা কিন্বা মারামারির ঘটনা ঘটেনি। নুরুল আমিন প্র: সাজু সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে দাদপুরে গাছ থেকে পড়ে আহত হওয়া ব্যাক্তিকে সাক্ষী বানিয়ে মিথ্যা মামলা করে নিরিহ লোকজনকে হয়রানি করতেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ২০নং আন্ডার চর ইউনিয়নে অবস্থিত পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পের এসআই মহিন উদ্দিন এর প্রত্যক্ষ মদদে অন্তত ২৮ কি:মি: দুরত্বের ঘটনাকে এখানে দেখিয়ে এ মামলা করেছে নুরুল আমিন। আমরা এসআই মহিন উদ্দিন ও মিথ্যা মামলার বাদী নুরুল আমিনের কঠিন শাস্তি চাই এবং অনতিবিলম্বে গ্রেফতার হওয়া নিরিহ লোকদের মুক্তি চাই।

 

২০নং আন্ডার চর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের আন্ডার চর মৌজায় একটি জমি নিয়ে হামলা ও আহতের বিষয়ে জানতে চাইলে, মুঠাফোনে ২০নং আন্ডার চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানান, গত ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া সংসদ নির্বাচনের কিছু দিন পূর্বে আমার কাছে জমির বিষয়ে নালিশ নিয়ে আসেন মো: নুরুল আমিন। তখন আমি নির্বাচন শেষে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে একটা সমাধান দেওয়ার কথা বলি, কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী সময়ে অর্ধবধি আমার কাছে আসেনি নুরুল আমিন। গত ২১ জানুয়ারী বিরোধকৃত জমিনে মারামারি বা আহতের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে চেয়ারম্যান বলেন, আমার ইউনিয়ে এধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। যদি কেউ এরকম ঘটনা উল্লেখ করে কোন মামলা করে থাকেন, তাহলো সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। শুধু শুধু নিরিহ লোকদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যে একটি মিথ্যা নাটক সাজিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করতেছে। অপর এক প্রশ্নে জবাবে চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানান ঘটনাস্থল থেকে একজন আহত রোগীকে মাইজদী সদর হসপিটালে নিতে হলে সময় লাগবে অন্তত ৪০মিনিট থেকে ১ঘন্টা, সেখানে কিভাবে তারা ১৫মিনিটের মধ্যে ২৮ কি: মিটারের পথ শেষ করে এখান থেকে আহত ব্যাক্তিকে হসপিটালে পৌছান। এটাতো হেলিকপ্টারেও সম্ভব নয়।

 

আদালতে দায়ের করা মামলা মিথ্যা বলে অভিযোগ উঠেছে বলে জানতে চাইলে উক্ত মামলার বাদী নুরুল আমিন ও ১নং সাক্ষী আহত ফিরোজ আলম অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে জানান, মামলায় উল্লেখিত স্থানেই ঘটনা ঘটেছে এবং আসামীদের ধারলো ছেনির কোপে আহত ও রডের পিটুনিতে পা ভাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। তাদের এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বাঁচার জন্য এরকম বলতেছে তারা।

 

উক্ত মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে ও মামলাটির সঠিক তদন্ত এবং মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে ইতোমধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করেন, ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও মামলার ৪নং আসামী মো: ইউছুফ।

 

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ২০নং আন্ডার চর ইউনিয়নে অবস্থিত পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পের এসআই মহিন উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, আদালতের নির্দেশে থানায় মামলা হয়েছে আর আমি সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছি। বর্তমানে মামলাটি তদন্তধীন রয়েছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মীর জাহিদুল হক রনি জানান, বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। বর্তমানে মালমাটি তদন্তাধীন আছে। সরজমিন তদন্ত শেষে মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদনে ঘটনার সত্য মিথ্যা যাচাই করা হবে।

 

পুলিশ সুপার বরাবরে করা আবেদনের তদন্তের দায়িত্বে থাকা নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো: মোর্তাহিন বিল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদলতের নির্দেশে মামলা নেওয়া হয়েছে। মামলায় উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে। আমরা তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রকৃত ঘটনার আলোকে ব্যাবস্থা গ্রহণ করব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে মামলা মিথ্যা প্রমানিত হলে, আমরা মিথ্যা মামলা দায়ের কারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নিবো।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০