ঢাকা ০৬:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

নদী ভাঙনে বসত-ভিটি হারা প্রায় ৩হাজার পরিবার, অপরিকল্পিত খাল খননই যেন কাল হয়ে দাড়িয়েছে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:০০:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অগাস্ট ২০২১ ৬৪২৫ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

 

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ধানশালিক ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে ‘চর আলগী খালটি’ অপরিকল্পিতভাবে খননের অভিযোগ ওঠেছে। পাশ্ববর্তী নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে খালটি বর্তমানে প্রায় নদীতে পরিণত হয়েছে। আর তাতেই শুরু হয়েছে দু’পাশে ভাঙন। ভাটার সময় দু’পাশে থাকা বাড়ি-ঘর ভেঙে পড়ে খালে। ভাঙনের কবলে পড়ে গত এক বছরে বসত ভিটি হারিয়েছে অন্তত ৩হাজার পরিবার। ভেঙে গেছে ৭টি ব্রিজ-কালভার্ট, ফসলি জমি, দোকানপাঠ, মাছের ঘের, আম বাগান, নার্সারি ও কবরস্থান। এ বছরের বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের কবলে পড়ার আশংকায় রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ আরও প্রায় সহ¯্রাধিক পরিবার। এ যেন খাল কেটে কুমির আনার গল্প। অপরিকল্পিত খাল খনন ও বর্তমান অবস্থার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়দের দায়ি করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। যদিও দায় মেনে নিতে রাজি নন চেয়ারম্যান।

 

সুফিয়া খাতুন নামের ৭০ বছরের এক বৃদ্ধা প্রায় দেড় বছর আগে ধানশালিক ইউনিয়নের চরমন্ডলিয়া গ্রামের আলগী খালের দক্ষিণ পাশে এক একর জমির ওপর একটি আধাপাক ঘর নির্মাণ করেন। খাল থেকে যার দূরত্ব ছিল দুই’শত ফুট। জীবনের সঞ্চয় টুকু দিয়ে নির্মাণ করেছিলেন এ ঘরটি। দুই ছেলে, তিন মেয়ে, ছেলের স্ত্রী ও নাতি নাতনিদের নিয়ে তার সংসার। ঘর নির্মাণের এক মাসের মাথায় খালে ভেঙে পড়ে ঘরটি। এর পর তার একটু দূরে নির্মাণ করেন আরও একটি টিনের ঘর, তাও দুই মাসের মাথায় খালে বিলিন হয়ে যায়। বর্তমানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খালের উত্তর পাশে একটি ঘর করে কোন রকম ভাবে বসবাস করছেন তিনি।

 

শুধু সুফিয়া খাতুনই নয়, আলগী খালের ভাঙনের কবলে পড়ে বসত ভিটি হারিয়েছে প্রায় তিন হাজার পরিবার। অন্যের জায়গায় ঝুঁপড়ি ঘর করে কোনো ভাবে দিন পার করছেন এমন অনেকেই। এরই মধ্যে আবারও ভাঙতে ভাঙতে খাল চলে এসেছে অনেকের বসত ভিটির কাছে। প্রায় ৯কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনে বিলিন হয়েছে ছোট বড় অন্তত ৭টি ব্রিজ-কালভার্ট। পানিতে মিশে গেছে দোকান-পাট, ফসলি জমি, মাছের ঘের, নার্সারি ইত্যাদি। চলতি বর্ষায় প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ বসত ভিটি হারানোর আতংকে রয়েছে আরও হাজার পরিবার। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, স্লুইজ গেইট সম্পন্ন না করে ২০২০ সালে ৩০ ফুটের খাল ৯০ ফুট কাটে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে গত এক বছরে পাশ্ববর্তী মেঘনা ও বামনী নদীর জোয়ারের পানি ডুকে ৯০ ফুটের খাল এখন প্রায় সাড়ে ৩’শ ফুটে পরিণত হয়। এখন আলগী খালটি অনেকটাই নদীতে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৯ কিলোমিটার এ খাল এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয়দের জন্য। ব্রিজ না থাকায় নারী, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় খাল পার হচ্ছেন। নৌকা পার হতে গিয়ে বিভিন্ন সময় ঘটছে দূর্ঘটনা।

যে খাল খননের ফলে বর্ষায় পানি নিস্কাশন এবং শুকè মৌসুমে কৃষি কাজে সেচ ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল তা এখন উল্টো খাল কেটে কুমির ডেকে আনার দশা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে খননের পূর্বে আলগী ও বামনি খালের মুখে একটি বাঁধ দিয়েছিল তারা। গত বর্ষায় কিছুটা পানি জমাট বাঁধায় চেয়ারম্যান ও স্থানীয় লোকজন ওই বাঁধটি কেটে দেয়। যার ফলে বর্তমানে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটা তাদেরই সৃষ্টি। তবে আগামী বর্ষার আগেই স্লুইজ গেইট সম্পন্ন করে ভাঙন রোধের আশ্বাস দেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।

তবে দায় অস্বীকার করে ধানশালিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়াকুব নবী জানান, তখন পানি জমাট বাঁধায় স্থানীয়রা বাঁধটি কেটেছে। খালের ভাঙনের বিষয়ে সেতুমন্ত্রী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানে সম্মিলিতভাবে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

 

আলগী খালের ভাঙন রোধ করে বসত ভিটি ও ফসলি জমি রক্ষার পাশাপাশি বিগত এক বছরে যারা ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের তালিকা করে ক্ষতিপূরণের দাবী জানান ক্ষতিগ্রস্থরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
নিউজ ডেস্ক
ট্যাগস :

নদী ভাঙনে বসত-ভিটি হারা প্রায় ৩হাজার পরিবার, অপরিকল্পিত খাল খননই যেন কাল হয়ে দাড়িয়েছে

আপডেট সময় : ০৮:০০:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অগাস্ট ২০২১

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

 

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ধানশালিক ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে ‘চর আলগী খালটি’ অপরিকল্পিতভাবে খননের অভিযোগ ওঠেছে। পাশ্ববর্তী নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে খালটি বর্তমানে প্রায় নদীতে পরিণত হয়েছে। আর তাতেই শুরু হয়েছে দু’পাশে ভাঙন। ভাটার সময় দু’পাশে থাকা বাড়ি-ঘর ভেঙে পড়ে খালে। ভাঙনের কবলে পড়ে গত এক বছরে বসত ভিটি হারিয়েছে অন্তত ৩হাজার পরিবার। ভেঙে গেছে ৭টি ব্রিজ-কালভার্ট, ফসলি জমি, দোকানপাঠ, মাছের ঘের, আম বাগান, নার্সারি ও কবরস্থান। এ বছরের বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের কবলে পড়ার আশংকায় রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ আরও প্রায় সহ¯্রাধিক পরিবার। এ যেন খাল কেটে কুমির আনার গল্প। অপরিকল্পিত খাল খনন ও বর্তমান অবস্থার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়দের দায়ি করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। যদিও দায় মেনে নিতে রাজি নন চেয়ারম্যান।

 

সুফিয়া খাতুন নামের ৭০ বছরের এক বৃদ্ধা প্রায় দেড় বছর আগে ধানশালিক ইউনিয়নের চরমন্ডলিয়া গ্রামের আলগী খালের দক্ষিণ পাশে এক একর জমির ওপর একটি আধাপাক ঘর নির্মাণ করেন। খাল থেকে যার দূরত্ব ছিল দুই’শত ফুট। জীবনের সঞ্চয় টুকু দিয়ে নির্মাণ করেছিলেন এ ঘরটি। দুই ছেলে, তিন মেয়ে, ছেলের স্ত্রী ও নাতি নাতনিদের নিয়ে তার সংসার। ঘর নির্মাণের এক মাসের মাথায় খালে ভেঙে পড়ে ঘরটি। এর পর তার একটু দূরে নির্মাণ করেন আরও একটি টিনের ঘর, তাও দুই মাসের মাথায় খালে বিলিন হয়ে যায়। বর্তমানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খালের উত্তর পাশে একটি ঘর করে কোন রকম ভাবে বসবাস করছেন তিনি।

 

শুধু সুফিয়া খাতুনই নয়, আলগী খালের ভাঙনের কবলে পড়ে বসত ভিটি হারিয়েছে প্রায় তিন হাজার পরিবার। অন্যের জায়গায় ঝুঁপড়ি ঘর করে কোনো ভাবে দিন পার করছেন এমন অনেকেই। এরই মধ্যে আবারও ভাঙতে ভাঙতে খাল চলে এসেছে অনেকের বসত ভিটির কাছে। প্রায় ৯কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনে বিলিন হয়েছে ছোট বড় অন্তত ৭টি ব্রিজ-কালভার্ট। পানিতে মিশে গেছে দোকান-পাট, ফসলি জমি, মাছের ঘের, নার্সারি ইত্যাদি। চলতি বর্ষায় প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ বসত ভিটি হারানোর আতংকে রয়েছে আরও হাজার পরিবার। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, স্লুইজ গেইট সম্পন্ন না করে ২০২০ সালে ৩০ ফুটের খাল ৯০ ফুট কাটে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে গত এক বছরে পাশ্ববর্তী মেঘনা ও বামনী নদীর জোয়ারের পানি ডুকে ৯০ ফুটের খাল এখন প্রায় সাড়ে ৩’শ ফুটে পরিণত হয়। এখন আলগী খালটি অনেকটাই নদীতে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৯ কিলোমিটার এ খাল এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয়দের জন্য। ব্রিজ না থাকায় নারী, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় খাল পার হচ্ছেন। নৌকা পার হতে গিয়ে বিভিন্ন সময় ঘটছে দূর্ঘটনা।

যে খাল খননের ফলে বর্ষায় পানি নিস্কাশন এবং শুকè মৌসুমে কৃষি কাজে সেচ ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল তা এখন উল্টো খাল কেটে কুমির ডেকে আনার দশা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে খননের পূর্বে আলগী ও বামনি খালের মুখে একটি বাঁধ দিয়েছিল তারা। গত বর্ষায় কিছুটা পানি জমাট বাঁধায় চেয়ারম্যান ও স্থানীয় লোকজন ওই বাঁধটি কেটে দেয়। যার ফলে বর্তমানে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটা তাদেরই সৃষ্টি। তবে আগামী বর্ষার আগেই স্লুইজ গেইট সম্পন্ন করে ভাঙন রোধের আশ্বাস দেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।

তবে দায় অস্বীকার করে ধানশালিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়াকুব নবী জানান, তখন পানি জমাট বাঁধায় স্থানীয়রা বাঁধটি কেটেছে। খালের ভাঙনের বিষয়ে সেতুমন্ত্রী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানে সম্মিলিতভাবে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

 

আলগী খালের ভাঙন রোধ করে বসত ভিটি ও ফসলি জমি রক্ষার পাশাপাশি বিগত এক বছরে যারা ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের তালিকা করে ক্ষতিপূরণের দাবী জানান ক্ষতিগ্রস্থরা।