নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালী কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ভুইয়ার বাজারে কবিরহাট-দুধমুখা খাল দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কবিরহাট থেকে উত্তর দিকে কবিরহাট-বসুরহাট প্রধান সড়কের পাশ দিয়ে বেয়ে যাওয়া কবিরহাট-দুধমুখা নামক খালটি দীর্ঘদিন যাবত সংস্কার না হওয়ায় উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের দয়ারামদি মৌজায় অবস্থিত ভুইয়ারহাট বাজারের দক্ষিণ অংশ থেকে উত্তর অংশ পর্যন্ত খালটি প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। কিছু প্রভাবশালী মহল খাল ভরাট করে দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এছাড়াও খাল দখল করে গড়ে তুলেছে কয়েকটি ভবন। পুনরায় বাজারের উত্তর অংশে প্রভাহমান খাল বন্ধ করে চলছে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ।
জানতে চাইলে স্থানীয় মোঃ মোস্তফা বলেন, আমার ৫৮ বছর বয়স চলতেছে। তবে আমি আমার বুদ্ধি হয়ছে পর্যন্ত এটা খাল দেখতেছি। এটা নোয়াখালী খালের সাথে এক সাথ করা খাল।
স্থানীয় আরেক ব্যাক্তি মোঃ আবু ছাহিদ বলেন, আমার বাড়ি এই রাস্তাটির পাশেই। আমাদের জন্মের আগ থেকে আমাদের পূর্ব পুরুষদের আমল থেকেই এই খাল ছিলো। এখন এই বাজারে খালের অংশে মার্কেট করতেছে পুরাটাই খালের উপর। এর আগে আরেকটা ভিল্ডিং হয়েছিল, তখন আমরা চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে যখন যাই তখন ইএনও স্যার যখন জায়গাতে আসে। তখন কিছু টাকা দিয়ে এই খালের সংস্কার বন্ধ করে দিয়েছে। এটা আর সমাধান হয় নাই। কিছু দিন পূর্বে যখন বর্তমান মার্কেটটির কাজ করতেছে, আমরা বর্তমান চেয়ারম্যানয়ের কাছে অভিযোগ করছি। চেয়ারম্যান সরজমিনে আসেন। আসার পর বলছে সংশোধন করে দিবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সংশোধন হয়নি। এটা নোয়াখালী খালের সাথে সংযুক্ত একটি খাল।
মাইন উদ্দিন বাবুল নামের ভুইয়ার বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, এই খালটা আমার বুব্ধি হয়ছে পর্যন্ত দেখতেছি। আমার বয়স চলতেছে ৫৫ বছর। এই খালটা এই ভাবেই আছে। পানি নিস্কাসন হয় এ খাল দিয়ে। বাজারের ময়লা পালানোর কোন জায়গা না থাকায় বর্তমাানে বাজারের সব ময়লা পালানো হয় এই খালে। তাই পানি যাইতে অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় এলাকার কৃষকদের চাষাবাদ করা ধান নষ্ট হয়ে যায় পানি আাটকে থাকার কারণে। আবার কেউ কেউ খালের মধ্যে মাটি ভরাট করে দোকান ঘর তৈরী করে ভাড়া দিতেছে। আমরা খালের পক্ষে, কারণ বর্ষকাল আসতেছে, পানি নিস্কাসন হবে না। তিনি আরও জানান, এই খালের প্রস্ত ছিল অন্তত ২০ ফিট।
নতুন করে ভবন নির্মাণকারী মোঃ ইসমাইল বলেন, আমি দয়ারামদি মৌজার ৪২৯ নং দাগে বিএস জরিপে ব্যক্তি মালিকানা জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করতেছি। এখানে কোন খাল নাই। আমাদের পাশে রয়েছে রোর্ডস এন্ড হাইওয়ের জায়গা। এ্যাসিল্যান্ড অফিস থেকে এটাকে নয়ানজলি বলতো। এখান দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় এটা সত্য। আমরা ও পানি যাওয়ার পক্ষে। প্রশাসনের পক্ষে থেকে যদি ইউএনও মহোদয় যদি কাজটি করে দেন আমাদের জন্য আরো ভালো। কে কাকে অভিযোগ দিয়েছে আমরা জানিনা। তবে এবিষয়ে আমাদের সাথে সরাসরি কেহু আলোচনা করেনি। এখানে খাল বলতে কিছু নাই, এক পাশে রোর্ডস এন্ড হাইওয়ের, আরেক পাশে ব্যক্তি মালিকানা জায়গা রয়েছে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ, এ্যাসিল্যান্ড অফিসার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। উনারা বলছেন, যে যদি বিএস জরিফে বা বর্তমান জরিফে খাল না থাকে তাহলে এখানে কোন খাল নাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাটইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন শাহীন বলেন, আমাদের দুধমুখা কবিরহাট খাল আসলে আমার জন্ম লগ্ন থেকেই দেখতেছি এই খাল ভুঁয়ারহাট বাজার পাশ হয়ে দুধমুখার দিকে গিয়েছে। কৃষি জমিনে জমাটবাঁধা পানি প্রবাহিত হতো এই খাল দিয়ে। এছাড়াও আমার জন্মের পূর্বে এলাকার বাসিন্দা যাদের বয়স এখন ৬০/৭০/৮০ বছর আমি তাদের সাথে ও কথা বলছি, কথা বলার পরে তারা বলেছে তারাও তাদের জন্ম লগ্ন থেকে এই খাল দেখে আসছে। গত ১৫/২০ দিন আগে এটা আমার চোখে পড়ে। পরে আমি সরজমিনে গিয়ে দেখি বর্তমান যে প্রবাহ খাল এটা কোন মৃত খাল না। এটা জীবিত প্রবাহ খাল আর তার উপর তারা ভবন তৈরি করতেছে। দুইজন মালিকই তারা ঘর করার জন্য রেডি, বিষয় টা দেখার পর আমি দুইজন মালিকের সাথে কথা বলেছি। তারা বলতে চাচ্ছে যে, তারা তাদের নিজ মালিকানা জায়গায় ঘর করতেছে। আমি তাদেরকে প্রশ্ন করছি যদি আপনাদের নিজ মালিকানা জায়গা হয়। তাহলে খালের জায়গাটা কোথায়? উত্তরে ওনারা আমাকে বলেন যে, খালের জায়গা এখন যে খানে দোকান আছে ওটার উপর দিয়ে খালটা গেছে। আমি বলছি তাহলে খালের জায়গাটা খনন করে দেন। তার পরে আপনেরা আপনাদের ভিল্ডিং এর কাজ করেন, তাহলে তো কোন সমস্যা হয়না। আমি ইউএনও মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করেছি। ওনারা বিষয়টা তসিলদারের সাথে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টা জেনেছে। ইউএনও এবং এসিল্যান্ড মহোদয় দুইজনই সরোজমিনে আসার কথা ছিল। ব্যাস্ততার কারনে আসতে পারেনি। খালের উপর যে চলমান ভবন নির্মাণ কাজ করতেছে সে গুলি যেন বন্ধ রাখে সেটা ইউএনও মহোদয় নির্দেশ দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আতিকুল মামুন জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি জানানোর পর আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে খালটি সংস্কারের বিষয়ে জানিয়েছি এবং খালের উপর ভবন নির্মাণের কথাটিও বলেছি। তারা বিষয়টি দেখবে বলে জানিয়েছে আমাকে।
খাল দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী মুন্সি আমির ফয়সাল জানান, তিনি ঘটনাটি অবগত নন তবে এই প্রতিবেদকের তথ্যটি নোট করে সরজমিনে তার লোক পাঠিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে এবং খাল দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে থাকলে অতিদ্রুত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।