ঢাকা ১০:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫

ইউক্রেনে রুটি কিনতে বেরিয়ে বাবার মৃত্যু, থামছেই না মেয়ের কান্না

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৩:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২ ৭২৬২ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দীর্ঘ সময় থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ চলছে। রাশিয়ার আগ্রাসনে ইতিমধ্যে বিধ্বস্ত ইউক্রেন।দেশজুড়ে এখন শুধু ধ্বংসের দৃশ, আর ভিটেমাটি হারানোর হাহাকার। ইউক্রেনীয় সৈন্যরা, রুশ আক্রমণ থেকে তাদের অসামরিক নাগরিকদের যতটা সম্ভব রক্ষা করার চেষ্টা করছে, যাদের সেই সৌভাগ্য হয়নি, তারা রাস্তাতেই মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। সম্প্রতি ইউক্রেনে এক বাবা পরিবারের সদস্যদের জন্য রুটি কিনতে বেরিয়েছিলেন বাসা থেকে। কিন্তু ফিরলেন লাশ হয়ে। বাড়ির সামনেই একটি গোলা এসে পড়লে তাতে নিহত হন ওই বাবা। এদিকে বাবার এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মেয়ে। বাবার মরদেহের পাশে আহাজারি করেন তিনি। মেয়ের আহাজারির সেই ছবি দেখে যেন কাঁদছে পুরো বিশ্ব।

মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে রুশ সীমান্তবর্তী পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ শহরে। গত সোমবার (১৮ এপ্রিল) শহরে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে গোলার আঘাতে ওই ব্যক্তি নিহত হন। শুক্রবার (২২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবারের সদস্যদের জন্য রুটি কিনতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে গোলার আঘাতে প্রাণ হারানো ওই বাবার নাম ভিক্টর গুবারেভ। পরে মেয়ে ইয়ানা বাচেক বাবাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। সাহায্যের জন্য উদ্ধার কর্মীদের ডেকেও কোনো লাভ হয়নি।

ভিক্টর গুবারেভের ফ্ল্যাটের পাশেই আরেকটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন মেয়ে ইয়ানা বাচেক। পেশায় ইংরেজির শিক্ষিকা ইয়ানা জানান, সোমবার তিনি নিজের বাসায় অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেলেন। এরই একপর্যায়ে গোলাবর্ষণ শুরু হয়। তার ভাষায়, ‘বিস্ফোরণের কথা আমার এখনও মনে আছে। আমি তখন মাত্র কেনাকাটা করে বাসায় ফিরে এসেছি এবং সঙ্গে সঙ্গেই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ, প্রচন্ড শব্দ।’

সঙ্গে সঙ্গেই তার মা লিউবভ আতঙ্কিত গলায় জানান, তার বাবা রুটি কিনতে বাইরে গিয়েছিলেন এবং এখনও ফিরে আসেননি। কিন্তু ইয়ানা বাচেককে তখনই বাইরে বের হতে নিষেধ করেনসঙ্গী ইয়েভগেনি। কারণ তখনও বাইরে গোলাবর্ষণ চলছিল।ইয়ানা বলেন, আমি (ঘর থেকেই) বাবাকে ডাকতে শুরু করলাম কিন্তু কোনো উত্তর নেই। তবে এর কয়েক মিনিট পরই অনেকটা জোর করেই বাইরে যান মেয়ে ইয়ানা। কিন্তু অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে বাবার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে সেসময় সেখানে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছায়। এরই একপর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় ধরা পড়ে ইয়ানার এই আহাজারির ছবি।

রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছে বুচা শহরে খুঁজে পাওয়া গণকবর বা বন্দরনগরী মারিউপোলে চালানো রুশ ধ্বংসযজ্ঞ বা খারকিভের মতো শহরগুলোতে নির্বিচারে গোলাবর্ষণকেই মূলত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে অভিহিত করে আসছে ক্রেমলিন।রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনকে ‘নাৎসীবাদ মুক্ত’ করাই তাদের এই সামরিক অভিযানের লক্ষ্য। তবে কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এটিকে যুদ্ধের মিথ্যা অজুহাত হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

ইউক্রেনে রুটি কিনতে বেরিয়ে বাবার মৃত্যু, থামছেই না মেয়ের কান্না

আপডেট সময় : ০৪:৪৩:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২

দীর্ঘ সময় থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ চলছে। রাশিয়ার আগ্রাসনে ইতিমধ্যে বিধ্বস্ত ইউক্রেন।দেশজুড়ে এখন শুধু ধ্বংসের দৃশ, আর ভিটেমাটি হারানোর হাহাকার। ইউক্রেনীয় সৈন্যরা, রুশ আক্রমণ থেকে তাদের অসামরিক নাগরিকদের যতটা সম্ভব রক্ষা করার চেষ্টা করছে, যাদের সেই সৌভাগ্য হয়নি, তারা রাস্তাতেই মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। সম্প্রতি ইউক্রেনে এক বাবা পরিবারের সদস্যদের জন্য রুটি কিনতে বেরিয়েছিলেন বাসা থেকে। কিন্তু ফিরলেন লাশ হয়ে। বাড়ির সামনেই একটি গোলা এসে পড়লে তাতে নিহত হন ওই বাবা। এদিকে বাবার এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মেয়ে। বাবার মরদেহের পাশে আহাজারি করেন তিনি। মেয়ের আহাজারির সেই ছবি দেখে যেন কাঁদছে পুরো বিশ্ব।

মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে রুশ সীমান্তবর্তী পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ শহরে। গত সোমবার (১৮ এপ্রিল) শহরে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে গোলার আঘাতে ওই ব্যক্তি নিহত হন। শুক্রবার (২২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবারের সদস্যদের জন্য রুটি কিনতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে গোলার আঘাতে প্রাণ হারানো ওই বাবার নাম ভিক্টর গুবারেভ। পরে মেয়ে ইয়ানা বাচেক বাবাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। সাহায্যের জন্য উদ্ধার কর্মীদের ডেকেও কোনো লাভ হয়নি।

ভিক্টর গুবারেভের ফ্ল্যাটের পাশেই আরেকটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন মেয়ে ইয়ানা বাচেক। পেশায় ইংরেজির শিক্ষিকা ইয়ানা জানান, সোমবার তিনি নিজের বাসায় অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেলেন। এরই একপর্যায়ে গোলাবর্ষণ শুরু হয়। তার ভাষায়, ‘বিস্ফোরণের কথা আমার এখনও মনে আছে। আমি তখন মাত্র কেনাকাটা করে বাসায় ফিরে এসেছি এবং সঙ্গে সঙ্গেই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ, প্রচন্ড শব্দ।’

সঙ্গে সঙ্গেই তার মা লিউবভ আতঙ্কিত গলায় জানান, তার বাবা রুটি কিনতে বাইরে গিয়েছিলেন এবং এখনও ফিরে আসেননি। কিন্তু ইয়ানা বাচেককে তখনই বাইরে বের হতে নিষেধ করেনসঙ্গী ইয়েভগেনি। কারণ তখনও বাইরে গোলাবর্ষণ চলছিল।ইয়ানা বলেন, আমি (ঘর থেকেই) বাবাকে ডাকতে শুরু করলাম কিন্তু কোনো উত্তর নেই। তবে এর কয়েক মিনিট পরই অনেকটা জোর করেই বাইরে যান মেয়ে ইয়ানা। কিন্তু অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে বাবার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে সেসময় সেখানে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছায়। এরই একপর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় ধরা পড়ে ইয়ানার এই আহাজারির ছবি।

রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছে বুচা শহরে খুঁজে পাওয়া গণকবর বা বন্দরনগরী মারিউপোলে চালানো রুশ ধ্বংসযজ্ঞ বা খারকিভের মতো শহরগুলোতে নির্বিচারে গোলাবর্ষণকেই মূলত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে অভিহিত করে আসছে ক্রেমলিন।রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনকে ‘নাৎসীবাদ মুক্ত’ করাই তাদের এই সামরিক অভিযানের লক্ষ্য। তবে কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এটিকে যুদ্ধের মিথ্যা অজুহাত হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে।