চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তাওহীদা ইসলাম ইলমা (০৯) কে তেঁতুল খাওয়ানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ শেষে মুখে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যাকান্ডের মামলার রায়ে মোহাম্মদ আলী প্রকাশ বাপ্পী (২৬) নামে এক আসামীকে মৃত্যুদন্ডাদেশ ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দিয়েছে আদালত। মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত আসামী বাপ্পি উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান এর নাতি ও মো: জাকারিয়ার ছেলে। একই মামলার অপর আসামী একই গ্রামের আবুল কালাম এর ছেলে মো: মিজান এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালত। মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে এগারটায় কুমিল্লার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন এ রায় প্রদান করেন।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ বিকালে উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তাওহীদা ইসলাম ইলমা (০৯) কে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর কাঁথা মুড়িয়ে লাশ বাড়ীর পাশের খালে ফেলে দেয় অভিযুক্ত বাপ্পি। মাইকিং করা সহ অনেক খোঁজাখুঁজির পরও ইলমাকে না পেয়ে পরিবারের লোকজন বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে। পরদিন প্রতিবেশী মাসুকা বেগম নামে এক এক নারী কাঁথা মোড়ানো ইলমার লাশ খালে পড়ে থাকতে দেখে শোর-চিৎকার করিলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে লাশটি উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী একটি বাড়ীর উঠানে নিয়ে আসে। পরে সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুরতহাল শেষে নিহতের লাশ উদ্বার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা সন্দেহভাজন মোহাম্মদ আলী বাপ্পি সহ দুইজনকে আটক করে থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করে। এ সময় তারা অভিযুক্ত বাপ্পির বাড়ীঘরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে ১৬ মার্চ রাতে নিহতের পিতা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করিলে আদালতের মাধ্যমে আটককৃত আসামীদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দীতে আসামী বাপ্পি ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে ইলমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চৌদ্দগ্রাম থানার তৎকালীল উপ-পরিদর্শক ইকবাল মনির প্রধান আসামী বাপ্পি ও অপর আসামী মিজানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৯ সালে ২ জুন বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ২০২০ সালের ৮ মার্চ আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে রাষ্ট্র পক্ষে ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে আসামী মোহাম্মদ আলী প্রকাশ বাপ্পির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী পর্যালোচনাক্রমে দন্ডপ্রাপ্ত আসামী মোহাম্মদ আলী বাপ্পির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) তাকে মৃত্যুদন্ডাদেশ ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং অপর আসামী মো: মিজান এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত। রায় ঘোষণাকালে আসামীদ্বয় আদালত কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। রায়ে আরও উল্লেখ করেন যে, মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত আসামী মোহাম্মদ আলী বাপ্পিকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গলায় ফাঁসির রুজু দ্বারা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাঁর মৃত্যু কার্যকর করার নির্দেশ দেন এবং মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত আসামী রায় প্রচারের তারিখ হতে ৭ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে পারিবেন।
মামলার বাদী ও নিহত স্কুল ছাত্রী ইলমার পিতা দেলোয়ার হোসেন সহ পরিবারের লোকজন জানান, ‘বিজ্ঞ আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আশা করছি রায়টি উচ্চ আদালতও বহাল রাখবে এবং দ্রুত কার্যকর করবে।’
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী স্পেশাল পিপি এডভোকেট প্রদীপ কুমার দত্ত ও এপিপি এডভোকেট মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা আশা করছি উচ্চ আদালত উক্ত রায় বহাল রেখে দ্রুত কার্যকর করবেন।’
এ ব্যাপারে আসামি পক্ষের কৌশলী এডভোকেট মো: আতিকুল ইসলাম (আতিক) বলেন, ‘এ রায়ে আসামীপক্ষ অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ। রায়ের কপি হাতে পেলে শীঘ্রই উচ্চ আদালতে আপীল করবো। আমি আশাবাদী উচ্চ আদালত আসামী মোহাম্মদ আলী বাপ্পীকে খালাস প্রদান করিবে।